গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় দেশে–বিদেশে কাউকে পাশে না পেয়েও কেন অনড় নেতানিয়াহু
Published: 11th, August 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের দুই বছর হতে আর দুই মাসের কম সময় বাকি। আর এমন সময় গাজায় সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত করতে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় একটি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবটি হলো—গাজা উপত্যকার গাজা সিটির দখল নেওয়া। পরিকল্পনাটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিজেরই তৈরি করা। তিনিই এটি উত্থাপন করেছেন। পরিকল্পনাটি যতটা না সামরিক কৌশল, তার চেয়ে বেশি নেতানিয়াহুর নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জোরদারের প্রচেষ্টাটা।
প্রস্তাবটি নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্ব ব্যাপক আপত্তি জানিয়েছিল। এ নিয়ে সতর্কও করা হয়েছিল। এরপরও পরিকল্পনাটি অনুমোদন করা হয়েছে। সামরিক নেতৃত্ব বলেছিল, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে গাজায় মানবিক সংকট আরও বাড়বে এবং সেখানে থাকা ৫০ জিম্মির জীবন বিপন্ন হবে।
অনেক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের বেশির ভাগ মানুষ চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা হোক। তবে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তটি সেনা বা সাধারণ মানুষের মতের সঙ্গে মিলছে না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখাটাই এখন নেতানিয়াহুর মূল চিন্তা ।সামরিক অভিযান বিস্তৃত করার পরিকল্পনাটি এমন সময়ে করা হয়েছে, যখন কিনা বিশ্বে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে গেছে। এমনকি গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি জনগণের সমর্থনও কমে গেছে।
তবু নেতানিয়াহু তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে তাঁর অন্ততপক্ষে একটি হলেও রাজনৈতিক ফায়দা হবে। সেটি হলো, এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করার সময় পাবেন। তাঁর কট্টর ডানপন্থী জোটের সঙ্গীরাও চান যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হোক।
নেতানিয়াহুর মিত্র আরও দুই উগ্রবাদী ইহুদি নেতা ইতামার বেন গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচ একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন যে যুদ্ধ বন্ধ হলে তাঁরা জোট সরকার ভেঙে দেবেন। আর এই হুমকির মধ্য দিয়ে তাঁরা বারবারই যুদ্ধবিরতি আলোচনার অগ্রগতি আটকে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু এমন একটি পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিচ্ছেন, যা কারোরই মনই জোগাতে পারছে না। একদিকে যেমন বিদেশে ইসরায়েলের মিত্র, দেশের সামরিক নেতৃত্ব, যুদ্ধ থামাতে চাওয়া সাধারণ মানুষ—কারোরই সমর্থন পাচ্ছে না এটি; অপর দিকে নেতানিয়াহুর জোটের কট্টরপন্থী নেতারাও এই পরিকল্পনা নিয়ে অখুশি। তাঁরা মনে করছেন, পরিকল্পনাটি যথেষ্ট নয়।বেন গভির এবং স্মোট্রিচ যা চান, সে তুলনায় নেতানিয়াহুর গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনাটি কমই বলা চলে। কারণ, বেন গভির ও স্মোট্রিচ চান প্রথম ধাপে পুরো গাজা উপত্যকা দখল করে সেখানে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করতে। আর শেষ পর্যন্ত তাঁরা পুরো ভূখণ্ডটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে চান। বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু নিজেও যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে তুলনায়ও তাঁর নতুন পরিকল্পনার পরিসর ছোট।
গত বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তিনি এমনভাবে বলছিলেন, যেন অঞ্চলটি পুরোপুরি দখলের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন।
তবে ইসরায়েলের নেতা এখন ধাপে ধাপে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছেন। প্রথম ধাপের লক্ষ্য হলো, শুধু গাজা সিটির দখল নেওয়া। কাছাকাছি থাকা অন্যান্য শিবিরের দখল এখনই নেওয়া হবে না।
ধারণা করা হয়, ওই শিবিরগুলোতে ২০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। নেতানিয়াহু খুব সচেতনভাবে অভিযান শুরুর জন্য দুই মাসের ঢিলেঢালা একটি সময়সীমা দিয়েছেন। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক চেষ্টার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। পুরো পরিকল্পনা বাতিল করারও সুযোগ আছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন ত ক র র জন
এছাড়াও পড়ুন:
ফায়ারফক্সে আসছে এআই উইন্ডো
কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা এআইকেন্দ্রিক ব্রাউজারের বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই ফায়ারফক্সে নতুন এআই উইন্ডো নামের বিশেষ সুবিধা যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মজিলা। সুবিধাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় প্রয়োজন অনুসারে একটি সমন্বিত এআই সহকারীর সাহায্য নিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াই থাকবে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে।
এক ব্লগ বার্তায় মজিলা জানায়, এআই উইন্ডো ব্রাউজিংয়ে ক্ষেত্রে এআই নির্দেশনা ও ব্যক্তিগত সহায়তার সুবিধা দেবে। সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকবে না। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা চাইলে নিজে থেকেই চালু করবেন। যেকোনো সময় বন্ধ করা যাবে। এআইনির্ভর এই সুবিধা ওপেন সোর্স প্রযুক্তির ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে।
ফিচারটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ কিছু ব্যবহারকারীর কাছে উপলব্ধ হয়েছে। মজিলা জানিয়েছে, যে কেউ চাইলে আগের মতোই ফায়ারফক্স ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা পাবেন। আরও বেশি গোপনীয়তা চাইলে প্রাইভেট উইন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন। এআই উইন্ডো ব্রাউজিংকে আরও ব্যক্তিগত উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ দেবে।
এআই চালিত ব্রাউজারের ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি এখন সার্চবারের জায়গায় চ্যাটবট যুক্ত করা বা সম্পূর্ণ এআইনির্ভর ব্রাউজার তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস বা পারপ্লেক্সিটির কমেট পুরোপুরি এআই এজেন্টকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলনির্ভর ব্রাউজারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও ভিন্ন অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে মজিলা। তারা বলছে, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা—এই তিন নীতি সামনে রেখে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দেওয়া হচ্ছে। ওয়েবকে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে চায় মজিলা। মজিলার ভাষ্য অনুযায়ী, ফায়ারফক্সে কোনো একক ইকোসিস্টেমে ব্যবহারকারীকে আটকে রাখা হবে না। এআই ব্যবহারের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। কখন, কীভাবে বা আদৌ এটি ব্যবহার করবেন কি না, এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর।
এ বছরের জুনে ফায়ারফক্সের অ্যাড্রেসবারে থাকা ইউনিফায়েড সার্চ সুবিধায় সরাসরি পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানের অপশন যুক্ত করে মজিলা। নতুন এআই উইন্ডো ফিচার যুক্ত হলে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস