পিতামাতার জন্য দোয়া করা ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি অপূর্ব উপায়। ইসলামে পিতামাতার প্রতি সম্মান ও দয়া প্রদর্শনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখিত হয়েছে। কোরআন থেকে এখানে পিতামাতার জন্য ৩টি সুন্দর দোয়া তুলে ধরা হলো।

ইসলামে পিতামাতার মর্যাদা

কোরআনে বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের নিপীড়ন থেকে মুক্তির পর একটি উন্নত জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে পিতামাতার প্রতি দয়া অন্তর্ভুক্ত: ‘আর স্মরণ করো, যখন আমি বনি ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না; পিতামাতা, আত্মীয়, এতিম ও দরিদ্রদের প্রতি দয়া করবে; মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলবে; নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে।’ কিন্তু তোমাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং উপেক্ষা করেছিল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮৩)

পিতামাতা আমাদের জন্মদাতা। আমাদের দুর্বল সময়ে তারা যত্ন নিয়েছেন। তাঁদের জন্য দোয়া করা কেবল কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের ইমানের প্রকাশ।

আল্লাহর বাণী কখনো এলোমেলো নয়। পিতামাতার প্রতি দয়া করার নির্দেশ ইবাদতের পরই উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের প্রতি দায়িত্বের গুরুত্ব নির্দেশ করে। এটি আমাদের মুক্তির পথে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে।

আরও পড়ুনমা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার কয়েকটি আয়াত ও হাদিস১৪ জুলাই ২০২৫পিতামাতার প্রতি অসীম ধৈর্য

পিতামাতা আমাদের লালন-পালনে অসীম ধৈর্য প্রদর্শন করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার পিতামাতার প্রতি দয়াশীল হও। যদি তাঁদের একজন বা উভয়ে তোমার সঙ্গে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান, তবে তাঁদের প্রতি বিরক্তির কোনো কথা বলো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)

এই আয়াত আমাদের পিতামাতার প্রতি ধৈর্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। রাসুল (সা.

) বলেছেন, ‘প্রভুর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রভুর অসন্তুষ্টি পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮৯৯)

পিতামাতাকে খুশি করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম।

পিতামাতার জন্য ৩টি সুন্দর দোয়া

নিচে পিতামাতার জন্য কিছু কোরআন ও হাদিসভিত্তিক দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা আমরা নিয়মিত পড়তে পারি।

১. পিতামাতার জন্য ক্ষমার দোয়া

উচ্চারণ: রাব্বানাগফির লি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।

অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনদের ক্ষমা করো, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১)

প্রভুর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রভুর অসন্তুষ্টি পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৮৯৯

প্রায় একই রকম আরেকটি দোয়া আছে।

উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনান ওয়ালিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়ালা তাযিদিজ জালিমীনা ইল্লা তাবারা।

অর্থ: হে প্রভু! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং যে আমার ঘরে মুমিন হিসেবে প্রবেশ করে তাকে ক্ষমা করো। মুমিন পুরুষ ও নারীদের ক্ষমা করো এবং অত্যাচারীদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছু বাড়িয়ো না। (সুরা নুহ, আয়াত: ২৮)

আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫

২. পিতামাতার জন্য রহমতের দোয়া

উচ্চারণ: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা।

অর্থ: হে আমার প্রভু! তাঁদের প্রতি রহম করো, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন। (সুরা ইসরা, আয়াত: ২৪)

৩. পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতার জন্য দোয়া

উচ্চারণ: রাব্বি আওযি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়্যা ওয়া ‘আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ‘মালা সালিহান তারদাহু ওয়া আদখিলনী বিরাহমাতিকা ফী ‘ইবাদিকাস সালিহীন।

অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে অনুপ্রাণিত করো যেন আমি তোমার নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হই, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দিয়েছ এবং যেন আমি এমন সৎকর্ম করি, যা তোমাকে খুশি করে। তোমার রহমতে আমাকে তোমার নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল করো। (সুরা নামল, আয়াত: ১৯)

পিতামাতার জন্য দোয়ার গুরুত্ব

পিতামাতা আমাদের জন্মদাতা এবং লালন-পালনকারী। তাঁরা আমাদের দুর্বল সময়ে আমাদের যত্ন নিয়েছেন। তাঁদের জন্য দোয়া করা কেবল তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং আল্লাহর কাছে আমাদের ইমানের প্রকাশ। এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়া আমাদের পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে এবং আল্লাহর রহমতের পথ খুলে দেয়।

ইসলামে পিতামাতার মর্যাদা অনেক বেশি। কোরআন ও হাদিসে তাঁদের প্রতি দয়া, ধৈর্য ও সেবার গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। পিতামাতার জন্য দোয়া করা আমাদের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা এবং ইমানের প্রকাশ।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন২০ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ত ম ত র জন য ত র জন য দ য র অসন ত ষ ট প রক শ আম দ র স ন দর আম র প দ র জন উল ল খ আল ল হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”

সুরা মুহাম্মাদ আমাদেরকে এক অলৌকিক যাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে দুনিয়ার মায়াজাল থেকে শুরু করে আখিরাতের সত্যতা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে আল্লাহর অসীম রহমতের ছায়া। এই সুরার শেষ আয়াতগুলো (৩৬-৩৮) একটি বিশেষ নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে: “আল্লাহ ধনী এবং তোমরা দরিদ্র”।

এটা জীবনের এক গভীর দর্শন।

সুরা মুহাম্মাদ মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসলিমরা হুদায়বিয়ার সন্ধির পরের দিনগুলো পার করছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে যে, সুরা ফাতহের পর এই সুরা ‘কারে আল-গামিম’ (মক্কার কাছে এক স্থান) নামক স্থাকে অবতীর্ণ হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪১৭২)

এই সুরা মুসলিমদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিজয়ের পরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, কারণ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। ইমাম আলুসি বলেছেন, এই সুরা মুনাফিকদের সন্দেহ দূর করে এবং মুমিনদের ইমান বৃদ্ধি করে। (ইমাম আলুসী, রুহুল মা'আনি ফিত তাফসিরিল কুরআনিল আজিম, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি., খণ্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ১২৩)

প্রথম: দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক

আয়াতগুলো দুনিয়ার স্বরূপ বর্ণনা করে একটা ধাক্কা দিয়ে শুরু হয়: “নিশ্চয় দুনিয়ার জীবন কেবল ক্রীড়া ও কৌতুক।” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৬)

এই বর্ণনা দুনিয়াকে অবজ্ঞা করে না, বরং এর ক্ষণস্থায়িত্ব দেখিয়ে দেয়। দুনিয়া যেন শিশুদের খেলা—আনন্দময় কিন্তু অস্থায়ী। এর মোহে মত্ত হয়ে যাওয়া মানে আমাদের দায়িত্ব ভুলে যাওয়া। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বা দানের ক্ষেত্রে, যখন মানুষ অর্থের জন্য পিছিয়ে যায়।

এই বর্ণনা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়া সৌন্দর্যের জন্য নয়, আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য। এক কবি বলেছেন, “যুবকের জীবনপ্রিয়তা তাকে অপমানিত করে... যদিও তার মধ্যে সাহস ও মর্যাদা থাকে”।

দুনিয়ার মায়ায় আটকে থাকলে আমরা শত্রুর সামনে দুর্বল হয়ে পড়ি। কিন্তু সত্যিকারের জীবন আখিরাতে, যেখানে আমাদের কাজের ফল পাব। এই শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য—দান করলে দুনিয়ার মোহ কমে, আখিরাতের দিকে হৃদয় ঝুঁকে যায়।

আরও পড়ুনব্যস্ত জীবনেও কোরআন খতমের কার্যকর কৌশল০৩ আগস্ট ২০২৫দ্বিতীয়: ইমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর পুরস্কার

দুনিয়ার স্বরূপ বর্ণনার পর আসে উপায়: “আর যদি তোমরা ইমান আন এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পুরস্কার দান করবেন।” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৬)

এখানে আগের আয়াতের নিষেধের (তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং সন্ধির আহ্বান করে বসো না, যখন তোমরাই প্রবল) সঙ্গে যুক্তি দেয়া হয়েছে যে ইমান ও তাকওয়া দুনিয়ার দুর্বলতা দূর করে এবং আল্লাহর পুরস্কার নিশ্চিত করে।

খ্যাতিমান তাফসিরকারক ইবনে আশুর বলেছেন, সন্ধির আহ্বান করার পিছনে অর্থের ভালোবাসা থাকতে পারে, কিন্তু ইমান ও তাকওয়া এই দুর্বলতা দূর করে দেয়। দরিদ্রকে দান করার মূলেও রয়েছে তাকওয়া অবলম্বন করা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা। (মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবনে আশুর, আত-তাহরির ওয়াত তানওয়ির, আদ-দারুত তুনুসিয়া, তিউনিস, ১৯৮৪ হি., খণ্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ১২৩)

ইমান ছাড়া সকল কাজ অসম্পূর্ণ; তাকওয়া ছাড়া দান হৃদয়কে পরিষ্কার করে না। এই দুটি মিলে দানকে ইবাদত করে তোলে, যা আল্লাহর কাছে মর্যাদা বাড়ায়।

হাদিবিয়ার চুক্তির পর মুসলিমরা হতাশ হয়েছিলেন, কিন্তু ইমান ও তাকওয়ায় তারা অটল রয়েছিলেন। ফলে মক্কা বিজয় হয়েছে। তেমনি দান-সদকা যদি একনিষ্ঠ ইমানের সঙ্গে করা হয়, তাহলে তাতে সম্পদের ক্ষতি হয় না, বরং আখেরে লাভ হয়।

তৃতীয়: আল্লাহ তোমাদের সম্পদ চান না

আল্লাহর রহমতের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত এই আয়াতে: “আর তিনি তোমাদের সম্পদ চান না। যদি তিনি চাইতেন, তাহলে তোমাদের চাপ দিতেন তাহলে তোমরা কৃপণতা করতে আর তাতে তিনি তোমাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দিতেন।” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৬-৩৭)

আল্লাহ জানেন মানুষের অর্থের প্রতি আকর্ষণ। তাই তিনি সবকিছু দাবি করেন না, বরং সামান্য অংশ (জাকাত, সাদাকা) চান।

কাতাদা বলেছেন, “আল্লাহ জানেন যে, অর্থ বের করলে হৃদয় থেকে গোপন বিদ্বেষ বের হয়ে যায়।” (ইমাম ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম, দারু তাইবা, রিয়াদ, ১৯৯৯ খ্রি., খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৮৩)

ইবনে আশুর বলেছেন, এটি ফিতনার পথ বন্ধ করার মূল। (মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবনে আশুর, আত-তাহরির ওয়াত তানওয়ির, আদ-দারুত তুনুসিয়া, তুনিস, ১৯৮৪ হি., খণ্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ১৩৪)

মদিনায় নবীজির সময় মুসলিমরা নবীজির অনুসরণ করে অর্থ দান করেছিলেন, কিন্তু মুনাফিকরা সন্দেহ করত। আল্লাহ তাদের অবস্থা বিবেচনা করে অল্প দাবি করেছেন। এই রহমত দেখিয়ে দানকে সহজ করে।

একজন দরিদ্র সাহাবী অল্প অর্থ দান করলেন, নবীজি (সা.) বললেন, “আল্লাহ তোমার মতো দরিদ্রের অল্প দানকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, কারণ এটি সত্যিকারের ত্যাগ”।

আরও পড়ুনযে দানে ত্যাগের অনুভূতি হয়, সেটিই প্রকৃত দান১১ ডিসেম্বর ২০২৪চতুর্থ: দানকারীই প্রথম লাভবান হয়

আয়াতগুলো মুমিনদের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানায়: “তোমাদেরকে আহ্বান করা হচ্ছে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করতে। তোমাদের মধ্যে কেউ কৃপণতা করে, আর যে কৃপণতা করে সে তার নিজের প্রত কৃপণতা করে।” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮)

এখানে আহ্বান দুই রকম: বাধ্যতামূলক (জাকাত) এবং উৎসাহমূলক (সাদাকা)। কার্পণ্যকারী নিজের প্রতিই কার্পণ্য করে, কারণ দানের লাভ তারই হয়।

ইবনে আশুর বলেছেন, কৃপণের সম্পদ শত্রুর হাতে পড়ে বা সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। (মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবনে আশুর, আত-তাহরির ওয়াত তানওয়ির, আদ-দারুত তুনুসিয়া, তিউনিস, ১৯৮৪ হি., খণ্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ১৪৫)

পঞ্চম: “আল্লাহ ধনী এবং তোমরা দরিদ্র”

আল্লাহর ধন অসীম, আমাদের দারিদ্র্য সীমাবদ্ধ। ইবনে আশুর বলেছেন, আল্লাহের ধনাঢ্যতা সর্বব্যাপী ও চিরস্থায়ী, আমাদের দারিদ্র্য তাঁর সামনে সীমিত। (মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবনে আশুর, আত-তাহরির ওয়াত তানওয়ির, আদ-দারুত তুনুসিয়া, তিউনিস, ১৯৮৪ হি., খণ্ড: ২৪, পৃষ্ঠা: ১৫৬)

আল্লাহর আমাদের প্রয়োজন নেই, তাঁর দান আমাদের জন্যই। এই সত্যতা বুঝলে আমরা অহংকার থেকে মুক্ত হতে পারব। দান করলে আল্লাহর কাছে আমাদের হৃদয় ঐশ্বর্যবান হয়ে যায়।

ষষ্ঠ: সবিশেষ সতর্কতা

সুরা শেষ হয় সতর্কতায়: “আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক সম্প্রদায়কে আনবেন, যারা তারপর তোমাদের মতো হবে না।” (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮)

ইসলাম ধারণকারীরা যদি ক্ষমতাহীন হয়, আল্লাহ অন্যকে বেছে নেবেন। নবীজি (সা.) এই আয়াত তিলাওয়াত করে সালমান ফারসী (রা.)-এর কাঁধে হাত রেখে বলেছেন, “যে জাতিই এমন হবে, তার জন্যই এই নিয়ম।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৮৬)।

এই সুন্নাহ আমাদেরকে সতর্ক করে যে, দান ও ত্যাগের দায়িত্ব পালন না করলে আমরা হারিয়ে যেতে পারি।

সুরা মুহাম্মাদের এই আয়াতগুলো আমাদেরকে শেখায় যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, ইমান ও তাকওয়া তার মোহ থেকে মুক্ত করে, আল্লাহর রহমত দানকে সহজ করে, দানের লাভ দাতারই এবং আল্লাহ ধনী—আমরা তাঁর কাছে দরিদ্র।

এই শিক্ষা আজকের দুনিয়ায় বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে লোভ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা বাড়ছে। দান করে আমরা নিজেকে সমৃদ্ধ করি এবং সমাজকে একত্রিত করি। আল্লাহ আমাদেরকে এই পথে চলার তাওফিক দিন। আমীন।

আরও পড়ুনআল-আজিজ, যিনি ইজ্জত দান করেন২০ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • “আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”