শুক্রবারই মায়ের কাছে এলেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে
Published: 8th, August 2025 GMT
গাজীপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মা সাহাবিয়া খাতুন দীর্ঘদিন চোখের সমস্যায় ভুগছেন। মায়ের চিকিৎসা করাতে গাজীপুর নিতে আজ শুক্রবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। আসাদুজ্জামান আজ ঠিকই বাড়িতে ফিরেছেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় আসাদুজ্জামানের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
নিহত আসাদুজ্জামানের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। ছেলের লাশ বাড়ির সামনে স্কুলের মাঠে পৌঁছানোর পর বিলাপ করতে করতে মা সাহাবিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বুকের ধন আইজ আমারে নেওনের লাইগ্যা আইব কইছিল। আমার চোক্কের চিকিৎসা করানির লাইগ্গা গাজীপুর লইয়া যাইব কইছিল। কিন্তু আমার বুকের ধনরে ওরা কাইড়া নিল। আমার বাড়িত আইজ লাশ আইল পুতের।’ কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে মূর্ছা যান এই মা।
আসাদুজ্জামানের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে পৌঁছানের পর মরদেহ বাড়ির পাশের ফুলবাড়িয়া ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসী ভিড় করেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে। তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। বাদ মাগরিব বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা, সাংবাদিকসহ গ্রামের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সবাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। কাল শনিবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধনের আহ্বান করা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
আসাদুজ্জামানের লাশের সঙ্গে ফুলবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে আসেন তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম। সঙ্গে ছিল দুই ছেলে তৌকির হোসেন (৭) ও ফাহিম হোসেন (৩)। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাড়ির একটি ঘরে দুই শিশুকে খাটে খেলতে দেখা যায়। পাশের চৌকিতে বসে আহাজারি করছিলেন মুক্তা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার দুই সন্তানকে এতিম করে দিল। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
আরও পড়ুনপ্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা০৭ আগস্ট ২০২৫নিহত আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজে গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগমুহূর্তের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, আসাদুজ্জামান স্থানীয় আল-হেরা একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেসন্তানকে নিয়ে থাকতেন। গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একটি ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের স্ত্রী মুক্তা বেগম তাঁর স্বামী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন র শ ক রব র হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে রাঙামাটির কাউখালী থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তার বিপি নম্বর ৯৪১৪১৭১২০৯।
অভিযুক্ত তুহিন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আরো পড়ুন:
৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ
মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তুহিনের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদানের সময় তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে নিজেকে ওই মুক্তিযোদ্ধার দৌহিত্র পরিচয় দেন। পরে সেই নকল হলফনামা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় পুলিশে চাকরি নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক বলেন, ‘‘তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। হলফনামায় দেওয়া স্বাক্ষরও আমার নয়। কে বা কারা প্রতারণা করেছেন, তাদের শাস্তি চাই।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে মোহনগঞ্জেই, সুনামগঞ্জে নয়।’’
অভিযোগকারী হোসনা বেগম বলেন, ‘‘তুহিন প্রতারণা করে আমার অজান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হকের সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন। তিনি আমার নানা নন।’’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তুহিন দাবি করেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মনজুরুল হক আমার নানা, তার সনদেই চাকরি নিয়েছি। প্রতারণা করে থাকলে এতদিন চাকরিতে থাকা সম্ভব হতো না।’’
ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিসম্মত হলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/ইবাদ/বকুল