পৃথিবীর দীর্ঘতম রাতও ভোর হয়, আমাদেরও বোধোদয় হোক
Published: 9th, August 2025 GMT
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের শুরুর কথা বলতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে। সেই বছর আমি দ্বিতীয় জাতীয় দাবার বাছাইপর্বে প্রথম অংশগ্রহণ করি। তখন আমার বয়স ছিল ৯ বছর। আর এ বছর আমি ৫৯তম জন্মদিন পালন করলাম। অর্থাৎ পুরো অর্ধশতক। এই ৫০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের ক্রীড়াজগৎ নিয়ে আমাকে কিছু বলতে বলা হয়েছে।
স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল ছিল মূল খেলা। এ দেশের মানুষ বরাবরই ফুটবলপ্রিয়। ১৯৫৮ সাল থেকে ঢাকায় আগা খান গোল্ড কাপের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো। স্বাধীনতার পরও খেলার তারকা বলতে আমরা ফুটবলারদেরই বুঝতাম। সালাহউদ্দিন ভাই, এনায়েত ভাই, চুন্নু ভাই, আসলাম ভাই—ওনারাই ছিলেন সত্তর–আশি দশকের তারকা। আমি নিজেও কিন্তু এই ফুটবল উন্মাদনার মধ্যে বড় হয়েছি। প্রতিদিন বিকেল হওয়ার আগেই আমি পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে পড়তাম। ১৯৭৭ সালে আমি জাতীয় দাবা খেলোয়াড় হয়ে গেছি, কিন্তু ফুটবল খেলা মিস দিতাম না। দাবাগুরু কাজী মোতাহার হোসেন আমার সঙ্গে দাবা খেলতে আসতেন। বাইরে থেকে ফুটবল খেলার আওয়াজ আসত, আর আমার মন ছটফট করত। কিন্তু এমন একজন মনীষী সামনে বসা, আমার কিছু করার থাকত না।
আরও পড়ুনবিচারক ও পাঠকদের রায়ে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ঋতুপর্ণা৮ ঘণ্টা আগে১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এমসিসি, ভারতের ডেকান ব্লুজ এবং শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসে। আমরা এই ম্যাচগুলো মাঠে গিয়ে দেখেছি। এই সময় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা একটু বাড়তে থাকে। রকিবুল হাসান, ইউসুফ রহমান বাবু, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, শফিকুল হক হীরা প্রমুখ ঘরে ঘরে বেশ পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। হকি তারকা সাব্বির ইউসুফ, আবদুস সাদেক প্রমুখের নাম আমরা শুনেছিলাম, কিন্তু তাঁদের ফুটবলারদের মতো ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল না। তবে দাবা ফেডারেশনের রুমটা হকি স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে হওয়ায় আমরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রায়ই হকি খেলা দেখতাম।
সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার ২০২৪ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন (বাঁ থেকে) শেখ মোহাম্মদ আসলাম, নিয়াজ মোরশেদ, সাবরিনা সুলতানা ও আসিফ হোসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন