পিতামাতার জন্য ৩টি সুন্দর দোয়া
Published: 11th, August 2025 GMT
পিতামাতার জন্য দোয়া করা ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি অপূর্ব উপায়। ইসলামে পিতামাতার প্রতি সম্মান ও দয়া প্রদর্শনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখিত হয়েছে। কোরআন থেকে এখানে পিতামাতার জন্য ৩টি সুন্দর দোয়া তুলে ধরা হলো।
ইসলামে পিতামাতার মর্যাদাকোরআনে বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের নিপীড়ন থেকে মুক্তির পর একটি উন্নত জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে পিতামাতার প্রতি দয়া অন্তর্ভুক্ত: ‘আর স্মরণ করো, যখন আমি বনি ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না; পিতামাতা, আত্মীয়, এতিম ও দরিদ্রদের প্রতি দয়া করবে; মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলবে; নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে।’ কিন্তু তোমাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং উপেক্ষা করেছিল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮৩)
পিতামাতা আমাদের জন্মদাতা। আমাদের দুর্বল সময়ে তারা যত্ন নিয়েছেন। তাঁদের জন্য দোয়া করা কেবল কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের ইমানের প্রকাশ।আল্লাহর বাণী কখনো এলোমেলো নয়। পিতামাতার প্রতি দয়া করার নির্দেশ ইবাদতের পরই উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের প্রতি দায়িত্বের গুরুত্ব নির্দেশ করে। এটি আমাদের মুক্তির পথে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে।
আরও পড়ুনমা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার কয়েকটি আয়াত ও হাদিস১৪ জুলাই ২০২৫পিতামাতার প্রতি অসীম ধৈর্যপিতামাতা আমাদের লালন-পালনে অসীম ধৈর্য প্রদর্শন করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার পিতামাতার প্রতি দয়াশীল হও। যদি তাঁদের একজন বা উভয়ে তোমার সঙ্গে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান, তবে তাঁদের প্রতি বিরক্তির কোনো কথা বলো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
এই আয়াত আমাদের পিতামাতার প্রতি ধৈর্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। রাসুল (সা.
পিতামাতাকে খুশি করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম।
পিতামাতার জন্য ৩টি সুন্দর দোয়ানিচে পিতামাতার জন্য কিছু কোরআন ও হাদিসভিত্তিক দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা আমরা নিয়মিত পড়তে পারি।
১. পিতামাতার জন্য ক্ষমার দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানাগফির লি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনদের ক্ষমা করো, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১)
প্রভুর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রভুর অসন্তুষ্টি পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৮৯৯প্রায় একই রকম আরেকটি দোয়া আছে।
উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনান ওয়ালিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়ালা তাযিদিজ জালিমীনা ইল্লা তাবারা।
অর্থ: হে প্রভু! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং যে আমার ঘরে মুমিন হিসেবে প্রবেশ করে তাকে ক্ষমা করো। মুমিন পুরুষ ও নারীদের ক্ষমা করো এবং অত্যাচারীদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছু বাড়িয়ো না। (সুরা নুহ, আয়াত: ২৮)
আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫২. পিতামাতার জন্য রহমতের দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা।
অর্থ: হে আমার প্রভু! তাঁদের প্রতি রহম করো, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন। (সুরা ইসরা, আয়াত: ২৪)
৩. পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতার জন্য দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বি আওযি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়্যা ওয়া ‘আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ‘মালা সালিহান তারদাহু ওয়া আদখিলনী বিরাহমাতিকা ফী ‘ইবাদিকাস সালিহীন।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে অনুপ্রাণিত করো যেন আমি তোমার নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হই, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দিয়েছ এবং যেন আমি এমন সৎকর্ম করি, যা তোমাকে খুশি করে। তোমার রহমতে আমাকে তোমার নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল করো। (সুরা নামল, আয়াত: ১৯)
পিতামাতার জন্য দোয়ার গুরুত্বপিতামাতা আমাদের জন্মদাতা এবং লালন-পালনকারী। তাঁরা আমাদের দুর্বল সময়ে আমাদের যত্ন নিয়েছেন। তাঁদের জন্য দোয়া করা কেবল তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং আল্লাহর কাছে আমাদের ইমানের প্রকাশ। এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়া আমাদের পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে এবং আল্লাহর রহমতের পথ খুলে দেয়।
ইসলামে পিতামাতার মর্যাদা অনেক বেশি। কোরআন ও হাদিসে তাঁদের প্রতি দয়া, ধৈর্য ও সেবার গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। পিতামাতার জন্য দোয়া করা আমাদের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা এবং ইমানের প্রকাশ।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন২০ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ত ম ত র জন য ত র জন য দ য র অসন ত ষ ট প রক শ আম দ র স ন দর আম র প দ র জন উল ল খ আল ল হ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
সুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত
সুরা আর-রহমান কোরআনের ৫৫তম সুরা। মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে একে মাদানি সুরা বলা হয়। এতে ৭৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা আল্লাহর অসীম রহমত, তাঁর সৃষ্টির মহিমা এবং মানুষ ও জিনের প্রতি তাঁর অগণিত নিয়ামতের কথা তুলে ধরেছে।
এতে মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং তাঁর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির বারবার পুনরাবৃত্ত আয়াত ‘ফাবিআইয়ি আলাই রাব্বিকুমা তুকাজজিবান’ (তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?) মানুষের অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে।
সুরা আর-রহমানের প্রথম কয়েকটি আয়াত: ১. আর-রহমান, ২. আল্লামাল কোরআন, ৩. খালাকাল ইনসান, ৪. আল্লামাহুল বায়ান ও ৫. আশ-শামসু ওয়াল কামারু বিহুসবান।
এর অর্থ: পরম করুণাময়। তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁকে বাক্শক্তি শিখিয়েছেন। সূর্য ও চাঁদ নির্দিষ্ট গণনা অনুসারে চলে।
সুরা আর-রহমানের সারকথাসুরা আর-রহমানে আল্লাহর অসীম করুণা ও তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়কর সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। এতে মানুষ ও জিনকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির মূল বিষয়বস্তু নিম্নরূপ—
আল্লাহর নিয়ামত: সুরাতে রয়েছে কোরআন শিক্ষা, মানুষের সৃষ্টি, বাক্শক্তি, সূর্য-চাঁদের নিয়মিত চলাচল, প্রকৃতির ভারসাম্য, সমুদ্র, ফল-ফসল, জান্নাতের সৌন্দর্য ইত্যাদিসহ আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের কথা।
কৃতজ্ঞতার আহ্বান: ‘তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ আয়াতটি ৩১ বার পুনরাবৃত্তি করে মানুষকে আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করা হয়েছে।
জান্নাত ও জাহান্নাম: সুরাতে জান্নাতের দুটি বাগান ও এদের সৌন্দর্য এবং জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা আছে, যা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে ও পাপ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ দেয়।
আল্লাহর মহিমা: সুরাতে আল্লাহর মহত্ত্ব, ক্ষমতা এবং করুণার কথা বর্ণিত হয়েছে, যেমন ‘তাঁর মুখ ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল।’
(আয়াত ২৬-২৭) (তাফসির মা’আরিফুল কোরআন, মুফতি শফি উসমানী, পৃষ্ঠা: ৬/৩৪৫-৩৫৫, মাকতাবাতুল আশরাফ: ২০১০)
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুরা আর-রহমানের শিক্ষাসুরা আর-রহমান মানুষকে নিম্নলিখিত শিক্ষা দেয়:
আল্লাহর রহমত: আল্লাহর করুণা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে এবং তিনি মানুষ ও জিনের জন্য অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন।
কৃতজ্ঞতা: মানুষের উচিত আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তাঁর ইবাদত করা।
আখিরাতের স্মরণ: জান্নাতের সৌন্দর্য ও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে উৎসাহ দেয়।
ভারসাম্য: প্রকৃতি ও সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর নির্ধারিত ভারসাম্য মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।
সুরা আর-রহমানের ফজিলতসুরা আর-রহমানের ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সুরা আর-রহমান পড়ে মানুষ যদি আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে তা তার জন্য উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩১৬৪)
এই সুরা মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভয় জাগায় এবং তাঁর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করে।
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের ফজিলত৩০ জুন ২০২৫পাঠ নির্দেশিকাসুরা আর-রহমানের পাঠ ও এর বাণী আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে কিছু ব্যবহারিক প্রয়োগ দেওয়া হলো:
নিয়মিত পাঠ: সুরা আর-রহমান প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি মানসিক শান্তি দেয় এবং আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ায়।
প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি: এই সুরা পড়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, যেমন সূর্য-চাঁদ, সমুদ্র, গাছপালার প্রতি আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা উপলব্ধি করতে পারি।
কৃতজ্ঞতার অভ্যাস: প্রতিদিন সুরাটির বাণী স্মরণ করে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য, পরিবার ইত্যাদি নিয়ামতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
শিক্ষাদান: পরিবারের অন্য সদস্যদের এই সুরা মুখস্থ করানো এবং এর অর্থ বোঝানো, যাতে তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা শিখতে পারে।
সুরা আর-রহমান অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুরা। এই সুরা নিয়মিত পাঠ পড়া ও এর বাণী অনুসরণ আমাদের জীবনে মানসিক শান্তি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪