হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ: প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে পুলিশ
Published: 30th, June 2025 GMT
রাজধানীর মগবাজারের আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে ওই রাতে বাইরে গিয়েছিলেন প্রবাসী মনির হোসেন। এর আগে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোন পেয়েই বাইরে যান মনির। ঘণ্টাখানেক পর রাত ১১টার দিকে পাঁচ লিটার পানির বোতল ও খাবার নিয়ে হোটেলে ফিরে আসেন। এই এক ঘণ্টা কার সঙ্গে ছিলেন, যে খাবার সবার জন্য নিয়ে আসেন, সেগুলো তাঁর নিজের কেনা নাকি কেউ দিয়েছিলেন? হোটেলে ফিরেও বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
হোটেলে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা– মনির, স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও ছেলে নাঈম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। তবে সাধারণত ‘ফুড পয়জনিং’ বলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু হলে প্রায় একই সময় তিনজনের মৃত্যু হওয়ার কথা না। এ ছাড়া যদি রেস্তোরাঁর খাবারে বিষক্রিয়া থাকত, তাহলে আরও অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত। সন্দেহ করা হচ্ছে খাবারের সঙ্গে বিষ মেশানো হতে পারে। তবে কে বা কারা এই কাজটি করেছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, আদ্-দ্বীন হাসপাতালে দু’জনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার পরই মারা যান মনির হোসেন।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি খাবারের সঙ্গে ছিল, নাকি কেউ মিশিয়ে দিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত মনিরের সঙ্গে ফোনে একাধিক ব্যক্তির কথা হয়। এই তালিকায় স্বজন রয়েছে। পরিবহন ব্যবসা ছাড়াও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাঁর। বাস কিংবা অন্য কোনো সম্পদ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কারও ঝামেলা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক জায়গায় কাজ করছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির নব্বইয়ের দশকে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে যান। পরে দেশটিতে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলায় এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জে সম্পদ গড়েন। রামগঞ্জ-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে তার মালিকানায় পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে ২০১২-১৩ সালে তিনতলা ও পাঁচতলা দুটি বাড়ি কেনেন।
এই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। বাড়ি দুটি দেখভাল করেন তাঁর দূর সম্পর্কের চাচা একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম। এই বাড়ি কেনার জন্য সে সময় এক কোটি টাকা বিদেশ থেকে রফিকুলের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছিলেন তিনি। চাচা তাঁর খুব বিশ্বস্ত ছিলেন। দেশে তাঁর সব সম্পদের হিসাব তিনি ছাড়াও স্ত্রী স্বপ্না এবং কেয়ারটেকার রফিকুল জানতেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমের চিকিৎসা করানোর জন্য তাকে নিয়ে মনির ও স্ত্রী স্বপ্না শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় মগবাজার মোড়-সংলগ্ন সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন এবং বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা রফিকুল রাত ৮টা পর্যন্ত হোটেলে অবস্থান করেন। তাদের খাবার কিনে এনে দেন তিনি। রাত ৮টার পর চলে যান। রাত ১০টায় ফোন পেয়ে মনির বাইরে বের হন। ঘণ্টাখানেক পর পানি এবং আবারও খাবার নিয়ে হোটেলে আসেন। সেই খাবার খান তারা। রাতেই স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করেন সবাই।
পরদিন সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে তিনি রফিকুলকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁকে দ্রুত হোটেল আসতে বলেন। সাড়ে ৭টায় রফিকুল সেখানে আসেন এবং মগবাজার মোড় এলাকার একটি ফার্মেসির এক কর্মচারীকে হোটেলে নিয়ে যান। ফার্মেসির ওই ব্যক্তি তাদের ওষুধ দিয়ে বের হয়ে যান। অসুস্থতার খবর শুনে রফিকুলের মেয়ে হোটেলে আসেন। স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হলেও সে খবর হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জানাননি তিনি এবং রফিকুল। বেলা ১১টার পর যখন প্রথমে অসুস্থ স্বপ্নাকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান, তখন হোটেলের কর্মচারীরা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে নেওয়া হয় মনির ও তাঁর ছেলে নাঈমকে।
খবর পেয়ে পুলিশ আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে রোববার রাতে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। রাতে তিনজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজন।
সোমবার রাতে রমনা থানার এক কর্মকর্তা জানান, মামলা হয়নি, তবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রোববার রফিকুল, তাঁর মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রফিকুলকে থানায় রেখে অপর দু’জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মনিরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, মনির প্রায় ৩০ বছর সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। তাঁর তিন ভাইও প্রবাসী। বড় ভাই নুরুল আমিন ইতালি থেকে সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত ত নজন র ম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও হৃতিক সুজানের বন্ধুত্ব রয়ে গেছে
বলিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় তারকা জুটি হৃতিক রোশন ও সুজান খান। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। এই জুটির দুই সন্তানও রয়েছে। কিন্তু সম্পর্কটি বিচ্ছেদে গড়িয়েছে। তবে বন্ধুত্ব টিকে আছে তাদের।
১৪ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করে দুইজন আলাদা হন। ২০১৪ সালে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয়। তবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখনও রয়েছে। প্রায়ই তাদের সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়।
বলা হয়ে থাকে, তারকাদের বিচ্ছেদ মানেই কোটি কোটি টাকার মামলা। হেভি ওয়েট তারকা হৃতিক রোশনের বেলায় মামলাটা যে অনেক বেশি টাকায় মেটাতে হবে, তাতো বোঝাই যাচ্ছে। হৃতিক-সুজান জুটি বিয়ে যেমন আলোচিত হয়েছিল, তেমনই তাদের বিচ্ছেদ নিয়েও আলোচনায় এসেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছেন, এটিই বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ।
আরো পড়ুন:
হৃতিকের ছেলেকে পাপারাজ্জিদের তাড়া, ভিডিও ভাইরাল
আলোচনায় হৃতিক-কিয়ারার চুম্বন দৃশ্য
বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘হৃতিক-সুজান জুটির বিচ্ছেদ নিষ্পত্তিতে সুজান ৩৮০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫২৭ কোটি টাকা) পেয়েছেন। তবে বলা হচ্ছে, এটিই বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ হিসেবে রেকর্ড গড়ে।’’
উল্লেখ্য, নির্মাতা রাকেশ রোশনের ছেলে হৃতিক আর অভিনেতা সঞ্জয় খানের মেয়ে সুজান দুইজন-দুইজনের শৈশবের বন্ধু। ২০০০ সালে ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’ সিনেমা দিয়ে হৃতিক যখন বলিউডে অভিষেকের অপেক্ষায়, তখনই সুজানের সঙ্গে তার প্রেম চলছিল। চার বছর প্রেমের পর বিয়ে করেন তারা। ২০১০ সালের ‘কাইটস’ সিনেমার শুটিং চলাকালে হৃতিক ও সুজানের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
দুইজনই নতুন প্রেমে রয়েছেন। হৃতিক প্রেম করছেন অভিনেত্রী সাবা আজাদের সঙ্গে, আর সুজান প্রেম করছেন আর্সলান গোনির সঙ্গে।
ঢাকা/লিপি