চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আকতার। থাকেন ক্যাম্পাসের শামসুন নাহার হলে। তাঁর হলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ক্যানটিনে নিম্নমানের খাবার। এসব নিয়েই তিনি কাজ করতে চান। তাই হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

ফাহমিদা আকতার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রথম আলোকে এই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। হলে যেসব সংকট রয়েছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন। এ জন্যই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ফাহমিদাসহ ৩৮৫ শিক্ষার্থী সপ্তম চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ইতিমধ্যে এই শিক্ষার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাঁদের অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কুশল বিনিময় করছেন। 

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছে কেন্দ্রীয় সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা একে বলছেন ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’। এই নির্বাচনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঢল, যা প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। 

নির্বাচনে লড়তে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিয়া ফাইরুজ হাসান। তিনি বিজয়-২৪ হল সংসদের যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তাসনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হলে আবাসনের চরম সংকট রয়েছে। একটি খাটে দুজন করে থাকতে হচ্ছে। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি এ বিষয়ে কাজ করবেন। 

স্বতন্ত্রদের আগ্রহ 

এবারের নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন। এর মধ্যে চাকসুতে জমা পড়েছে ৪২৯টি। চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ১২টি প্যানেল। এসব প্যানেলের ২৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১৭০ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৪ জন, জিএস পদে ১১ জন ও এজিএস পদে ১১ জনের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথা রয়েছে। 

অন্যদিকে ১৪টি হলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্র হলে ৩৫৬ জন ও ছাত্রী হলে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রতিটি হলে ভিপি ও জিএসসহ ১৪টি করে পদ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ছাত্রদের ৭টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

হিসাব অনুযায়ী, ৭ হলে ছাত্রশিবিরের ৯৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর ৯ হলের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন ছাত্রদলের অন্তত ১৪০ জন। সব মিলিয়ে দুই সংগঠনের অন্তত ২৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১১৮ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। 

ছাত্রীদের দুই হলে দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যানেল থেকে ২৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সে হিসাবে ছাত্রী হলে স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন ৯৭ জন। অবশ্য চূড়ান্ত সংখ্যা জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার। 

দাবি আদায়ের ‘প্ল্যাটফর্ম’

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সহযোগিতা করে। 

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

আলীমুল শামীম চাকসুর সহদপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চান। স্বতন্ত্রভাবেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারও প্রকাশ করেছেন গতকাল। শামীম প্রথম আলোকে বলেন, চাকসুর গঠনতন্ত্রে সহদপ্তর সম্পাদকের যে কাজ রয়েছে, তা তিনি করবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ দফা প্রকাশ করেছেন। ইশতেহার পছন্দ হলে তাঁকে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। 

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা জোট বেঁধে ও একা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স বতন ত র করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন ২১ নারী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে ২২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন। তাঁদের মধ্যে ২১ জনই নারী। প্রার্থী কম থাকায় ছাত্রী হলে নির্বাচন কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হল রয়েছে। প্রতিটি হল সংসদে ১৪টি করে মোট পদের সংখ্যা ৭০। এসব পদে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এর মধ্যে ২১টি পদে কেবল একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটাভুটি ছাড়াই তাঁরা নির্বাচিত হতে চলছেন।

ছাত্রদের হল রয়েছে ৯টি। এসব হল সংসদেও ১৪টি করে মোট ১২৬টি পদ রয়েছে। এসব পদে ৩৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শাহজালাল হলের রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরি সম্পাদক পদে কেবল একজন প্রার্থী হয়েছেন। মোহাম্মদ তানভীর হাসান নামের ওই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।

একাডেমিক চাপ ও পারিবারিক কারণও অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী না হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব চাপে আমি নিজেও তেমন আগ্রহী ছিলাম না। পরে আমার পরিবার থেকে সমর্থন পাওয়ার কারণে আমি দাঁড়িয়েছি।—পারমিতা চাকমা, ভিপি প্রার্থী, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলা নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে। এই হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদসহ ১১টি পদেই প্রার্থী রয়েছেন একজন করে। কেবল ৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শামসুন নাহার হলেও সাতটি পদে একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন। তাঁরা দপ্তর সম্পাদক, রিডিং রুম সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক এবং নির্বাহী সদস্যের তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন। প্রীতিলতা হলে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হওয়ায় দুজন নারী জয়ী হতে চলছেন। এ ছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিজয় ২৪ হলেও কেবল একজন নারী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলছেন পারমিতা চাকমা। ‘হৃদ্যতার বন্ধন’ নামে একটি প্যানেলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শুরুতে মনে হয়েছিল আরও কেউ দাঁড়াবে। তবে শিক্ষার্থীরা আমার ওপর ভরসা রেখে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়নি।’ হলে অন্যান্য পদেও একই অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘একাডেমিক চাপ ও পারিবারিক কারণও অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী না হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব চাপে আমি নিজেও তেমন আগ্রহী ছিলাম না। পরে আমার পরিবার থেকে সমর্থন পাওয়ার কারণে আমি দাঁড়িয়েছি।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলা নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে। এই হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদসহ ১১টি পদেই প্রার্থী রয়েছেন একজন করে। কেবল ৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শামসুন নাহার হলেও সাতটি পদে একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।

নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনো প্রস্তুত হয়নি। এখনো প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় আছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর যেসব পদে একক প্রার্থী রয়েছেন, তাঁরা বিজয়ী বলে গণ্য হবেন।

হল সংসদে প্রার্থী কম হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের শীর্ষ তিনটি পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা গেছে। প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৩ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২১ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তিন পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪৬। কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন ৪২৯ জন, যার মধ্যে ১৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। চাকসুর ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১২ অক্টোবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন ২১ নারী
  • দুই দিন পেছাল বিসিবি নির্বাচন
  • চাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির
  • চাকসুর ভিপি–জিএস পদে ৪৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা