নাইকন ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘চর কুকরি-মুকরি ও ঢালচরের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ অভিযান’-এ অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ পেলাম। বহুদিনের ইচ্ছা ছিল, বঙ্গোপসাগরের এই চরগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করার। কাজেই ইমেজ ফাইন্ডারের কর্ণধার ও নাইকন ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশের অ্যাডমিন মাইন আহমেদ ভাইয়ের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে কার্পণ্য করলাম না।
ঢাকা থেকে এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের লঞ্চে রওনা হয়ে পরদিন ভোরে ভোলার ইলিশা ঘাট। সেখান থেকে দুই ঘণ্টার অটোরিকশা ভ্রমণে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন হয়ে ৭২ কিলোমিটার দূরের বেতুয়া ঘাট। এরপর অটোতে কচ্ছপিয়া ঘাট এবং সর্বশেষ দুই ঘণ্টা ট্রলারভ্রমণে ঢালচর। পুরো এক দিন ঢালচরের তারুয়া সৈকতের প্রকৃতি অবগাহন করে পরদিন দুপুরে ট্রলারে চাপলাম চর কুকরি-মুকরির উদ্দেশে।
ট্রলার ছুটে চলল বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে। ১৫–২০ মিনিট পর দূর আকাশে বিহঙ্গের আনাগোনা দেখা গেল। কিছু পাখি উড়ে অন্যদিকে চলে গেলেও বেশির ভাগই পানিতে নেমে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ট্রলার কাছাকাছি আসতেই ওদের প্রজাতি শনাক্ত করলাম—বদরকৈতর বা বাদামি–মাথা গাঙচিল। প্রায় ৪০ মিনিট চলার পর কুকরি-মুকরির ওয়াচ টাওয়ারের দেখা মিলল। টাওয়ারের কাছাকাছি আসতেই পাড়ে একঝাঁক জলচর পাখি দেখা গেল, যেখানে ছিল কালোমাথা কাস্তেচরা ১৪টি, বড় সাদা বক ২২টি ও কানিবক ১৮টি। ঠিক এক ঘণ্টায় চর কুকরি-মুকরির নারকেলবাগান ঘাটে পৌঁছালাম। কিছুটা পথ হেঁটে এসে টংদোকানে ডাবের পানি ও শাঁস এবং চা-বিস্কুট খেলাম। ক্যাম্পসাইট প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। ট্যুর অপারেটর দলবলসহ তাঁবু টানাতে চলে গেলেন। আমরা কজন রয়ে গেলাম নারকেলবাগানে। সৈকতে অল্প কটি গো-শালিকসহ ঝুঁটিশালিকের বিশাল একটি ঝাঁক ছিল। অলসভাবে ওদের ছবি তুললাম।
শিকারের অপেক্ষায় সবুজাভ মাছরাঙা।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম কর র
এছাড়াও পড়ুন:
মহালছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, ৩২ হাজার মানুষের ভোগান্তি
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী মহালছড়ির মুবাছড়ি ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার করল্যাছড়ি, সেলোন্যা, সাবেক্ষংসহ ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ।
মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট্ট সেতুটিই উপজেলা সদরের সাথে একটি পুরো ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার পাশাপাশি এর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ধসে মাটি সরে গেছে। এতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি।
চলাচলের জন্য এ এলাকায় একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করেছে এলজিইডি। তবে কাপ্তাই লেকের পানিতে সেটি ডুবে গেছে। বর্তমানে এই সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। তবে কোনো পণ্য বহন করতে পারছেন না। অথচ এই সেতু দিয়েই প্রায় ৩২ হাজার মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়।
করল্যাছড়ি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক কুন্ডল চাকমা, সিঙ্গিনালা মেশিন পাড়া নিবাসী বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুগত চাকমা ও মনাটকে গ্রামের বাসিন্দা ভবদত্ত চাকমা জানান, এই সেতুটি ছোট হলেও জন গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের দুই পাশের ধারক দেয়াল ধসে পড়ে মাটি সরে গেছে। এতে সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিতে পড়েছে। কোনোমতে সেতুর দুই পাশের কাঠের উপর দিয়ে চলাচলের কাজ চলছে। তবে পণ্য আনা-নেওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না।
তারা জানান, রোগী নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এলজিইডি থেকে একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করে দিয়েছে। তবে তা এখন কাপ্তাই বাঁধের পানির নিচে ডুবে রয়েছে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান তারা।
সেতুটি দীর্ঘ ৪০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে করা হয়েছিল। বিগত দুই বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ভেঙে মাটি সরে যায়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেটি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুইতি কারবারী বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে বহু লোকের আসা যাওয়া। সেতুটি নতুন করে নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”
খাগড়াছড়ির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, “পরপর দুই বছরের বন্যায় দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে সেতুটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি অনেক পুরানো সেতু। তড়িঘড়ি করে ডিজাইন করতে গিয়ে ডিজাইনে কিছু ত্রুটি ছিল। এ কারণে নতুন করে সেতু নির্মাণে দেরি হয়ে গেছে। ডিজাইন ফাইনাল হয়ে গেছে, এখন টেন্ডারে যাবে।”
ঢাকা/রূপায়ন/এস