সিরাজগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। সম্প্রতি জেলায় ২৫৫ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। পরীক্ষার পর থেকে এ রোগে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি সেন্টার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য মতে, ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সিরাজগঞ্জে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। তবে এবার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ২৫৫ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যার ৭৩ শতাংশই মাদকসেবী। ২০২০ সালে চারজন, ২০২১ সালে আটজন ২০২২ সালে এই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৮১। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তুলনামূলক স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও এবার তা বেড়েছে কয়েকগুণ।

হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং সেন্টারের কাউন্সেলর মাসুদ রানা বলেন, “পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা নিষিদ্ধ নেশা জাতীয় ইনজেকশনের মাধ্যমে এই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জেলায় ২৫৫ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১৮৭ জন মাদকসেবী, সাধারণ ৩৫ জন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ২৯ জন এবং চারজন যৌনকর্মী। একবার টেস্টের পর যদি ফলাফল পজিটিভ হয়, তখন আমরা তাদেরকে এখানে আসতে বলি, কাউন্সেলিং করা হয়। এখানে মূলত আমরা আগের রিপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য রি-টেস্ট করে থাকি। সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা নিয়মিত বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পেয়ে অনেকটাই ভালো রয়েছেন।”

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.

আকিকুন নাহার বলেন, “সমাজের নিম্নআয়ের মানুষরাই বেশি ইনজেকটিভ ড্রাগ শেয়ারিং করে ব্যবহার করছেন। একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকসেবন করায় রক্তের মাধ্যমে এটা ব্যাপকভাবে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শনাক্তের সিংহভাগই মাদকসেবী। আমরা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মনোবল বাড়াতে কাউন্সেলিং করছি। তবে ইনজেকশনে ড্রাগ ব্যবহার কমাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।”

সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অবৈধ নেশা জাতীয় ইনজেকশন বেচাকেনায় জড়িতদের আটকে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দুই বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৯০০ অ্যাম্পুল ইনজেকশন ড্রাগ জব্দ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

ঢাকা/অদিত্য/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র জগঞ জ ইনজ কশন ক উন স ল ম দকস ব

এছাড়াও পড়ুন:

মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার

২০২০ সালের কথা। তখন করোনা মহামারি চলছিল। ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ। দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসে গৃহবধূ মমতাজ পারভীন মমর। ঘরে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছিল তাঁর। মাথায় আসে কিছু একটা কাজ করে সময় কাটানোর। বাজার থেকে কিছু আম আর জলপাই কিনে শুরু করেন আচার বানানো। ছোট পরিসরে এসব আচার স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রিও শুরু করেন। এরপর প্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। এতে ব্যাপক সাড়া পান। অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে এখন অনলাইনে জনপ্রিয় হয়েছে মমতাজের ‘পঞ্চমিশালি’ আচার।

মমতাজ পারভীন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের প্রধানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মমতাজ অনলাইনে নিজের তৈরি আচার বিক্রি করে পেয়েছেন সাফল্য। পাঁচ বছর ধরে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আচার বিক্রি করে আসছেন তিনি।

মমতাজ পারভীনের ভাষ্য, ভেজালমুক্ত ও মজাদার এই আচার এখন শুধু দেশেই নয়, প্রবাসীদের কাছেও ব্যাপক চাহিদার পণ্য হয়ে উঠেছে। প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর আচার পৌঁছে যাচ্ছে। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে এই আচার। এতে দিন দিন ব্যবসার পরিধি ও আয়ও বাড়ছে।

ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মমতাজ পারভীনের। কিন্তু স্নাতক শেষ না হতেই বিয়ে হয়ে যায়। তবু পড়ালেখা চালিয়ে যান। সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম আর বাচ্চা সামলানোসহ নানা কাজে একঘেয়েমি লাগা শুরু করে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় ঘরবন্দী অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণ করেন তিনি। এ সময় টেলিভিশন দেখা, ফেসবুক চালানো—কোনো কিছুই ভালো লাগত না। পরে অনলাইনে ঘরে তৈরি আচারের ব্যবসা করবেন বলে স্বামীকে জানান। প্রথম দিকে বেসরকারি চাকরিজীবী স্বামী মোর্শেদ আলম সম্মতি না দিলেও শ্বশুর-শাশুড়ির উৎসাহে আচার বানানোর কাজ শুরু করেন। নাম দিলেন ‘পঞ্চমিশালি আচার’।

মমতাজ পারভীন জানান, প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজনের কাছে আচার বিক্রি শুরু করে প্রচার চালান ফেসবুকে। এতে নানাজনের নানা কটূক্তির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাড়া পেতে থাকেন ক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের পাশাপাশি প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে অন্তত আটটি দেশে সরবরাহ হচ্ছে তাঁর আচার। এতে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন।

আচারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ ছাড়াই তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট কাঁচামালে প্রয়োজনমতো মসলা, তেল, বিট লবণ ও ভিনেগার মিশিয়ে তৈরি করা এসব আচার নির্ধারিত জারে সরবরাহ করা হয় ক্রেতাদের কাছে। রেফ্রিজারেটরে রেখে এসব আচার এক বছর পর্যন্ত খাওয়া যায় বলে জানান মমতাজ।

মমতাজের আচারের মধ্যে আছে কাঁচা আমের আচার, আমের মোরব্বা, পাকা আমের মাসালা আচার, আম-কাসুন্দি, আমের বার্মিজ আচার, আমের ঝুরি আচার, বরই আচার, বরই-তেঁতুল মিক্সড আচার, তেঁতুল আচার, জলপাই আচার, শর্ষেপাই আচার, কাঁচা মরিচের আচার, চালতার আচার, আমড়ার আচার ও কাঁঠালের আচার। প্রতি কেজি কাঁঠালের আচার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি আমলকীর আচার ৭০০ টাকা, আমসত্ত্ব ৮০০ টাকা, রসুনের আচার ৮০০ টাকা এবং গরুর মাংসের আচার ১ হাজার ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মমতাজ পারভীন বলেন, ‘আমাদের আচার একেবারে স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদে অতুলনীয়। আমি আচার তৈরি করি, যাতে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা ভেজাল থাকে না। প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে আচার বিক্রি করতাম, কিন্তু অনলাইনে যখন অর্ডার আসা শুরু করল, তখন ব্যবসা আরও বড় হয়েছে। এখন আমাদের আচার শুধু পঞ্চগড়েই নয়, দেশের নানা জায়গায় পাঠানো হয়, এমনকি বিদেশেও আমাদের পণ্য যাচ্ছে।’ ভবিষ্যতে তাঁর পণ্য আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করাই একমাত্র লক্ষ্য বলে তিনি জানান।

ঢাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী মমতাজের নিয়মিত ক্রেতা। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মমতাজ পারভীনের পঞ্চমিশালি নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই তাঁর আচারের বিষয়ে জানতে পারি। সেখান থেকেই আমি আচারের অর্ডার করি। এখন আমি পঞ্চমিশালি আচারের নিয়মিত কাস্টমার। আচার শেষ হলেই ফোন করি। হোমমেড পঞ্চমিশালি আচার আমার কাছে মানসম্মত মনে হয়েছে। এমনকি দামও হাতের নাগালে আছে।’

মমতাজ পারভীনের শ্বশুর শামসুল আলম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মমতাজের পরিশ্রমই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাতদিন পরিশ্রম করে এত যত্নসহকারে আচার তৈরি করায় তাঁর আচারের মান ভালো। প্রথম দিকে ভেবেছিলেন, গ্রামে থেকে কীভাবে অনলাইনে বিক্রি হবে? কিন্তু এখন দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যৌনকর্মীদের কাছে কনডম নেই, এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি
  • মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার