Risingbd:
2025-07-29@20:01:45 GMT

সড়কে গর্ত, চলাচলে দুর্ভোগ

Published: 26th, July 2025 GMT

সড়কে গর্ত, চলাচলে দুর্ভোগ

রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে যাত্রাবাড়ী সড়কটি যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’। খানাখন্দে ভরা এই প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। রিকশা উল্টে যাত্রী আহত হচ্ছেন, মোটরসাইকেল পড়ে চালক কিংবা যাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তিগত বাহন নয়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মালবাহী ভ্যান সবই এই গর্তের শিকার।

বৃষ্টির দিনে অবস্থা হয় আরো ভয়াবহ। সড়কে জমে থাকা পানিতে গর্ত দেখা যায় না। তখন এই সড়ক হয়ে ওঠে যন্ত্রণার কারণ।

গত বুধবার ধোলাইপাড় মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত অন্তত ২৫টির বেশি বড় গর্ত দেখা গেছে। এর মধ্যে কয়েকটির গভীরতা এক ফুটেরও বেশি। পিচ উঠে গিয়ে আশপাশ জুড়ে তৈরি হয়েছে ছোট বড় গর্ত।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় ৪ জনের পাশাপাশি দাফন

সুনামগঞ্জে লেগুনা-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২ 

স্থানীয় দোকানদার মো.

আবুল কালাম বলেন, “প্রতিদিনই কেউ না কেউ পড়ে যাচ্ছে। কারো হাত ভাঙছে, কারো মাথায় আঘাত লাগছে। কিছুদিন আগে এক কলেজছাত্রী বাইকে এসে পড়ে গিয়েছিলেন হাসপাতাল পর্যন্ত নিতে হয়েছে।”

এই সড়কে পড়ে গৃহকর্মী ফাহমি বেগম কোমরে ব্যথা পেয়ে তিন দিন কাজে যেতে পারেননি। তার মালিক সোবাহান মিয়া বলেন, “একটা গর্ত তার রুজি বন্ধ করে দিলো।”

এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। ধোলাইপাড়ের খান ম্যানশনের সামনে প্রায় প্রতিদিনই রিকশা উল্টে যাত্রী আহত হচ্ছেন। রিকশাচালকরা বলছেন, “এই গর্তগুলো কেউ ঠিক করতে আসছে না। স্থানীয়রা কখনো ইট, কখনো কাঠ বা বালিশ ফেলে সংকেত দিচ্ছেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান মিলছে না।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি আর নিয়মিত সংরক্ষণের অভাবেই সড়কের এই দশা। আমরা মেরামতের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”

ধোলাইপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, “এই রুট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। আমরা বারবার সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হবে।”

রাজধানীজুড়ে গর্ত
ধোলাইপাড়–যাত্রাবাড়ী রুটের মতো একই পরিস্থিতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়।ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। প্রধান সড়কগুলোও ভাঙাচোরা। মিরপুর, হাতিরঝিল, মগবাজার, কমলাপুর, বংশাল, পোস্তগোলা, নারিন্দা, গেণ্ডারিয়া, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, দয়াগঞ্জ, সবখানে একই চিত্র।

ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ বলেন,“বিভিন্ন সংস্থা নিয়ম না মেনে একসঙ্গে রাস্তা কাটছে। ফলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।”

শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, “রাস্তার গর্তে পানি জমে বোঝা যায় না কতটা গভীর। দুর্ঘটনার ভয়েই কেউ রিকশায় উঠতে চায় না।”

মুগদা, পীরেরবাগ, দক্ষিণ বাড্ডা, কাজীপাড়া সবখানেই গর্ত ঢেকে রাখতে কেউ ফেলে রেখেছে গাছের ডাল, কেউ বা পুরোনো বালিশ। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, দুর্ঘটনা ঠেকাতে নিজেরাই ব্যবস্থা নিচ্ছেন, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।

প্রকল্প, প্রতিশ্রুতি আর অজুহাত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, “কিছু সময় প্রকল্প স্থগিত ছিল। এখন সক্রিয়ভাবে ভাঙাচোরা রাস্তার তালিকা করছি। এই সড়কগুলো সংস্কারের তালিকায় আছে।”

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির আহমেদ বলেন, “বেশ কয়েকটি এলাকায় জমি না পাওয়ায় কাজ এগোয়নি। জমি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।”

কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধু তালিকা ও পরিকল্পনা নয়, দরকার দ্রুত বাস্তবায়ন। এই গর্তগুলো শুধু যানবাহনের জন্য নয়, মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালেহ উদ্দিন বলেন, “রাজধানীর প্রতিটি গর্ত যেন নগর উন্নয়নের ব্যর্থতার প্রতীক। ধোলাইপাড়–যাত্রাবাড়ীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটে প্রতিদিন মানুষ আহত হচ্ছে, অথচ কোনো দায় নিচ্ছে না কেউ। দুই সিটি করপোরেশন একে অপরকে দোষারোপ করেই পার পেয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতিটি গর্তের নিচে চাপা পড়ছে করদাতার টাকা, মানুষের আশা, শহরের মর্যাদা।”

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন প রক শ ই সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি শতবর্ষী ইদ্রিস শেখের আদালতে হাজিরা ও প্রিজন ভ্যানে যাত্রা

তখন সময় দুপুর ১২টা ৩ মিনিট। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় তলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস কক্ষ থেকে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে একজন পুলিশ সদস্য হাত ধরে সিঁড়ির কাছে নিয়ে যেতে থাকেন। সেই বৃদ্ধের ডান হাতে একখানা লাঠি। লাঠির ওপর ভর দিয়ে তিনি সিঁড়ির কাছে যেতে থাকেন।

সিঁড়ির কাছে যাওয়ার পর তিনি কোনোভাবেই সেই সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় আসতে পারছিলেন না। দুজন পুলিশ কনস্টেবল অশীতিপর এই বৃদ্ধের দুই বাহু ধরে রাখেন।

পরে ইদ্রিস শেখের দুই বাহু ধরে দ্বিতীয় তলায় আনা হয়। তখন ইদ্রিস শেখ হাঁপাচ্ছিলেন। পরে দুজন কনস্টেবল আবার ইদ্রিস শেখের দুই বহু ধরে রাখেন। এরপর খুব সাবধানে দুই তলার সিঁড়ি দিয়ে ইদ্রিস শেখ লাঠির ওপর ভর করে নিচতলায় নামেন। তৃতীয় তলা থেকে নিচতলায় নামতে ইদ্রিস শেখের সময় লেগেছে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। ইদ্রিস শেখকে যখন নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে হাজতখানার সামনে আনা হয়, তখন তাঁর ছেলে বাবুল শেখ কেঁদে ফেলেন।

বাবুল শেখ তখন চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমার বাবার বয়স এখন ১২০ বছর। এই ১২০ বছর বয়সেও আমার বাবাকে জেলের ঘানি টানতে হবে।’

প্রিজন ভ্যানে ইদ্রিস শেখ। মঙ্গলবার ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

সম্পর্কিত নিবন্ধ