ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের গাজার ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান নিহত হয়েছেন।

গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, গাজা সিটির নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন মারওয়ান। এ হামলায় তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যও নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছ, মারওয়ান দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা পেশায় ছিলেন। চিকিৎসা পেশাজীবনে তিনি সহমর্মিতা ও নিষ্ঠার প্রতীক ছিলেন।

ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এমন জঘন্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা গাজা সিটি এলাকায় হামাসের একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সদস্যকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে।

হামলায় হামাসের সঙ্গে জড়িত নয়, এমন বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এই হামলায় হামাসের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসির ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। একাধিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুনগাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি ইসরায়েল, জানালেন ট্রাম্প০২ জুলাই ২০২৫

ইন্দোনেশীয় হাসপাতালটি একাধিকবার ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষাপটে একপর্যায়ে হাসপাতালটিকে পরিষেবা দেওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছিল গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজা গভর্নরেটে এখন আর কোনো কার্যকর হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই।

গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও মানবিক দলের ওপর হামলার অভিযোগ করে আসছে।

চিকিৎসক মারওয়ানের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান বলেন, একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি তাঁর বাবার কক্ষ লক্ষ্য করে আঘাত হানে। হামলার সময় তাঁর বাবা এই কক্ষেই ছিলেন। তিনি এই কক্ষেই শহীদ হন।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় সহায়তা করছে মাইক্রোসফটসহ বহু প্রতিষ্ঠান১৯ ঘণ্টা আগে

লুবনা বলেন, তাঁর বাবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি শুধু যুদ্ধের মধ্যে রোগীদের নিয়েই চিন্তিত থাকতেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদ১০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল ম রওয় ন ন ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট ওসমানী হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ওয়ার্ডের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।

স্বজনদের ভাষ্য, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় দুই প্রসূতির প্রসববেদনা ওঠে। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে স্বজনসহ অন্যদের সহযোগিতায় তাঁরা বারান্দায় সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্যে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় তাঁরা শয্যা পাননি। দুই প্রসূতি জরুরি অবস্থায় গিয়েছিলেন। ভিড় থাকায় ভেতরে জরুরি অবস্থার বিষয়টি তাঁরা জানাতে পারেননি। এক প্রসূতি সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দেওয়ায় নবজাতকটিকে বাঁচানো যায়নি। তবে মা সুস্থ আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের চাটিবহর গ্রামের শাহিন মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম (১৯) ও গোলাপগঞ্জের দক্ষিণ রামপাশা গ্রামের রতন চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুপ্রিতা রানী দাস (২৫) বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে সুমি বেগমের সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। দুই প্রসূতি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সুমি বেগমের মা রাজিয়া বেগম জানান, মেয়েকে বুধবার বেলা তিনটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর জায়গা পাননি। এ সময় মেয়ের প্রসববেদনা উঠলে ওয়ার্ডের ভেতরে যেতে চাইলেও যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে উপস্থিত অন্যরা ভেতরে নার্সদের খবর দিলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। পরে হাসপাতালের বারান্দাতেই তিনিসহ অন্যদের সাহায্যে নবজাতকের জন্ম হয়। সন্তান প্রসবের পর ওয়ার্ডের নার্সরা গিয়েছিলেন। পরে তাঁর মেয়েকে ওয়ার্ডের ভেতরে নেওয়া হয়।

রাজিয়া বেগম আরও জানান, তাঁর মেয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সন্তান প্রসব করেন। সময়ের আগে সন্তান প্রসব ও হাসপাতালের অসহযোগিতায় তাঁর মেয়ের বাচ্চাটি মারা গেছে। তার মেয়ের সন্তান প্রসব হওয়ার প্রায় ১০ মিনিট পর আরও এক প্রসূতির প্রসববেদনা ওঠে। তিনিও বারান্দায় একইভাবে সন্তান প্রসব করেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ৯০০। চিকিৎসাধীন আছেন প্রায় দুই হাজার ৮০০ রোগী। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি করা হয়। একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন প্রসূতি ভর্তির জন্য চলে আসেন। ভর্তির কক্ষে শয্যা আছে পাঁচটি। সেখানে প্রসূতিদের পরীক্ষা করার পর ভর্তি করা হয়। প্রসূতিদের অবস্থা দেখেই প্রসব করানোর জন্য শয্যা দেওয়া হয়।

সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই দুই প্রসূতি জরুরি অবস্থায় এসেছিলেন। সেখানে ভিড় থাকায় ভেতরে জরুরি অবস্থার বিষয়টি তাঁরা জানাতে পারেননি। এ ছাড়া যে কক্ষে পরীক্ষা করা হয়, সেটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বাইরের শব্দ ভেতরে যায়নি। চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দেননি কিংবা সেবা দেওয়ার মনোভাব নেই—এমনটি না। ৯০০ শয্যার হাসপাতালে তিন হাজারের কাছাকাছি রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি বুঝতে হবে।’ প্রসূতি দুই নারী সুস্থ আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক প্রসূতি সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এ জন্য শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। মা সুস্থ আছেন। অন্য শিশু ও মা ভালো আছেন। আজ-কালকের মধ্যে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ