বদ নজরের দোয়া: ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা
Published: 24th, September 2025 GMT
‘বদ নজর’ ইসলামে একটি বাস্তব সত্য, যা মানুষের ঈর্ষা, হিংসা বা অতিরিক্ত প্রশংসার মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করতে পারে। কোরআন ও হাদিসে বদ নজরের বাস্তবতা এবং এর থেকে সুরক্ষা লাভের উপায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তাই মুসলমানদের জন্য বদ নজর থেকে রক্ষার দোয়া ও আমল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বদ নজরের বাস্তবতাআল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে, তারা যখন কোরআন শোনে তখন প্রায় তাদের দৃষ্টির দ্বারা তোমাকে পতিত করবে। আর তারা বলে: ‘সে তো অবশ্যই পাগল।’” (সুরা কলাম, আয়াত: ৫১)
রাসুল (সা.
রাসুল (সা.) বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি প্রসিদ্ধ দোয়া হলো:
১. বদ নজর থেকে শিশুদের রক্ষার দোয়া
রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য এই দোয়া পড়তেন:
উচ্চারণ: উ‘ঈযুকুমা বি কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লাম্মাহ।
অর্থ: “আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার মাধ্যমে আশ্রয় দিচ্ছি, প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং ক্ষতিকর বদ নজর থেকে।” (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২০৬০)
২. বদ নজর থেকে রক্ষার সাধারণ দোয়া
উচ্চারণ: আ‘ঊযু বি কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক।
অর্থ: “আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির অশুভ দিক থেকে আশ্রয় চাই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)
৩. বদ নজর দূর করার আমল
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা তাকে ভালো লাগে, তখন সে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে। কারণ বদ নজর সত্য।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৫০৯)
এক্ষেত্রে দোয়া করা যায়—
উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু ফীক।
অর্থ: “আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দান করুন।”
আরও পড়ুনদোয়া কবুলের জায়গা০৪ জুন ২০২৪বদ নজর প্রতিরোধে করণীয়১. সকালে-সন্ধ্যায় জিকির–আজকার পাঠ করা (যেমন আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস)।
২. অন্যের প্রশংসায় বরকতের দোয়া করা।
৩. আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং তাওয়াক্কুল করা।
বদ নজর মানুষের জন্য বাস্তব ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে আল্লাহর উপর ভরসা, কোরআনের আয়াতসমূহ পাঠ এবং রাসুল (সা.)-এর শিখানো দোয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলমান সহজেই এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।
তাই প্রতিদিনের জীবনে বদ নজর প্রতিরোধের দোয়াগুলো নিয়মিত পড়া প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন এবং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ‘গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
দিনভর কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
সকালে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
ভিসি বলেন, ‘দলীয় রাজনীতি আমাদের নানাভাবে বিভাজিত করে ফেলেছে। আমরা শিক্ষা ও গবেষণাকে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। আমরা সমাজের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চাই। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক আরও জোরদার ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক ছাত্র সমিতির সভাপতি শবনম শেহনাজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল বাছির।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর প্রয়াত মা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পরে ওই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন) অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না। কোনো বিচারক তাঁর সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়; আর ইতিহাস হলো কেন সমাজকে আরও ভালো হতে হবে, তার অনুসন্ধান।’
বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়; এ জন্য তার সংস্কার করতে হয়।’
প্রধান বিচারপতি জানান, গত ১৫ মাসে বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রাক্তন ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে বিশেষ বৃত্তিসহ বিভাগের মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সম্প্রতি পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করা প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ১১ জন সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং সমমান পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সদস্যদের ৫৮ জন সন্তান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ১৩ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষে ছিল দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে তিনটায় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির দ্বিবার্ষিক সভায় শবনম শেহনাজ চৌধুরী দীপাকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।