চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামানের গাড়িচালকের বাড়ি থেকে ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাইফুজ্জামানের বিদেশে সম্পদ অর্জন ও ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে দুদক এসব নথিপত্র জব্দ করে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে আজ রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের ফকিরা মসজিদ এলাকার তালুকদারবাড়িতে দুদকের এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও বিদেশে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। এরই অংশ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ছয়টি মামলা করেছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, ঘুষ লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে গত বুধবারও সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। মামলার সূত্র ধরে বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে উৎপল পাল ও আবদুল আজিজ নামের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাঁরা পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামানের গাড়িচালক মো.

ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নথিপত্রগুলো জব্দ করা হয়।

অভিযানে থাকা দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে শুক্রবার রাতেও ইলিয়াসের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে অভিযানের আগে তিনি এসব নথিপত্র নিজ ঘর থেকে সরিয়ে পাশের একটি ঘরে রাখেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে বিষয়টি ধরা পড়ার পর আবারও বাড়িটিতে অভিযান চালানো হয়।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে আসা দুদকের একটি দল জব্দ করা কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করছে। এরপর বিস্তারিত জানা যাবে কাগজপত্র গুলো কিসের।

দুদক ঢাকার উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা রুখমিলা জামান চৌধুরীর গাড়ির চালক মো. ইলিয়াস তালুকদারের বাড়ি থেকে ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করেছি। এগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’

মশিউর আরও বলেন, ‘আগে আমরা চারটি দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাড়ি থাকার বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছিলাম। এখন আরও পাঁচটি দেশে তাঁর বাড়ি থাকার বিষয়ে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো তথ্য জব্দ হওয়া কাগজপত্রগুলোতে রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখা হবে।’

গত বছরের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক জানায়, সাইফুজ্জামান বিদেশে অর্থ পাচার করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। এর বাইরে অবৈধভাবে দেশেও তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাইফুজ্জামান। তিনি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য দুদক বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে আবেদন করে। আবেদনটি আজ আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক গজপত র মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পাসপোর্ট-এনআইডি থাকার বিষয়ে কী বলছেন টিউলিপ, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া কী

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে ‘ভুয়া’ পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টিউলিপের এই অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়। টিউলিপের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে প্রথম আলো ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস যৌথ অনুসন্ধান করে। এই যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টিউলিপের নামে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। তিনি এখানকার ভোটার। বাংলাদেশি পাসপোর্টও করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন।

দ্য টেলিগ্রাফ যেসব নথিপত্র দেখেছে, তাতে দেখা যায়, সাবেক লেবার মন্ত্রী টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে, যা তাঁর আগের দাবির সঙ্গে মেলে না।

তবে গতকাল টিউলিপ জোর দিয়ে বলেন, তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এসব কাগজপত্র জাল করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের এই এমপির একজন মুখপাত্র দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর ধরে টিউলিপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে।

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ) টিউলিপের আইনজীবী দলের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তারা তাদের ভিত্তিহীন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি। এবার তারা এমন কাগজপত্র জাল করেছে, যা পুরোপুরি ভুয়া এবং জাল করার সব লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

টিউলিপের মুখপাত্র বলেন, এসব কাগজপত্রের সত্যতা নিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০০১ সালে ১৯ বছর বয়সে টিউলিপ বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। আর ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেয়েছিলেন।

নথিপত্র আরও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ে টিউলিপ পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন।

তবে টিউলিপের সহযোগীরা নথিপত্রে নানা ‘অসংগতি ও অনিয়ম’ তুলে ধরেছেন, যা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

যেমন নথিপত্রে টিউলিপের ঠিকানা হিসেবে ঢাকার একটি বাড়ির কথা উল্লেখ আছে, যা তাঁর খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালিকানাধীন।

টিউলিপের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জোর দিয়ে বলেছে, তিনি কোনো দিন ঢাকায় থাকেননি। টিউলিপ কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন—এটাও তাঁরা স্পষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, তিনি শুধু ছোটবেলায় একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের ‘উপহার’, লন্ডনে মিলল টিউলিপের আরও একটি ফ্ল্যাট০৫ জানুয়ারি ২০২৫যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহীতে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
  • বাংলাদেশি পাসপোর্ট-এনআইডি থাকার বিষয়ে কী বলছেন টিউলিপ, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া কী
  • ভাঙ্গায় সহিংসতার ঘটনায় এবার ২১ জনের নামে হাইওয়ে থানায় মামলা
  • পুলিশের খাতায় নাম তাঁর রাবেয়া, কারাগারে মর্তুজা