পানির সংকটে বাড়ছে নারীর বিপন্নতা
Published: 18th, August 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির ঘাটতি বাড়ছে। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে তা প্রভাব ফেলছে। পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতন বাড়ছে। উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, হাওর ও চরে পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণে নারীকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আর এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারীর অবস্থান আরও প্রান্তিক হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি কাজের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
‘জলবায়ু পরিবর্তনে নিরাপদ পানির সংকট ও নারীর বিষণ্নতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকেরা এ কথাগুলো বলেন। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। সুইডেন সরকারের সহযোগিতায় এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের উপদেষ্টা ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে পানি পাওয়ার বিষয়টি এখনো মানবাধিকারের আওতায় পড়েনি। পানি ব্যবস্থাপনায় নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জেন্ডারের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। শুধু নারী-পুরুষ এভাবে চিন্তা করলে হবে না। শিশু, কিশোর, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি সবার কথা ভাবতে হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, পানির অভাব নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। স্ত্রীর প্রজনন অঙ্গে বিভিন্ন সংক্রমণ হওয়ায় স্বামী আরেক বিয়ে করছেন।
শাহীন আনাম বলেন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি মডেল তৈরি করতে পারে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে কাজের পরিসর বাড়ানোর জন্য। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, যথাযথ জায়গায় বাজেট বরাদ্দ, সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের কাজের মধ্যে সমন্বয় এবং নজরদারির বিষয়গুলো এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন শাহীন আনাম।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সোমা দত্ত। তিনি সুইডেন সরকারের অর্থায়নে ১৩টি জেলায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের করা একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। এ গবেষণায় গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যায়। যাতায়াত সমস্যা বাড়ে। দূর থেকে পানি সংগ্রহের সময় নারী নিরাপত্তা সংকটে ভোগে। গবেষণায় পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশুদ্ধকরণে ৯১ দশমিক ৯ ভাগ উত্তরদাতা নারীর অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯ দশমিক ৭ ভাগ পুরুষের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন। মাসিক ব্যবস্থাপনাসহ নারীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে এসেছে এ গবেষণায়।
বৈঠকের আলোচনায় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত ‘নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড) জাতীয় প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ আবদুল হাই আল মাহমুদ জানান, তাঁর প্রকল্পের অধীনে ৪৩ হাজার নারীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ হচ্ছে। এ ধরনের পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতায় জাতীয় কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়টিতে তিনি গুরুত্ব দেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের (ত্রাণ কর্মসূচি) যুগ্ম সচিব সেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পানির সংকট বাড়ছে, এসব নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইন ও নীতির অভাব নেই। এগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্থানীয় সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা দেবনাথ বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাঁর অধিদপ্তরের কাজগুলো তুলে ধরেন। পানি সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজে কিশোরীদের অংশ নিতে হচ্ছে। এতে করে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বাড়ল কি না, সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি।
ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের (জলবায়ু ও পরিবেশ) সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান পানি পাওয়ার জন্য যেসব উৎস আছে, তাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে কি না, নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় নারীরা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন কি না, নীতিগুলোর কোন কোন জায়গায় গ্যাপ বা ফারাক আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।
ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (ক্লাইমেট) ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রাইভেট সেক্টরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করার সুপারিশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে খানিকটা জেন্ডার, খানিকটা পানির বিষয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়গুলোকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। ভালো ও টেকসই প্রকল্পের নকশা করতে পারলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাওয়া সহজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এ জন্য যথাযথ তথ্য থাকা এবং নারীর বিপন্নতাসহ যে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, তার ইকোনমিক ভ্যালু অ্যাসেসমেন্ট তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. আজরীন করিম বলেন, পানিচক্র নিয়ে নারীকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। পানি নারী, পুরুষ, ধনী-দরিদ্র সবার প্রয়োজন হলেও এ কারণেই নারীকে কেন্দ্র করে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হচ্ছে। বর্তমানে বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নানান নীতি আছে। তবে এসব নীতি করার আগে যাঁদের জন্য প্রযোজ্য, তাঁদের মতামত নেওয়া হচ্ছে কি না, সরকারি-বেসরকারি কাজের মধ্যে সমন্বয় আছে কি না, প্রকল্প শেষে নারীর কণ্ঠস্বর থেমে যাচ্ছে কি না, কাজগুলো টেকসই হচ্ছে কি না, সে বিষয়গুলোতেও নজর বাড়াতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন, ইউএনএফপিএর জিবিভি ক্লাস্টার কো–অর্ডিনেটর রুমানা খান, ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার, হেলভেটাস বাংলাদেশের (ওয়াটার ফুড অ্যান্ড ক্লাইমেট) হেড অব প্রোগ্রাম মো. মাহমুদুল হাসান। বৈঠকে সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র র ব ষয়ট ব ষয়গ ল ব সরক র ব ষয়ট ত স গ রহ জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে