অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে ‘স্বীকৃতি দেবে’
Published: 11th, August 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার মতো অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
আলবানিজের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছ থেকে কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরস্ত্রীকরণ, সাধারণ নির্বাচন আয়োজন এবং ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে অব্যাহতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
সোমবার (১১ আগস্ট) ঘোষণা করা এই পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙা এবং গাজায় সংঘাত, ভোগান্তি ও অনাহারের অবসান ঘটানোর জন্য মানবতার সর্বোত্তম আশা।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
‘আমরা মরে যাচ্ছি’, গণঅনাহারে বৈশ্বিক নীরবতায় গাজার ধিক্কার
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে থাকা ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, শনিবার (৯ আগস্ট) থেকে গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যা নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে।
প্রসঙ্গত, গাজা যুদ্ধের প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি ‘গণহত্যা’ ও ‘গাজায় দুর্ক্ষিভ’ শব্দ ব্যবহার করে না ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি। এর জন্য মানবাধিকারকর্মীদের কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত সাংবাদমাধ্যমটি।
ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এর আগে বলেছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া তাদের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের জন্য ক্রমবর্ধমান সমর্থনকে তুলে ধরে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ জানান, তার সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভবিষ্যতের কোনো রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের সঙ্গে আলোচনার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এখানে একটি সুযোগের মুহূর্ত এসেছে এবং অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এটি কাজে লাগাবে।”
গত রবিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে হাজার হাজার মানুষ সিডনি হারবার ব্রিজে পদযাত্রা করে। এই কর্মসূচির জন্য আদালতের রায় নিতে হয় আয়োজকদের।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই পথে হাঁটবে না। তারা মনে করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হামাসকে পুরস্কৃত করা।
রবিবার (১০ আগস্ট) মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স পুনরায় বলেন, কার্যকর সরকার না থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাকারী দেশগুলোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় দেশগুলো এবং অস্ট্রেলিয়ার এভাবে সেই গর্তে ঝাঁপিয়ে পড়া হতাশাজনক এবং আমার মনে হয়, এটা আসলে লজ্জাজনক।”
“তারা জানে, যদি মেলবোর্নের পাশেই বা সিডনির পাশেই এমন ভয়াবহ হামলা হতো, তবে তারা কী করত। আমি মনে করি, আপনারা অন্তত আমরা যা করছি, তা-ই করতেন।”
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। যদিও নেতানিয়াহুর দাবি, এটিই যুদ্ধ শেষ করার ‘সেরা উপায়’।
গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাদের আশা ছিল, এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি উৎসাহিত করবে।
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের মর্যাদা একটি ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে। এই মর্যাদায় জাতিসংঘের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যায় কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায় না।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ফ ল স ত ন র ষ ট রক র জন য য ক তর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
‘গণহত্যার বিচার না হলে আবারও ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে’
শহীদদের হত্যার বিচার না হলে পরবর্তী সময়ে নতুন সরকারকেও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ সরকার আসলে বুঝতে পারেনি—পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী। ‘জুলাই জাগরণী’ সমাবেশে কথাগুলো বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সারা দেশে জুলাই গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবি সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সমাপনী সমাবেশ ‘জুলাই জাগরণী’ আয়োজন করা হয়।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত হয় এ সমাবেশ। এতে উপস্থিত হন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নানা ধরনের বিপদে আছে। আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে এক বছর পরও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবার অবহেলিত হচ্ছে। অথচ সরকারের দায়িত্ব ছিল পরিবারগুলোর যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।
যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া। —শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবাআনু মুহাম্মদ বলেন, যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেখানে ত্রুটি থাকছে। সরাসরি যাঁরা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এ সরকার আসার পর দেশ থেকে পালিয়েছেন। পাইকারি মামলা করায় মামলা আরও দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবায়িত হয়নি।
সমাবেশে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া।’
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। অথচ সরকারের সেদিকে (ফ্যাসিবাদের অবসান) যাত্রা দেখছি না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী দীপা মজুমদার বলেন, আন্দোলনে নিহত শ্রমিক ও নারীদের খবর রাখা হয় না। বিচারপ্রক্রিয়ার ভেতরে রয়েছে ফাঁক। তিনি আরও বলেন, যতবার ফ্যাসিবাদ আসবে, ততবারই এ দেশের মানুষ জেগে উঠবে। প্রয়োজনে প্রাণ দেবে।
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু এখন নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারী নিপীড়ন চলছে। নারীদের যথাযথ সুযোগ ও মর্যাদা না দিয়ে বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ সম্ভব নয়।’
আলোচনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে। শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ একক সংগীত পরিবেশন করেন কয়েকজন শিল্পী।
শহীদদের বাবা–মায়ের হাতে স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান।
আয়োজনের শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান...’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন।