স্যামসন এইচ চৌধুরীর আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে স্কয়ার গ্রুপ
Published: 25th, September 2025 GMT
সাড়ে তিন দশক আগের কথা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট চালু করলেন। শুরু থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ বিক্রির বিপরীতে ভ্যাট দেওয়া শুরু করলেও প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর অনেকেই সেটি পরিপালন করত না। ভ্যাট চালুর বছর দুয়েক পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রির হিসাব স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তপন চৌধুরীর চোখে পড়ল। তিনি দেখলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রকৃত বিক্রির হিসাব গোপন করেছে।
তখন স্কয়ার ফার্মার কার্যালয় ছিল পুরান ঢাকার হাটখোলা সড়কে। তপন চৌধুরী বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীর কক্ষে গেলেন। বললেন, আমাদের প্রতিযোগীরা তো ঠিকমতো ভ্যাট দেয় না। মাথা তুলে স্যামসন এইচ চৌধুরী বললেন, তাতে কী? তপন চৌধুরী বললেন, তাঁরা তো অনেক টাকা সেভ করছে; প্রফিট বেশি করছে। তখন স্যামসন এইচ চৌধুরী ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বোঝো, ভ্যাট কী?
এমন প্রশ্ন শুনে তপন চৌধুরী বিব্রত হলেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী আবার বললেন—বলো, ভ্যাট কী? তপন চৌধুরী বলেন, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স।
—এই কর কে দেয়?
—কাস্টমার (ক্রেতা)।
—ক্রেতার কাছ থেকে এটা কে সংগ্রহ করে?
—দোকানদার।
—এখানে তোমার ভূমিকা কী?
—দোকানদারদের কাছ থেকে করের টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেওয়া।
—তাহলে এটা কি তোমার টাকা?
—না।
—তোমার উৎপাদন খরচ ও মুনাফা কি পণ্যমূল্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে?
—হ্যাঁ।
—তার মানে হচ্ছে, ভ্যাট তোমার টাকা নয়। ঠিক আছে! তোমার উৎপাদন খরচ ও মুনাফা পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত আছে। তুমি সরকারের পক্ষে ভ্যাট সংগ্রহ করেছ। সেটি সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার দায়িত্ব তোমার।
বাবার কক্ষ থেকে বেরিয়ে নিজের কক্ষে এসে বসলেন তপন চৌধুরী। ভাবতে লাগলেন, পুরোনো জমানার লোক, খালি নীতিকথা.
নীতি–নৈতিকতা মেনে সততার সঙ্গে ব্যবসা করা স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীকে নিয়ে এই স্মৃতিচারণা করলেন তাঁর মেজ ছেলে তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, বাবার কথা শতভাগ ঠিক ছিল। ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই সেসব কোম্পানির অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
গত রোববার নিজের কার্যালয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় তপন চৌধুরী বলেন, আমাদের বাবা সাধারণ অবস্থা থেকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একজন শিল্পপতি হয়েছেন। সৎ পথে থেকে পরিশ্রম করে তিনি এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। আমরা তাঁর দর্শন ও আদর্শকে ধারণ করেই স্কয়ার গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
১৯৫২ সালে ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে বাবার হোসেন ফার্মেসিতে বসতে শুরু করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। বছর চারেক পর বাবার কাছ থেকে টাকা ধার করে পাবনার আতাইকুলাতেই ই সন্স (ইয়াকুব অ্যান্ড সন্স) নামে ছোট ওষুধ কোম্পানি করলেন। সেটিকে বড় করতে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নেন। কাজী হারুনূর রশীদ, পি কে সাহা ও রাধাবিন্দ রায়কে নিয়ে ১৯৫৮ সালে স্কয়ার নামে ওষুধ কোম্পানি চালু করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তখন তাঁদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা। চারজনের সমান বিনিয়োগ বলে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘স্কয়ার’।
চার বন্ধু মিলে কোম্পানিটি গড়ে তুললেও নেতৃত্বে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। পাবনায় নিজ বাড়ির কাছেই কোম্পানির কারখানা করা হয়। শুরুতে স্কয়ার ফার্মা সিরাপ–জাতীয় ওষুধ তৈরি করত। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে কোম্পানির পরিসরও বড় হতে থাকে। ওষুধ দিয়ে শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবসা বর্তমানে আটটি খাতে বিস্তৃত—স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, মিডিয়া, টিভি ও তথ্যপ্রযুক্তি; নিরাপত্তা সেবা; ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স; হেলিকপ্টার ও কৃষিপণ্য। তাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। ২০ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু হওয়া স্কয়ার গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন বর্তমানে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
কিংবদন্তিতুল্য শিল্পপতি স্যামসন এইচ চৌধুরী জন্মশতবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)। ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের আরওয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা ইয়াকুব হোসাইন চৌধুরী ও মা লতিকা চৌধুরী। ১৯৩২ সালে তিনি বাবার সঙ্গে পাবনার আতাইকুলায় আসেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী কলকাতার বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ডিগ্রি পান। পরে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর সহধর্মিণী প্রয়াত অনিতা চৌধুরী।
স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (প্রয়াত) স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী (প্রয়াত) অনিতা চৌধুরী (মাঝে) এবং তাঁদের চার ছেলেমেয়ে (বাঁ থেকে) অঞ্জন চৌধুরী, রত্না পাত্র, তপন চৌধুরী ও স্যামুয়েল এস চৌধুরী।উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স য মসন এইচ চ ধ র স কয় র গ র প স কয় র ফ র ম তপন চ ধ র করল ন বলল ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষিবিদ সিডের ৬ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ সিড লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৬ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ০.১০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা।
২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মনোস্পুলের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে ৪.৩৮ শতাংশ
এনার্জিপ্যাকের লভ্যাংশ ঘোষণা
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তথ্য মতে, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় হাইব্রিড প্ল্যাটফর্মে। ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ ডিসেম্বর।
২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৬৮ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৬৭ টাকা।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২.৪৫ টাকা।
এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ