ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের আয়োজনে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস উদ্যাপন
Published: 23rd, September 2025 GMT
ঢাকায় দশম জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস-২০২৫ উদ্যাপন করেছে ভারতীয় হাইকমিশন। ‘মানুষের জন্য আয়ুর্বেদ, গ্রহের জন্য আয়ুর্বেদ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গলবার ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইজিসিসি) দিবসটি উদ্যাপিত হয়।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, যোগব্যায়াম অনুশীলনকারী এবং বাংলাদেশি ইয়ুথ ডেলিগেশনের সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্যে আইজিসিসির পরিচালক অ্যান ম্যারি জর্জ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির গভীর বন্ধনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভূ-জলবায়ুগত সাদৃশ্যের কারণে দুই দেশে একই ধরনের ঔষধি গাছ পাওয়া যায়। গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। তিনি আরও বলেন, আয়ুর্বেদ, ইউনানি, যোগব্যায়াম ও হোমিওপ্যাথি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আয়ুর্বেদ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত যান, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে।
সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ ডা.
অনুষ্ঠানে ‘জার্নি অব আয়ুর্বেদ’ শিরোনামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া ছিল যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক শাহানাজ পারভীন শিখার নেতৃত্বে যোগব্যায়াম প্রদর্শনী ও ইয়োগা ব্লিসের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা সুলতানা করিমের পরিচালনায় একটি ইন্টারেক্টিভ যোগ সেশন। সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ ডা. সারিক হাসান খান প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবায় আয়ুর্বেদের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এই আয়োজনটি ‘সুস্থ ভারত যোজনা’ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। এটি ‘ওয়ান হেলথ’ ধারণার মাধ্যমে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের সমন্বিত স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বন্ধন আরও দৃঢ় করতেই এই উদ্যাপনের আয়োজন করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন এবং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ‘গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
দিনভর কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
সকালে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
ভিসি বলেন, ‘দলীয় রাজনীতি আমাদের নানাভাবে বিভাজিত করে ফেলেছে। আমরা শিক্ষা ও গবেষণাকে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। আমরা সমাজের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চাই। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক আরও জোরদার ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক ছাত্র সমিতির সভাপতি শবনম শেহনাজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল বাছির।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর প্রয়াত মা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পরে ওই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন) অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না। কোনো বিচারক তাঁর সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়; আর ইতিহাস হলো কেন সমাজকে আরও ভালো হতে হবে, তার অনুসন্ধান।’
বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়; এ জন্য তার সংস্কার করতে হয়।’
প্রধান বিচারপতি জানান, গত ১৫ মাসে বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রাক্তন ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে বিশেষ বৃত্তিসহ বিভাগের মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সম্প্রতি পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করা প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ১১ জন সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং সমমান পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সদস্যদের ৫৮ জন সন্তান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ১৩ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষে ছিল দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে তিনটায় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির দ্বিবার্ষিক সভায় শবনম শেহনাজ চৌধুরী দীপাকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।