প্রজননস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও তরুণদের ক্ষমতায়ন
Published: 26th, September 2025 GMT
অংশগ্রহণকারী
কাজী মহিউল ইসলাম
সাবেক মহাপরিচালক,
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার
লাইন ডিরেক্টর, সিসিএসডিপি,
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
ফারহানা দেওয়ান
সাবেক প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আবু জামিল ফয়সাল
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
তছলিম উদ্দীন খান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এসএমসি
সায়েফ উদ্দিন নাসির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড
ওবায়দুর রব
সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর,
পপুলেশন কাউন্সিল
মো.
সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ,
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
আবু সাঈদ হাসান
যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার বিশেষজ্ঞ,
ইউএনএফপিএ
সঞ্চালনা:
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
আলোচনাধারণাপত্র উপস্থাপন
তছলিম উদ্দীন খান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এসএমসি
স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সূচনা হয়। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণে ধীরে ধীরে সাফল্য আসে। সরকার বুঝতে পেরেছিল কার্যক্রম সফল করতে হলে সমন্বয় অপরিহার্য। সেভাবেই গড়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব।
১৯৭৫ সালে সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি পিল ও কনডম বাজারজাত শুরু করে, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। পরে দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিরোধক ব্যবহারে কিছু অগ্রগতি হয়, তবে সেটি প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়।
আজ পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম সাফল্য বয়ে এনেছে। বর্তমানে আধুনিক জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন দম্পতিদের ৬৪ শতাংশ, প্রজনন হার নেমেছে ২.৩-এ। তবু প্রায় ১০ শতাংশ দম্পতির ‘আনমেট নিড’ আছে, আর অনেক ব্যবহারকারী মাঝপথে পদ্ধতি বন্ধ করে দেন। যার পেছনে অন্যতম কারণ যথাযথ পরামর্শ ও সচেতনতার অভাব।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো তরুণেরা এখনো সচেতন নন। বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে অর্ধেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। যাদের প্রায় ২৩ শতাংশ অল্প বয়সেই গর্ভধারণ করে, অর্থাৎ প্রতি চারজন কিশোরীর মধ্যে একজন। এই বয়সে মাতৃত্ব তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় এবং শিক্ষা ও কর্মজীবন ব্যাহত করে।
কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে জন্মনিরোধক ব্যবহারের হারও জাতীয় গড়ের তুলনায় কম। যেখানে মোট ব্যবহার ৫৫ শতাংশ, সেখানে কিশোরীদের মধ্যে তা মাত্র ৩৪-৪৮ শতাংশ। ফলে তাদের প্রজনন হার বেশি থেকে যাচ্ছে।
পরিবার পরিকল্পনার সাফল্য ধরে রাখতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পিল কনডমের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিরোধক পদ্ধতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে । গুণগত মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও কার্যকর স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাত, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিশোর ও তরুণদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, সঠিক তথ্য প্রদান এবং নিরাপদ সেবা নিশ্চিত না করলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি অর্জন স্থায়ী হবে না।
সায়েফ উদ্দিন নাসির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড
আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে কাজ করা। প্রচলিত ধারণা ছিল, কন্ট্রাসেপশন কেবল বিবাহিত দম্পতিদের জন্য। কিন্তু এখনকার তরুণেরা জীবনধারার দিকে বেশি মনোযোগী। তাঁরা জানতে চান, কীভাবে এটি আমার জীবনকে সুন্দর করবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে স্থানীয় ও বৈশ্বিক কোনো সীমারেখা নেই। তাই আমাদের যোগাযোগও হতে হবে সময়োপযোগী, প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়।
আমরা এত দিন পরিবার পরিকল্পনাকে কিছুটা প্রেসক্রিপটিভ ভঙ্গিতে প্রচার করেছি। কিন্তু এখন আমাদের শিফট করতে হবে মার্কেটিং বা কমার্শিয়াল ভাষায়, যেখানে আমরা বিক্রি করছি কেবল একটি পণ্য নয়; বরং একটি জীবনধারা, একটি সমাধান।
এসএমসির শক্তি হলো মানের প্রতি অঙ্গীকার ও আস্থা। আমাদের পণ্যের সিংহভাগ সফল হয়, কারণ ভোক্তারা জানেন এটি মানসম্মত। আমরা মুনাফাকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করি না; বরং সেটি সামাজিক কল্যাণ ও কর্মসংস্থানে পুনর্বিনিয়োগ করি। এই চক্রই আমাদের পণ্যকে সাশ্রয়ী দামে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
আমাদের ভ্যালু চেইন পুরোপুরি সমন্বিত—প্রথমে সচেতনতা তৈরি, তারপর পণ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। ব্লুস্টার ও গ্রিনস্টার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মানসম্মত সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। টেলিজিজ্ঞাসা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমরা নিয়মিত তথ্য দিচ্ছি। তবে নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য বাজারে আসছে, যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
আমাদের বাজার শেয়ারের দিক থেকেও সাফল্য রয়েছে। দেশের মোট কনডম বিক্রির ৭৩ শতাংশই এসএমসির পণ্য। আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাচ্ছি, যাতে মানুষ বুঝতে পারে কোনটি আসল ও কোনটি নকল।
পরিবার পরিকল্পনার সফলতা এখন নির্ভর করছে, আমরা কতটা তরুণদের কাছে প্রাসঙ্গিক হতে পারি, তার ওপর। জন্মনিরোধকে কেবল পদ্ধতি হিসেবে নয়; বরং নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরতে হবে। সচেতনতা, মানসম্মত সেবা, তথ্য পাওয়া ও তরুণবান্ধব যোগাযোগ—এ চারটি দিকেই আমাদের মূল জোর দিতে হবে।
ওবায়দুর রব
সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর, পপুলেশন কাউন্সিল
জন্মনিয়ন্ত্রণে কন্ট্রাসেপশন জরুরি হলেও আসল প্রভাব বিয়ের ধরনে। প্রতিবছর পাঁচ-ছয় লাখ মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে অল্প বয়সেই সন্তান নিচ্ছে। তাই মোট প্রজনন হার ২.১-২.৩-এ স্থির আছে। আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে নতুনভাবে সাজানো জরুরি।
বর্তমান কাঠামোতে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে যে সেবা দেওয়া হয়, সেটি আর কার্যকরভাবে টার্গেট গ্রুপে পৌঁছাতে পারছে না। শহর ও গ্রামে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হারেও বড় পার্থক্য আছে। কোথাও জন্মহার কমেছে, কোথাও আবার বেড়েছে। প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৬ লাখ গর্ভপাত হচ্ছে দেশে, যার বড় অংশ বিবাহিত নারীর। এর মানে এখনো আমাদের আনমেট নিড অনেক বেশি। তাই পরিবার পরিকল্পনা প্রোগ্রামকে আউট অব বক্স চিন্তায় ঢেলে সাজাতে হবে। এই প্রসঙ্গে তরুণদের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। কারণ, যারা অল্প বয়সে বিয়ে করছে, তাদের মধ্যেই অধিকাংশ সন্তানের জন্ম হচ্ছে। আবার যারা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে করতে ঝরে পড়ছে, তাদের বড় অংশ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। গত বছর প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ মেয়ে, যাদের বড় অংশের বিয়ে হয়ে গেছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এই ঝরে পড়ার হার আরও বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার আগেই বহু তরুণী শিক্ষা থেকে বাদ পড়ে, বিয়ে হয়ে যায় এবং অল্প বয়সেই মা হয়ে যায়। অন্যদিকে যারা উচ্চশিক্ষায় টিকে থাকে, তাদের বিয়ে ও সন্তান জন্ম বিলম্বিত হয়। এভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে জনসংখ্যাগত বৈষম্য।
তরুণদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এখন সবচেয়ে জরুরি। তাদের শুধু স্কুল বা কলেজের পড়াশোনা নয়, কন্ট্রাসেপশন ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তথ্য দিতে হবে। কারণ, আজকের তরুণ-তরুণীরাই ভবিষ্যতে পরিবার গঠন করবে। যদি তারা তথ্য থেকে বঞ্চিত থাকে, তবে আনমেট নিড কখনোই কমবে না।
মিডিয়ার ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা নিয়ে মিডিয়ায় সচেতন আলোচনা ও তথ্যভিত্তিক লেখা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ তরুণ প্রজন্মের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো দরকার, যাতে তারা বিয়ের বয়স, কন্ট্রাসেপশন এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
কাজী মহিউল ইসলাম
সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
আমি বিশ্বাস করি, কন্ট্রাসেপশনে প্রবেশাধিকার একধরনের মানবাধিকার। কাউকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা আমাদের কারও নেই। জন্মনিয়ন্ত্রণ শুধু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয় নয়, বরং মা ও শিশুর জীবন রক্ষার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। তাই কন্ট্রাসেপশনকে যেভাবেই হোক প্রমোট করতে হবে।
তরুণদের নিয়ে আমাদের আরও খোলামেলা হতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব নিয়ে লুকোচুরি করলে তরুণেরা ঝুঁকির মুখে পড়বে। যৌন সংক্রমণ ও বাল্যবিবাহের ভয়াবহতা তরুণদের সামনে স্পষ্ট করতে হবে। তাদের প্রতি এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং দায়িত্বশীলভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়াকে আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে। ছোট ছোট ভিডিও বা সচেতনতামূলক বার্তা তরুণদের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
সবচেয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে, যা লজ্জাজনক। শুধু বাল্যবিবাহ নয়, এর পুনরাবৃত্তিও ঘটে। অনেক মেয়ে এক জায়গায় বিয়ে ঠেকলেও অন্যত্র গিয়ে আবার বিয়ে করছে এবং বেশির ভাগের পরিণতি হচ্ছে ডিভোর্স। এ অবস্থায় তারা দ্বিগুণ অভিশাপে পড়ে। তাই এটা শুধু পরিবার পরিকল্পনার বিষয় নয়, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বও বটে।
কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়। আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কিশোরী মেয়েদের মাত্র ৩২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যায়। বাকি ৬৮ শতাংশ কোথাও যায় না। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, মাত্র ২১ শতাংশ তথ্য নেয়। এর মানে হলো বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাচ্ছে। এদের কাছে পৌঁছাতে না পারলে আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
সরকার ইতিমধ্যে দুটি কৌশল নিয়েছে—জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কৌশল এবং হার্ড-টু-রিচ কৌশল। সহজ জায়গাগুলোতে আমরা সাফল্য পেয়েছি, এখন কঠিন জায়গায় যেতে হবে। এটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি স্বাস্থ্য কৌশল বাস্তবায়নে মান ও গুণগত দিককে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
আমার বিশ্বাস, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও তরুণ প্রজন্মকে কেন্দ্র করে যদি আমরা যুগোপযোগী কৌশল গ্রহণ করি, কুসংস্কার ভাঙি এবং কাঠামোগত সংস্কার করি, তবে মা-শিশুর মৃত্যুহার কমবে, তরুণেরা সচেতন হবে এবং সমাজ এগিয়ে যাবে।
মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার
লাইন ডিরেক্টর, সিসিএসডিপি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
বাংলাদেশে বর্তমানে সক্ষম দম্পতির সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে তিন কোটি। এর মধ্যে মাত্র ২ কোটি ৮১ লাখ দম্পতি রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত। প্রজননক্ষম নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। তরুণ প্রজন্ম—যাদের জেড জেনারেশন বলা হয়—মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ এবং সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি। তাদের প্রতি লক্ষ্য না রাখলে দেশীয় জনসংখ্যা ও প্রজননস্বাস্থ্য সমস্যার মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
তরুণ প্রজন্মকে পরিবার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিবছর প্রায় ৫৩ লাখ নারী গর্ভবতী হন, যার ৪৯ শতাংশই অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ। এর মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ নারী এমআর বা কম্প্রিহেনসিভ এমআর পদ্ধতিতে গর্ভপাত করান। অনিরাপদ গর্ভপাত মাতৃমৃত্যু বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। শহরে পরিবার পরিকল্পনার সেবা কার্যক্রম আরও জোরদার করার প্রয়োজন।
ডোমিসিলারি সার্ভিস বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান, তরুণদের সচেতন করতে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। তবে বর্তমান রাস্তবতায় সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল টুলকিট ব্যবহার করে, কল সেন্টার ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তরুণদের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব। এমন উদ্যোগ তাদের ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কুসংস্কার এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় পর্যায়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি, ধর্মীয় নেতা, গ্রহীতা ও নতুন গ্রহীতাদের সঙ্গে ওয়ার্কশপ, উঠান বৈঠক ও পরিবার সম্মেলনের মাধ্যমে কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা চলছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সিপিআর ৬২–৬৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। লক্ষ্য ৭৪ শতাংশ অর্জনের জন্য আনমেট নিডের ১০ শতাংশকে কমানো জরুরি। পাশাপাশি প্রজননস্বাস্থ্যকর্মীর শূন্য পদ পূরণ ও মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। বর্তমানে কর্মীর ঘাটতি ৪০–৫০ শতাংশ, যা পূরণ করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার অবকাঠামো শক্তিশালী, তবে তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভুক্তি, কুসংস্কার দূরীকরণ, শহরের জনসংখ্যার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা ও কর্মী সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ছাড়া সেবা সর্বজনীনভাবে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
জন্মনিরোধ ও প্রজননস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রমগুলো জোরদার করা অপরিহার্য, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য।
মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে চলমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কিশোরী মাতৃত্ব, বাল্যবিবাহ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। এই অনিয়ন্ত্রিত বা অপ্রত্যাশিত প্রেগন্যান্সি শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, শিক্ষাগত ও সামাজিক প্রভাবও সৃষ্টি করে। তরুণদের মধ্যে অর্থনৈতিক চাপ, শিক্ষা ব্যাঘাত, লেবার ফোর্সে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অল্পবয়সী বাল্যবিবাহ ও টিনএজ প্রেগন্যান্সি শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, জেন্ডারবৈষম্যও বৃদ্ধি করে। নারী শিশু এবং কিশোরী মাতার ওপর দায়িত্ব বাড়ে, শিক্ষা ব্যাহত হয়, শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ কমে এবং সামাজিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।
এ সমস্যার সমাধান মূলত কন্ট্রাসেপশন ও প্রজননস্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। বয়সভিত্তিক ভিন্নতা লক্ষ করলে দেখা যায়, ১৫-২৪ বছরের তরুণেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এবং তাদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম প্রয়োজন। কিশোরী স্তরে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও কন্ট্রাসেপশন কার্যক্রম প্রসারিত করলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, টিনএজ প্রেগন্যান্সি ও বাল্যবিবাহ কমানো সম্ভব।
সিলেট ও চট্টগ্রামে কন্ট্রাসেপশনের ব্যবহার কম এবং নগরমুখী অঞ্চলে, বিশেষ করে নন-স্লামে, টিনএজ প্রেগন্যান্সি বাড়ছে। তাই রুরাল ও আরবান দুই ক্ষেত্রেই সেবা পৌঁছানো জরুরি। প্রাইভেট ও পাবলিক স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পিত বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কন্ট্রাসেপশন সহজলভ্য করতে হবে।
মানসম্পন্ন সেবা, গুণগত উপাত্তের ভিত্তিতে পলিসি, গবেষণা, মনিটরিং এবং মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রন্টলাইন কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সচেতনতা কার্যক্রম, স্কুলভিত্তিক প্রোগ্রাম এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ মিলিয়ে কিশোরী ও তরুণদের প্রজননস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।
কিশোরী মাতৃত্ব, বাল্যবিবাহ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ কমানো হলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, শিক্ষার ধারাবাহিকতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।
তাই জনসংখ্যা, অঞ্চলভিত্তিক প্রয়োজন, বয়সভিত্তিক ঝুঁকি এবং স্টেকহোল্ডার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে পরিকল্পিত, কার্যকর ও মানসম্পন্ন প্রজননস্বাস্থ্য ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালানো অপরিহার্য।
ফারহানা দেওয়ান
সাবেক প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
পরিবার পরিকল্পনা ও নিরাপদ মাতৃত্বের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনিরাপদ গর্ভপাত ও অনিয়ন্ত্রিত প্রেগনেন্সি মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। নিরাপদ মাতৃত্ব মানে মা এবং শিশু উভয়ই সুস্থ থাকা। নিরাপদ মাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা মায়েদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার সুযোগ পাই, যা তাদের সন্তানদেরও সুস্থভাবে পৃথিবীতে আনার সুযোগ সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে এডোলেসেন্ট ও টিনেজ প্রেগনেন্সি ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের কাজ হলো তাদের কন্ট্রাসেপচিভ ব্যবহার, নিরাপদ মাতৃত্ব এবং আনসেফ অ্যাবরশনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা। এডোলেসেন্ট (কিশোরী) এবং টিনেজ প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অনেক তরুণী প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে অসচেতনভাবে গর্ভধারণ করে, যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই বয়সে গর্ভধারণে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ প্রভাবিত হয় এবং ভবিষ্যতে যেকোনো জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে মায়ের জীবনও হুমকির মধ্যে পড়ে।
নবদম্পতিদের জন্য উপযুক্ত কন্ট্রাসেপটিভ পদ্ধতি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিটি দম্পতির শারীরিক অবস্থান, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য দিক বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতির নির্বাচন করা তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও সুবিধাজনক হতে পারে। সঠিক কন্ট্রাসেপটিভ পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা পরিবার পরিকল্পনা করতে সক্ষম হয় এবং সন্তান জন্মের সময় বা গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে পারে। এভাবে পরিকল্পিত গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে পারি। মিডিয়া, সরকার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয় এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য । তাহলেই আমরা মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এবং তরুণদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।
মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ,
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে ১৬ বছরের কম বয়সী বাল্যবিবাহের হার অত্যন্ত উচ্চ। এই প্রেক্ষাপটে তরুণদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও সহজলভ্য সেবা অপরিহার্য। বিশেষ করে যাদের ন্যূনতম সামাজিক-অর্থনৈতিক সুযোগ নেই, তারা প্রায়ই পরিবার পরিকল্পনা ও সুরক্ষিত যৌন আচরণ থেকে বঞ্চিত হয়।
পরিবার পরিকল্পনা সেবার আওতায় না থাকার কারণে কনডম ব্যবহারের হার কম। তরুণেরা প্রায়ই জানে না কীভাবে কনডম ব্যবহার করতে হয়, কোথায় সহজে তা পাওয়া যায়। যৌনরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা নেই।
কনডম ব্যবহার সুরক্ষিত যৌনচর্চার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়া কনডম ব্যবহার সম্পর্কিত আচরণগত পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের ক্ষমতায়ন করা দরকার, যাতে তারা যৌনস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হয়ে সুরক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
স্কুল হেলথ প্রোগ্রাম, কমিউনিটি কার্যক্রম, সরকারি ও বেসরকারি মিলে এই উদ্যোগ কার্যকর করা যেতে পারে। সঠিক মানের কনডম সহজলভ্য ও ব্যবহারযোগ্য করতে সরকার, এনজিও এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং নিরাপদ যৌনচর্চা নিশ্চিত করলে শুধু যৌনরোগ রোধই নয়, অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসও সম্ভব। এভাবেই জন্মনিরোধ কার্যক্রম তরুণদের জন্য বাস্তব এবং ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে।
আবু জামিল ফয়সাল
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ
জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তরুণদের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে তাদের জীবনধারা ও সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। অনেক তরুণই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনত নয়। তাই তথ্য কেবল দেওয়া নয়, গ্রহণযোগ্য ভাষায় এবং ব্যবহারিক উপায়ে তা পৌঁছে দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কনডম ব্যবহার কেবল গর্ভনিরোধ নয়, যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণদের অনেকেই প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইনে তথ্য খোঁজেন, যা সব সময় সঠিক নয়। তাই নিরাপদ, গ্রহণযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন। কনডম কেবল গর্ভনিরোধ নয়, যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধেও কার্যকর।
অবিবাহিত তরুণদের সরাসরি জন্মনিয়ন্ত্রণ না দিলে এবং তথ্য ও স্বাস্থ্য উপকরণ দেওয়া যেতে পারে। এতে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।
তরুণদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রহণযোগ্যতা। যদি তারা বুঝে যে এটি তাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য, তবে তারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করবে। তাই ভাষা এবং উপস্থাপনায় সরলতা ও বাস্তবতা জরুরি।
নতুন প্রজন্মকে নিরাপদ ও সচেতন প্রজননস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রগ্রেসিভ নীতিমালা এবং কার্যকর প্রোগ্রাম প্রয়োজন। তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নীতিমালা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা করা গেলে, তারা নিরাপদ এবং পরিকল্পিত জীবনযাপনের দিকে এগোতে পারবে।
আবু সাঈদ হাসান
যৌন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিশেষজ্ঞ, ইউএনএফপিএ
বাংলাদেশে গর্ভনিরোধ ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা বা ভুল ধারণা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অনেক নারী ও পুরুষ এখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সঠিক তথ্য জানেন না, যার প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নয়, পুরো জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে।
কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ মায়ের শরীর দুর্বল করে, জটিলতা বাড়ায় এবং শিশুর মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত করা হয়, যা নারীর মানসিক চাপ বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করে।
মূল সমস্যার পেছনে রয়েছে শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, পরিবার ও সমাজের চাপ এবং গর্ভনিরোধ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা। অনেকেই মনে করেন, গর্ভনিরোধ ব্যবহারে ভবিষ্যতে সন্তান হবে না বা শরীরের ক্ষতি হবে। ফলে সঠিক তথ্যের অভাবে গর্ভনিরোধ ব্যবহার কম থাকে, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়ে যায় এবং নারীর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য জরুরি সচেতনতা বৃদ্ধি, সহজলভ্য ও মানসম্মত গর্ভনিরোধ সেবা নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সঠিক তথ্য প্রচার করা। কেবল বাল্যবিবাহ প্রতিরোধই যথেষ্ট নয়, কিশোরী ও অল্প বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধ সম্পর্কেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
যদি সঠিক তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করা হয়, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস পাবে, জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে এবং দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও টেকসই ও উন্নত হবে। – অনলাইনে দেওয়া বক্তব্য
সুপারিশজন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সহজলভ্য রাখতে সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও অংশীদারত্ব জোরদার করতে হবে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা, তথ্যপ্রদান ও নিরাপদ সেবা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে অবিবাহিত ও কিশোরী বয়সীদের জন্য।
তথ্য ও সেবা তরুণদের কাছে গ্রহণযোগ্য ভাষা এবং বাস্তব উপায়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।
প্রজনন স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও নজরদারি মাধ্যমে সেবা সর্বজনীনভাবে পৌঁছানো।
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কুসংস্কার দূরীকরণ জরুরি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও প রজননস ব স থ য প রজননস ব স থ য ন প রজনন স ব স থ য ন র পদ ম ত ত ব বড় চ য ল ঞ জ জনস ব স থ য ন শ চ ত করত র ক ষমত য ন গ রহণয গ য ব যবহ র কর শ বব দ য ল ন শ চ ত কর ব শ বব দ য ত দ র জন য দ র ক ষমত ব যবহ র ক অপর হ র য আনম ট ন ড ও প রজনন সহজলভ য ব শ ষ কর ই আম দ র ও পর ব র আম দ র প ল ইসল ম ক র যকর জনস খ য ব যবস থ ব সরক র হ র কম স রক ষ সন ত ন উদ য গ র জ বন উদ দ ন তর ণ র লক ষ য স ফল য জন ম র ও তর ণ দ র কর ন র জন র অন ক গ রহণ সমস য এনজ ও র ওপর সবচ য় বছর র সবচ য
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।