সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ছয় মাস আগে সিরিয়ায় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন দেশটির দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ। তাঁকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেন দেশটির বর্তমান শাসক আহমেদ আল–শারা।

এদিকে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সিরিয়ায় বিনিয়োগের পথ খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্পের গতকাল সোমবারের ওই আদেশের ফলে সিরিয়ার উন্নয়ন, সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ও দেশের সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সিরিয়ার ওপর কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুনসিরিয়ার নেতা শারাকে গ্রেপ্তারে ১ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করল যুক্তরাষ্ট্র২১ ডিসেম্বর ২০২৪

মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা কারণে সিরিয়ার আগের সরকারের সময়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি দেশটির পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছিল। নানা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বাশার আল-আসাদের শাসনামলে সিরিয়ার অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।

গত মে মাসে মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা কারণে সিরিয়ার আগের সরকারের সময়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি দেশটির পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করেছিল। নানা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসনামলে সিরিয়ার অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।

গতকাল এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সিরিয়াকে সমর্থন করে যেটি স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ এবং দেশের ভেতরে ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখে। একটি ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া, যা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না, নিজেদের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে সমর্থন করবে।’

তবে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও বাশার আল-আসাদ ও তাঁর সহযোগী, আইএসআইএল (আইএসআইএস), ইরান ও তার মিত্রদের ওপর সিরিয়া সংশ্লিষ্ট যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

আরও পড়ুনসম্পর্ক উন্নয়নে সৌদি আরব সফরে গেলেন আল–শারা ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইতিমধ্যে ৫১৮ সিরীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা এখনই প্রত্যাহার করা হবে না। কেননা, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলোকে সিজার অ্যাক্টের আওতায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আগে সব শর্ত পূরণ হয়েছে কি না, মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিরিয়ার সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ওই আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটির আওতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সিরিয়ার অর্থনীতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সিরিয়াকে সমর্থন করে যেটি স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ এবং দেশের ভেতরে ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখে। একটি ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া, যা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না, নিজেদের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সমর্থন করবে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ও ডেমোক্র্যাট নেতা ইলহান ওমর এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা আনা পলিনা লুনা এ সপ্তাহের শুরুতে একটি বিল উত্থাপন করেন। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য একটি আইনি ভিত্তি তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। এখন ট্রাম্প তাঁর আদেশের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে প্রেসিডেন্ট আল-শারার ব্যাপারে এ মার্কিন অবস্থান পুনঃপর্যালোচনা করে দেখতে বলেছেন।

আরও পড়ুনসিরিয়ার শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত১৪ মে ২০২৫

আল-শারার নেতৃত্বাধীন সংগঠন আল-নুসরা ফ্রন্টের (বর্তমানে হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস) ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকার বিষয়টিও পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।

আল-নুসরা ছিল আল-কায়েদার সিরিয়া শাখা। যদিও ২০১৬ সালে আল-শারা এ গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরে তাঁর নেতৃত্বে আল-নুসরার নাম হয় জাবহাত ফাতেহ আল-শাম। এরপর গোষ্ঠীটি অন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্র হয়ে হায়াত তাহরির আল-শাম গঠন করে।

আল-নুসরা ছিল আল-কায়েদার সিরিয়া শাখা। যদিও ২০১৬ সালে আল-শারা এ গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরে তাঁর নেতৃত্ব আল-নুসরার নাম হয় জাবহাত ফাতেহ আল-শাম। এরপর গোষ্ঠীটি অন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্র হয়ে গঠন করে হায়াত তাহরির আল-শাম।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিবে কয়েক বছর ধরে বিদ্রোহী–অধ্যুষিত একটি অঞ্চলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আল-শারা। তাঁর নেতৃত্বেই সিরিয়ার বিদ্রোহীরা অভিযান চালিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতা থেকে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করেন।

গত মে মাসে সৌদি আরবে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আল-শারা। তাঁকে ট্রাম্প ‘আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব’ ও ‘কঠিন মেজাজের’ নেতা বলে প্রশংসা করেন।

আরও পড়ুনসিরিয়া বাকি বিশ্বের জন্য হুমকি নয়: বিদ্রোহী নেতা শারা১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামেও পরিচিত আল-শারা তাঁর আল-কায়েদার সঙ্গে অতীত সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ কমাতে সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যদিও গত কয়েক মাসে আলাউতি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সাবেক বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সহিংসতা ও অপহরণের ঘটনায় কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাশার আল-আসাদ আলাউতি সম্প্রদায়ের ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট আল-শারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সিরিয়া এখন তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য, এমনকি গোলান মালভূমির অধিকৃত অঞ্চল ছাড়িয়ে সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করা ইসরায়েলের জন্যও কোনো ধরনের হুমকি হয়ে উঠবে না। ইসরায়েল এখনো সিরিয়ায় নিয়মিত গোলাবর্ষণ করে থাকে।

আরও পড়ুনবিদ্রোহী নেতা আল-শারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট, স্থগিত করা হলো সংবিধান ৩০ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য় র ওপর থ ক য ক তর ষ ট র র ল র জন য সরক র র আল শ র দ শট র র অর থ আল শ ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে

দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।

দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারে

নৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।

আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগে

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।

ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।

আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ