ইসরায়েলি হামলায় গাজা সিটিতে একই পরিবারের ২৫ সদস্য নিহত
Published: 22nd, September 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় গাজা সিটির সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার এ হামলা হয়।
সাবরা এলাকাটি দখল ও ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত আগস্টের শেষে ওই এলাকার দিকে ইসরায়েলি ট্যাংক অগ্রসর হতে শুরু করে। গতকাল ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে সাবরা এলাকার বেশ কিছু বাড়িতে বোমা ফেলা হয়।
হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে অন্তত ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি সেবা বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় মানুষেরা হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে জীবিত মানুষদের খুঁজছেন। ঘটনাস্থলে থাকা পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অন্তত ৫০ জন আটকা পড়ে থাকতে পারেন। ফিলিস্তিনি পরিবারটি আটকে থাকা অন্যদের উদ্ধারে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
হামলার শিকার পরিবারটির এক সদস্য বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আমাদের আত্মীয়স্বজনকে জীবিত কবর দেওয়া হয়েছে। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাঁদের আর্তচিৎকার শুনছি, কিন্তু তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না।’হামলার শিকার পরিবারটির এক সদস্য বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আমাদের আত্মীয়স্বজনকে জীবিত কবর দেওয়া হয়েছে। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাঁদের আর্তচিৎকার শুনছি, কিন্তু তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না।’
ওই সদস্যের অভিযোগ, ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালানো মানুষদের ওপর ইসরায়েলি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।
গত শনিবার বিকেল নাগাদ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার ২৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন।ওই সদস্য আরও বলেন, ‘যখনই আমরা তাঁদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি, ইসরায়েলি ড্রোন থেকে তখন আমাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাতে যাওয়া প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন মারা যাচ্ছেন আর মাত্র একজন বেঁচে ফিরতে পারছেন।’
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ছোট গাড়িতে করে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশপাশে মানুষ ভিড় করছে। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, এক মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমি আমার সব সন্তানকে হারিয়েছি।’
গত শনিবার বিকেল নাগাদ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার ২৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন।
এদিকে গাজার মধ্যাঞ্চলে বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের আলাদা এক বিমান হামলায় চার শিশুসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি ক্লিনিকের কাছে এ হামলা চালানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আম দ র পর ব র উদ ধ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র
গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি ফি নিলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে না দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহাদাত হোসেন এই অনুরোধ করেন। নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।
চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ব্যাচেলর পয়েন্ট খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে দৈনিক সৃষ্ট সব আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। বর্জ্য যাতে বাইরে পড়ে না থাকে সে জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কিন্তু নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।
নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে ২ হাজার ২০০ টন। কারণ, বাকি বর্জ্য নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। চলতি পথে গাড়ি থেকে বাইরে থেকে ফেলে দেন। তবে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালুর পর বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বায়োগ্যাস উৎপন্ন হলে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নগরবাসীকে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে তা হয়তো আর দিতে হবে না। তবে এ জন্য একটু সময় দিতে হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত, বাসা থেকে বের হতে পারত না। বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এ নিয়ে মানুষ নানা কৌতুক করতেন। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।’
আগামী এক বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নগরবাসীকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা উপহার দিতে পারেননি। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। সিটি করপোরেশনের ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ময়লা, আলো, রাস্তা, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসী তাঁদের মতামত খুব সহজে জানাতে পারবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করেছেন বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।
নগরে কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা যাতে সন্ত্রাস–মাদকের পথে না যায় সে উদ্দেশ্যে অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের টিম (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। বাইরের কিশোর–তরুণদের সঙ্গেও কাজ করবে।
মেয়র আরও বলেন, নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করবেন আরবান হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে। সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনির রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার করার ঘোষণা দেন। ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামী মাস থেকে এসব সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।