তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭২ জন নিহত, গণপিটুনিতে ১৯ জন
Published: 25th, July 2025 GMT
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৭ জন আহত। এ সময় ১৯ জন গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
সারা দেশ থেকে অধিকার–এর মানবাধিকারকর্মীদের পাঠানো তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ৭২ জন নিহত এবং ১ হাজার ৬৭৭ জন আহত হন। এই তিন মাসে বিএনপির ১০৫টি আর আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ৪টি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ১৯ জন নিহত ও ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ২ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার যৌথ বাহিনী গঠন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু এই সময়েও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হওয়া এবং নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আটজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশ, একজন র্যাব, একজন কোস্টগার্ড এবং একজন যৌথ বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হন।
গণপিটুনি ও সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে উচ্ছৃঙ্খল জনতার মাধ্যমে দলবদ্ধভাবে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার সৃষ্টি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে পুলিশের সক্ষমতার অভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ১৯ জন গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।
কারাগার পরিস্থিতি ও বন্দীদের মানবাধিকারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সব কটি কারাগারের ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী রয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দী ছিল। কারাগারগুলোতে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। বন্দীরা গুরুতর অসুস্থ হলে এবং তাঁদের উন্নত চিকিৎসা নিতে হলে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ফলে অনেক বন্দীর উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়। গত তিন মাসে ২২ কয়েদি কারাগারে মারা যান। তাঁদের মধ্যে ২১ জন অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।
নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তিন মাসে ২০৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৮ জন নারী, ১০৯ জন কন্যাশিশু আর ২১ জনের বয়স জানা যায়নি। কন্যাশিশুর মধ্যে ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার আর তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ১৪ জন নারী ও কন্যাশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া এই সময়ে ১১ জন নারী যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন মাসে বিএসএফের গুলিতে ৯ বাংলাদেশি নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনকে গুলি করে এবং ২ জনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ জুন পর্যন্ত নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ১ হাজার ৭৮৩ জনকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়ে অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩০ জন আহত, ১৬ জন লাঞ্ছিত ও ১১ জন হুমকির শিকার হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মী, প্রশাসন, মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারাও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় ছ ন আহত হয় ছ ন গণপ ট ন জন আহত এই সময় জন ন র ন ন হত ন আহত
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতে পারতেন না। বাংলাদেশে শুধু একজন জাতির পিতা নন, অনেক জাতির পিতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী।”
তিনি বলেন, “মওলানা ভাসানী কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি গণমানুষের জন্য লড়াই করেছিলেন। মওলানা ভাসানীর আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
‘পারলে শেখ হাসিনাকে পুশইন করুন’, ভারতের উদ্দেশে নাহিদ
নাহিদ বলেন, “আমরা এই সমাবেশে মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাইা। মওলানা ভাসানীকে ইতিহাসে স্মরণ করা হয় না। ভাসানীর মতো মহান রাজনৈতিক পুরুষ, বাংলাদেশের স্থপতি থাকা সত্ত্বেও শুধু একজনকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৫৪ বছর একজন ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মওলানা ভাসানী শুধু বাংলাদেশ নয়, উমহাদেশের রাজনৈতিক পুরুষ ছিলেন। তার রাজনীতি শুরু হয়েছিল আসামে। সেই আসামে তিনি বাঙালি মুসলিম কৃষকদের অধিকার ও তাদের ভূমির অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। সেই লড়াই এখন পর্যন্ত আসামের বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুদের লড়তে হয়। সেখানে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, “মওলানা ভাসানী প্রথম ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীদের বিদায় ঘোষণা করেছিলেন কাগমারী আন্দোলনের মাধ্যমে। মওলানা ভাসানী হচ্ছেন, এমন রাজনৈতিক পুরুষ যিনি স্বাধীনতার পরে বলেছিলেন ‘আমার পিঞ্জির ভেঙেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়, দিল্লির গোলামী করার জন্য নয়’।”
টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নামে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির কড়া সমালোচনা করে এনসিপির এই নেতা বলেন, “তাঁত শিল্পকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আমরা কৃষকদের সংগঠিত করতে চাই।”
সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী , টাঙ্গাইল জেলার মুখ্য সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, এনসিপির নেতারা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থল শহীদ মিনার চত্বরে যান।
এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টাঙ্গাইল শহরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ