ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তাঁরা অভিযোগগুলো প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান প্রার্থীরা। তাঁদের প্রশ্ন, নির্বাচনের দুদিন আগে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটে ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় থাকার অভিযোগের বিষয়টি কেন এখনো নির্বাচন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না? নির্বাচনের এত দিন পরও তাঁদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গড়িমসি লক্ষ করা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবদুল কাদের প্রমুখ।

আরও পড়ুনভুল বলেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, নিয়ম ভাঙেননি ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে-পরে তাঁরা নানা সংশয়ের কথা বলেছেন। প্রার্থীরা, প্যানেল সদস্যরা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা—সবাই তাঁদের সংশয় প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নির্বাচনের পরেও তাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাঁরা স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়ে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তাঁদের উদ্বেগ নির্বাচন কমিশন ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে।

প্রার্থীরা কয়েকটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আবদুল কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেমন—ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। এটা ভয়াবহ উদ্বেগজনক। ভোটার উপস্থিতির তালিকা তাঁরা দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসনের অনীহা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা চান না, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক। তবে প্রশাসন গড়িমসি করলে শিক্ষার্থীদের মনে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে তা আরও সমস্যা তৈরি করবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে এই নির্বাচন ইতিহাসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।

উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন বিচার-বিশ্লেষণ হবে, তখন এই ৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হবে। এই নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকে নানা উদ্বেগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। বিভিন্ন প্যানেল থেকেও আবেদন করা হয়েছে। লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে পরিষ্কার করতে প্রশাসনের গড়িমসি তাঁরা লক্ষ করছেন।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের এমন ভরাডুবির কারণ কী১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উমামা ফাতেমা বলেন, প্রথমত, ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, ভোটার উপস্থিতির তালিকার বিষয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি। তাঁরা উপাচার্য ও প্রক্টরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে ১৫ দিন। তবু প্রশাসন আন্তরিকভাবে এসব বিষয়ে সমাধান না করে গড়িমসি করছে।

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সবাই রাষ্ট্রের স্বার্থে বেড়ে উঠেছি। আমাদের কাছে জয়-পরাজয় বলতে কিছু নেই। আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। আমরা সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চর্চা করতে চেয়েছি। তাই নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অনিয়ম–অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো আন্দোলন, অবরোধ বা মিছিলে যাইনি। বরং নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই অভিযোগগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাইনি।’

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ের কারণ দীর্ঘ প্রস্তুতি১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আবিদুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, তাঁদের উদ্বেগ হলো, গাউসুল আজমের নিচতলায় ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে নির্বাচনে দুদিন আগে। এ ছাড়া গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এগুলোর জবাব দেওয়া।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদে শীর্ষ ৫৪ পদের ৫৩টিতেই ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী জয়ী১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন৭ সেপ্টেম্বর গাউসুল আজমের ছাপাখানায় ডাকসুর বিপুলসংখ্যক ব্যালট অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়: ছাত্রদল২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অরক ষ ত অবস থ য় স প ট ম বর ছ ত রদল উদ ব গ

এছাড়াও পড়ুন:

হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন ২১ নারী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে ২২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন। তাঁদের মধ্যে ২১ জনই নারী। প্রার্থী কম থাকায় ছাত্রী হলে নির্বাচন কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হল রয়েছে। প্রতিটি হল সংসদে ১৪টি করে মোট পদের সংখ্যা ৭০। এসব পদে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এর মধ্যে ২১টি পদে কেবল একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটাভুটি ছাড়াই তাঁরা নির্বাচিত হতে চলছেন।

ছাত্রদের হল রয়েছে ৯টি। এসব হল সংসদেও ১৪টি করে মোট ১২৬টি পদ রয়েছে। এসব পদে ৩৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শাহজালাল হলের রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরি সম্পাদক পদে কেবল একজন প্রার্থী হয়েছেন। মোহাম্মদ তানভীর হাসান নামের ওই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।

একাডেমিক চাপ ও পারিবারিক কারণও অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী না হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব চাপে আমি নিজেও তেমন আগ্রহী ছিলাম না। পরে আমার পরিবার থেকে সমর্থন পাওয়ার কারণে আমি দাঁড়িয়েছি।—পারমিতা চাকমা, ভিপি প্রার্থী, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলা নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে। এই হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদসহ ১১টি পদেই প্রার্থী রয়েছেন একজন করে। কেবল ৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শামসুন নাহার হলেও সাতটি পদে একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন। তাঁরা দপ্তর সম্পাদক, রিডিং রুম সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক এবং নির্বাহী সদস্যের তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন। প্রীতিলতা হলে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হওয়ায় দুজন নারী জয়ী হতে চলছেন। এ ছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিজয় ২৪ হলেও কেবল একজন নারী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলছেন পারমিতা চাকমা। ‘হৃদ্যতার বন্ধন’ নামে একটি প্যানেলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শুরুতে মনে হয়েছিল আরও কেউ দাঁড়াবে। তবে শিক্ষার্থীরা আমার ওপর ভরসা রেখে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়নি।’ হলে অন্যান্য পদেও একই অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘একাডেমিক চাপ ও পারিবারিক কারণও অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী না হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব চাপে আমি নিজেও তেমন আগ্রহী ছিলাম না। পরে আমার পরিবার থেকে সমর্থন পাওয়ার কারণে আমি দাঁড়িয়েছি।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলা নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে। এই হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদসহ ১১টি পদেই প্রার্থী রয়েছেন একজন করে। কেবল ৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শামসুন নাহার হলেও সাতটি পদে একজন করে শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।

নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনো প্রস্তুত হয়নি। এখনো প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় আছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর যেসব পদে একক প্রার্থী রয়েছেন, তাঁরা বিজয়ী বলে গণ্য হবেন।

হল সংসদে প্রার্থী কম হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের শীর্ষ তিনটি পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা গেছে। প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৩ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২১ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তিন পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪৬। কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন ৪২৯ জন, যার মধ্যে ১৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। চাকসুর ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১২ অক্টোবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আংশিক স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে হবে ভোট: চাকসু নির্বাচন কমিশন
  • হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন ২১ নারী
  • চট্টগ্রাম নগরে নেতৃত্বশূন্য যুবদল, হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
  • কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ ও ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
  • কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের আট নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার