শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার চামটা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে মিছিল নিয়ে ওই বাড়িতে ডিম ছোড়েন একদল যুবক। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। পরে পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

ওই প্রবাসীর নাম জাহিদ হাসান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তিনি। প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে জাহিদ হাসানকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ–সংক্রান্ত কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও এনসিপি নেতাদের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় জাহিদ জড়িত।

গতকাল বিকেল থেকে জাহিদের গ্রামের বাড়ির সামনে লোকজন জড়ো হতে থাকেন। এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় এনসিপির শরীয়তপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রুহুল আমীনের নেতৃত্বে কিছু লোক তেলিপাড়া গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর জাহিদের বাড়ির ঘর লক্ষ্য করে কয়েকটি ডিম নিক্ষেপ করা হয়। ওই সময় জাহিদের পৈতৃক বাড়িতে তাঁর এক ভাইয়ের স্ত্রী ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও ডিম নিক্ষেপের ঘটনাটি প্রতিবাদ করার জন্য ফেসবুকে আহ্বান জানিয়েছি। ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন যে জাহিদ হাসান, তাঁকে সামাজিকভাবে বর্জনের ডাক দিয়েছি। আমাদের কিছু ছেলে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও ডিম নিক্ষেপ করে ফিরে এসেছেন।’

আরও পড়ুননিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতারকে হেনস্তা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা, ডিম নিক্ষেপ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির শরীয়তপুর জেলা প্রধান সমন্বয়কারী রুহুল আমীন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের ওপর ন্যক্কারজন আচরণ করা হয়েছে। আমাদের এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। জাহিদ হাসান নামের আওয়ামী লীগের এক নেতার নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর প্রতিবাদ করার জন্য আমরা তাঁর গ্রামের বাড়ি নড়িয়ার তেলিপাড়া এলাকায় এসেছি। তাঁর পরিবারের কেউ এখানে থাকে না। তাই তাঁদের কাছে প্রতিবাদ পৌঁছে দিতে পারিনি। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে ওই গ্রাম থেকে ফিরে এসেছি।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের আইনে ডিম ছোড়া কি অপরাধ, বাংলাদেশে শাস্তি কী১২ ঘণ্টা আগে

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদ নামের এক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীর বাড়ির পাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে মিছিল করেছেন। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তাঁদের সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে ডিম নিক্ষেপ ও বিশৃঙ্খলার কোনো ঘটনার খবর পাইনি। এ রকম কোনো অভিযোগও কেউ করেনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রব স এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর একটি হলো—নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা।

কিন্তু দেশটির নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে কি ট্রাম্প এবার নিজের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছেন?

এই রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে তরুণ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক মামদানির মুখোমুখি লড়াই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করতে পারে।

মনে হচ্ছে, মামদানিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে ট্রাম্প বেশ আনন্দই পাচ্ছেন। তিনি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় এই মেয়রের নাম নিয়ে তিনি ঠাট্টা করছেন। এমনকি নিউইয়র্ক শহরের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকিও দিচ্ছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী২০ ঘণ্টা আগে

কিন্তু মামদানি দেখিয়েছেন, ট্রাম্পের মতো কৌশলেই তিনিও খেলতে জানেন।

রিয়েলিটি টিভি তারকা থেকে রাজনীতিক রূপে আবির্ভূত হওয়া ট্রাম্পকে অন্য কেউ ছাপিয়ে যান—এমনটা দেখা তাঁর জন্য সহজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী মামদানি সেটিই করে দেখালেন।

গত মঙ্গলবার রাতের বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার কয়েকটা শব্দ আছে—আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!’

মামদানির বক্তব্য শেষ হতেই তাঁর সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

পরদিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প সত্যিই মামদানির ভাষণ দেখেছিলেন তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়ে ভারতের মুসলিমরা খুশি হলেও বিজেপি-সমর্থকেরা চুপ কেন৩ ঘণ্টা আগে

‘আমাদের মধ্য দিয়েই যেতে হবে’

ট্রাম্প ও মামদানি এমন প্রতিদ্বন্দ্বী, যাঁরা অন্তত কিছুটা হলেও একে অপরের উপস্থিতি থেকে পরস্পর লাভবান হচ্ছেন।

বামপন্থী মামদানি তাঁর পুরো নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে একধরনের ভয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে তিনি সেসব বাড়িওয়ালার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যাঁরা নিউইয়র্কবাসীর পকেট কাটছেন।

মামদানি নিজেকে একটি প্রতিরোধশক্তির অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন, ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই মামদানির এই প্রতিরোধ।

বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে (ট্রাম্প) আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’

আরও পড়ুনমামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়২০ ঘণ্টা আগে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আক্রমণে চাপে থাকা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানি যেন প্রতি-আক্রমণের বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ এনে দিয়েছেন।

অন্যদিকে ডানপন্থীদের কাছে মামদানি এখন ট্রাম্পের জন্য একদম আদর্শ প্রতিপক্ষ, যাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা ইচ্ছেমতো আক্রমণ চালাতে পারেন।

নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটে পরাজয়ের পর রিপাবলিকানরা যখন ধাক্কা সামলাচ্ছিলেন, তখন বুধবার মায়ামিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকানদের এখন বেছে নিতে হবে—কমিউনিজম নাকি বাস্তববোধ।’

আরও পড়ুনমামদানি স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

‘সতর্কতার লালবাতি’

তবে এই লড়াই শুধু কথার নয়; ঝুঁকি অনেক বেশি।

ট্রাম্প একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় শহর নিউইয়র্ককেও লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো ফেডারেল নজরদারির আওতায় আনবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বললেন, ‘যদি সে (মামদানি) কমিউনিস্ট হয়, তাহলে তো শহরে তেমন কোনো কাজ হবে না। তাই নিউইয়র্কের জন্য যেসব সেতু, টানেল আর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা–ও প্রয়োজন হবে না।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি হয়তো আগুন নিয়ে খেলছেন। কারণ, মামদানির উত্থান ঘটেছে সেই জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটকে ঘিরে, যা এখন ভোটে রিপাবলিকানদের বিপদে ফেলছে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প০৬ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন পলিটিকোকে বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য সব জায়গায় সতর্কতার লালবাতি জ্বলছে। সবাই বুঝে নিক, তাঁদের সামনে এখন সত্যিকারের এক যোদ্ধা এসেছেন।’

তবে ট্রাম্প ও মামদানি দুজনই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত হয়তো কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, তিনি নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন বলে মামদানিকে ‘সফল হতে সাহায্য করতে চান’। আবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মামদানিকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি একটু শ্রদ্ধাশীল হও।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী০৫ নভেম্বর ২০২৫

আর মামদানিও জানেন, যদি ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করেন, তাহলে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, শিশুযত্ন কেন্দ্র বা সিটি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত মুদিদোকানের মতো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়ে যাবে।

গত বুধবার মামদানি বলেন, ‘আমি এখনো আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে, কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি।’

আরও পড়ুনবিজয়ভাষণে ট্রাম্পকে মামদানি বললেন, ‘আওয়াজ বাড়ান’০৫ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ সপ্তাহের রাশিফল (৮-১৪ নভেম্বর)
  • মুন্সীগঞ্জে ৬৩ সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ
  • কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
  • যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা ম্লান হলো মাত্র দুই দিনেই
  • মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক
  • ‘মামদানি মডেল’ কি নিউইয়র্কের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে
  • ‘সালাম বম্বে!’, থেকে ‘মুনসুন ওয়েডিং’, মামদানির মাকে কতটা চেনেন
  • ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
  • চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা