মাতৃত্বের সিদ্ধান্ত নেবেন যে বয়সে
Published: 25th, September 2025 GMT
প্রতিদিন হাসপাতালে বসে আমি একধরনের পরিবর্তন খুব স্পষ্টভাবে দেখি। অনেক নারী ৩৫–৪০ বছর বয়স পার করে প্রথমবার গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন। তাঁরা জীবনের নানা ক্ষেত্র গুছিয়ে নিয়ে, ক্যারিয়ারে স্থিতি আনার পর মাতৃত্বের কথা ভাবছেন।
শহরাঞ্চলে এটি এখন প্রায় স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু এর আড়ালে আছে এমন কিছু জটিল বাস্তবতা। যেগুলো অনেকেই বিবেচনায় আনেন না। আর সেই অদৃশ্য ঝুঁকিগুলোই পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নারীর প্রজনন ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে। এই সময়ে ডিম্বাণু সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর থাকে এবং সংখ্যাও যথেষ্ট থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণমান ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
আর ৩৫ পার হলে এই পতন অনেক দ্রুত হয়। তখন গর্ভপাত, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, প্লাসেন্টার জটিলতা, এমনকি সিজারিয়ানের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুনডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে প্রতারণা এড়াতে ১০টি পরামর্শ১ ঘণ্টা আগেবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, নারীর প্রজনন ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
প্রতি মাসে একজন নারীর স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
৪০ বছর পার হলে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ। এর কারণ হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণমান দুটিই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, নারীর প্রজনন ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে। প্রতি মাসে একজন নারীর স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ৪০ বছর পার হলে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ।বয়স বাড়লে ডিম্বাণুর ক্রোমোজোমজনিত ত্রুটি বেড়ে যায়, যা গর্ভপাত বা ব্যর্থ গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, ২৫ বছর বয়সে ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোমজনিত ত্রুটি ২৫ শতাংশ হলেও ৪০ বছর বয়সে তা দাঁড়ায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে।
ডব্লিউএইচও বলছে, ৪০ বছরের পর প্রাকৃতিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুবই সীমিত হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় সহায়ক প্রজনন চিকিৎসা (যেমন আইভিএফ) ছাড়া গর্ভধারণ সম্ভব হয় না।
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক নারী যখন ৩৮ থেকে ৪০ বছর বয়সে এসে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন, তখন প্রজনন ক্ষমতা অনেক কমে যায়। অনেকে বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হন।
আবার অনেকে বহুবার আইভিএফ বা টেস্টটিউব চিকিৎসা করেও সফল হতে পারেন না। বয়সের কারণে ডিম্বাণুর গুণমান দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসার সফলতার হারও কমে যায়।
যুক্তরাজ্যের হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথরিটির (এইচএফইএ) তথ্য বলছে, ৩৫–এর নিচে নারীদের আইভিএফ সফলতার হার গড়ে ৩১ শতাংশ। যেখানে ৪০–এর পর তা নেমে আসে ১১ শতাংশে।
এই প্রক্রিয়াগুলো নারীর শরীরে প্রচণ্ড শারীরিক চাপ তৈরি করে। আর মানসিক চাপও অনেক সময় হতাশার দিকে ঠেলে দেয়।
আরও পড়ুনএকমাত্র সন্তান বউ নিয়ে দেশের বাইরে থাকে, একা আমি কী করব ১৭ ঘণ্টা আগেঅতি অল্প বয়স আর অতি দেরি-দুটিই বিপজ্জনক। মাঝখানেই রয়েছে সবচেয়ে নিরাপদ সময়; ২০ থেকে ৩০ বছর। এই সময়ে নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপক্ব থাকেন, প্রজনন ক্ষমতাও সর্বোচ্চ থাকে, আর গর্ভাবস্থার জটিলতার ঝুঁকি তুলনামূলক কম থাকে।অন্যদিকে দেশের গ্রামীণ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্যমতে, গ্রামে প্রথমবার মা হওয়ার গড় বয়স এখনো প্রায় ১৯ বছর। যেখানে শহরাঞ্চলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ বছর। কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের ফলে মা ও নবজাতক উভয়ের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু সমীক্ষা ২০২২ দেখিয়েছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েদের মাতৃমৃত্যুর হার ২০ থেকে ২৪ বছরের মায়েদের তুলনায় দ্বিগুণ। অল্প বয়সে গর্ভধারণে মা অপুষ্টিতে ভোগেন, শিশুর ওজন কম হয়, এবং পরবর্তীতে বিকাশগত সমস্যার আশঙ্কাও বেশি থাকে।
অতি অল্প বয়স আর অতি দেরি—দুটিই বিপজ্জনক। মাঝখানেই রয়েছে সবচেয়ে নিরাপদ সময়; ২০ থেকে ৩০ বছর। এই সময়ে নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপক্ব থাকেন, প্রজনন ক্ষমতাও সর্বোচ্চ থাকে, আর গর্ভাবস্থার জটিলতার ঝুঁকি তুলনামূলক কম থাকে।
এর মানে এই নয় যে ৩০ পার করলেই সন্তান নেওয়া অসম্ভব, বরং এর মানে হলো—বয়স যত বাড়ে, সিদ্ধান্ত তত বেশি সচেতনভাবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই নিতে হবে।
মাতৃত্ব কোনো দেরিতে ফেলে রাখা স্বপ্ন নয়, এটি সময়মতো সযত্নে বোনা একটি বাস্তবতা। তাই প্রত্যেক দম্পতির উচিত তাদের শিক্ষা, ক্যারিয়ার, আর্থিক অবস্থা ও পারিবারিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়মতো সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
গর্ভধারণের আগে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও একেবারেই অপরিহার্য।
ডা.
রেশমা শারমিন: বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও নারী স্বাস্থ্য অধিকারকর্মী
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর বয়স ৪০ বছর সন ত ন ২০ থ ক র বয়স সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে