Prothomalo:
2025-09-17@23:45:24 GMT

কেন ওহি আসা বন্ধ হয়েছিল

Published: 25th, July 2025 GMT

নবীজি (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে প্রথম ওহি পান। তিনি মানবজাতির কাছে আল্লাহর বাণী প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পান এবং এই দায়িত্ব পালনে তিনি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেন।

তবে, এই ওহি গ্রহণের প্রক্রিয়া তাঁর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন ছিল।

ওহি গ্রহণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব

নবীজি (সা.) যখন ওহি গ্রহণ করতেন, তখন তা তাঁর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করত। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, ওহি গ্রহণের সময় তাঁর শরীরে ভারী বোঝা অনুভূত হত, যা তাঁকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে দিত (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২)।

এই প্রক্রিয়া শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ছিল কঠিন। একই সঙ্গে, তিনি মক্কার বিরোধীদের থেকে প্রবল প্রত্যাখ্যান ও বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই চাপের কারণে তিনি কয়েকদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এমনকি রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের জন্যও উঠতে পারেননি।

ওহির সাময়িক বিরতি

নবীজির (সা.

)-এর অসুস্থতার সময় আল্লাহ তা‘আলা কয়েকদিনের জন্য ওহি প্রেরণ বন্ধ রাখেন, যাতে তিনি স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এই সময়ে মক্কার একজন নারী, আবু লাহাবের স্ত্রী, তাঁকে উপহাস করে বলেন, “দেখছি, তোমার ‘শয়তান’ তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে!” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৫০)।

নবী (সা.) এই উপহাসে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি, তবে ওহি না আসার কারণে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁর হৃদয়ে ওহি গ্রহণের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিল।

আরও পড়ুনতিনি ওহি লিখতেন, সংকলন করেছিলেন কোরআন২৭ এপ্রিল ২০২৩সুরা দুহা: নবীজির জন্য সান্ত্বনা

এই সময়ে আল্লাহ তাআলা সুরা দুহা নাজিল করেন, যা নবীজির (সা.)-এর উদ্বেগ দূর করে এবং তাঁকে সান্ত্বনার কারণ হয়। শুরুতে আল্লাহ বলেন: “শপথ সকালের আলোর, এবং শপথ রাতের যখন তা নিস্তব্ধ হয়। তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি তোমার প্রতি বিরূপও হননি।” (আয়াত: ১-৩)

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবীজি (সা.)-কে আশ্বাস দেন যে তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টও নন। এই সান্ত্বনামূলক বাণী নবীজির মানসিক চাপ কমায় এবং তাঁকে তাঁর বিরোধীদের কথা উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করে।

আখিরাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি

আল্লাহ তাআলা সুরা দুহায় আরও বলেন: “এবং অবশ্যই তোমার জন্য আখিরাত এই দুনিয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। এবং শীঘ্রই তোমার প্রভু তোমাকে এত বেশি দেবেন যে তুমি সন্তুষ্ট হবে।” (আয়াত: ৪-৫)

এই আয়াতে আল্লাহ নবীজিকে আশ্বাস দেন যে আখিরাত তাঁর জন্য এই পৃথিবীর জীবনের চেয়ে অনেক উত্তম হবে। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর উম্মত ক্ষমা প্রাপ্ত হবে, তারা জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করবে এবং তাদের নেক আমল বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯৬)।

এই বাণী নবী (সা.)-এর হৃদয়ে অপার আনন্দ নিয়ে আসে।

আরও পড়ুনকথার শেষে কেন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে হয়০৭ এপ্রিল ২০২৫আল্লাহর প্রতি নবীজির নির্ভরতা

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনায় আছে, একবার নবীজি (সা.) মাটিতে শুয়েছিলেন এবং ওঠার সময় দেখা যায় তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গেছে। ইবনে মাসউদ তাঁকে নরম কিছু বিছিয়ে দেওয়ার অনুমতি চাইলে নবীজি (সা.) বলেন: “আমার এবং দুনিয়ার সম্পর্ক কী? আমার সম্পর্ক দুনিয়ার সঙ্গে এমন একজন পথিকের মতো, যে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছে এবং তারপর উঠে চলে গেছে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৭)

এতে বোঝা যায়, দুনিয়ার প্রতি তিনি ছিলেন উদাসীন, তার সকল আগ্রহ ছিল আল্লাহর প্রতি। তিনি দুনিয়ার আরামের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেননি, বরং তাঁর লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের কল্যাণ।

সূত্র: অ্যবাউট ইসলাম ডট নেট

আরও পড়ুনমুসা (আ.)-এর জীবনের ঘটনা১০ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত গ রহণ র র জন য নব জ র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে