দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও এক নতুন এবং গুরুতর মোড় নিয়েছে। এত দিন ডেঙ্গুর ধরন ডিইএনভি–২–এর প্রকোপ বেশি থাকলেও সম্প্রতি ধরন ডিইএনভি–৩–এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর এই নতুন ধরনের জোরালো বিস্তার স্পষ্ট বিপৎসংকেত। কেবল সংক্রমণের হার নয়, রোগ অনুপাতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার এবার আগের দুই বছরের চেয়েও বেশি—যা প্রমাণ করে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও গবেষকদের মতে, ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একবার ধরন-২–এ আক্রান্ত রোগী দ্বিতীয়বার নতুন ধরন-৩–এ আক্রান্ত হলে তাঁর মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আগেকার ধরন-২–এর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, নতুন ধরন-৩–এর বিরুদ্ধে তা অকার্যকর। নতুন ধরনগুলো প্রায়ই নতুন উপসর্গ নিয়ে আসে। এতে রোগনির্ণয়ে দেরি হয় ও রোগী জটিলতার মুখে পড়েন। ডেঙ্গুতে ডায়রিয়ার মতো নতুন উপসর্গ চিকিৎসকদের দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে বিভ্রান্ত করতে পারে, যা রোগীর জীবন বিপন্ন করে তোলে।

ডেঙ্গু সংক্রমণের মাত্র ২৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীর হলেও মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ ঘটেছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। যদিও ঢাকার বাইরের রোগীরা জটিলতা নিয়ে রাজধানীতে আসছেন, তবু এই উচ্চ মৃত্যুহার ঢাকার চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন তোলে। জাতীয় গড় মৃত্যুহার যেখানে শূন্য দশমিক ৪৪, সেখানে ঢাকায় তা দ্বিগুণ—শূন্য দশমিক ৯৮। ঢাকার বাইরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গুর জটিলতা ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকাও কেন্দ্রীয় মৃত্যুহার বাড়ানোর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী।

ডেঙ্গুর নতুন ধরন মোকাবিলায় এখন জরুরি ভিত্তিতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শুধু মশকনিধন অভিযান নয়, বরং প্রয়োজন আরও সুনির্দিষ্ট ও তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপ। সরকারকে আইইডিসিআরের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে নতুন ধরনগুলোর গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নতুন ধরন-৩–এর উপসর্গগুলো (যেমন ডায়রিয়া) সম্পর্কে দেশের সব চিকিৎসককে দ্রুত প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে রোগনির্ণয়ে কোনো বিলম্ব না ঘটে। ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুর জটিল চিকিৎসা (যেমন শক সিনড্রোম ব্যবস্থাপনা) এবং পরীক্ষার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জটিল রোগীদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন না হয়। ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের জন্য মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

ডেঙ্গু এখন আর কেবল একটি মৌসুমি রোগ নয়, এটি বছরব্যাপী স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘসূত্রতা বা অবহেলা নয়, চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী কঠোর পদক্ষেপ। আশা করি, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে মনোযোগী হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র ধরন ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

ইতালিকে হারিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে নরওয়ে

আরলিং হালান্ড যেন নিজেই ইতিহাস লিখে চলেছেন। দুই মিনিটের ব্যবধানে তার দুর্দান্ত দুই গোল ইতালিকে সান সিরোতে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে নরওয়েকে নিয়ে গেল ১৯৯৮ সালের পর তাদের প্রথম বিশ্বকাপে। ম্যানচেস্টার সিটির এই সুপারস্টারের গ্রুপপর্বে গোলসংখ্যা দাঁড়াল ১৬। যা পোল্যান্ডের রবার্ট লেভানদোভস্কির রেকর্ডের সমান।

‘গ্রুপ–আই’ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোয়ালিফাই করতে নরওয়ের সামনে ছিল শুধু গণিতের হিসাব মেলানোর অপেক্ষা। তাদের বাদ দিতে ইতালির দরকার ছিল অবাস্তব এক নয় গোলের ব্যবধান। যা মাঠে সম্ভব হয়নি। তাই দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বমঞ্চে ফিরতে যাচ্ছে নরওয়ে। আত্মবিশ্বাসও আকাশছোঁয়া।

আরো পড়ুন:

আসিফের মন্তব্যে বাফুফের কাছে বিসিবি সভাপতির দুঃখ প্রকাশ

অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের দোরগোড়ায়

গত জুনে ইতালিকে ৩–০ গোলে হারানো ম্যাচটাই শেষ পর্যন্ত লুচিয়ানো স্পালেত্তির চাকরি শেষ করে দেয়। তার উত্তরসূরি জেনারো গাত্তুসো এবার প্লে-অফের প্রস্তুতি নেবেন।

গাত্তুসো তার সেরা খেলোয়াড়দেরই দলে ফেরান। মোলদোভার বিপক্ষে খেলা দলে কেবল জিয়ানলুকা মানচিনি টিকে থাকেন। অন্যদিকে নরওয়ের একমাত্র পরিবর্তন, এস্তোনিয়ার বিপক্ষে খেলা অস্কার ববের জায়গায় নামেন ক্রিস্টিয়ান থরস্টভেট।

প্রথমার্ধজুড়ে ইতালি ছিল আধিপত্যে। ফেদেরিকো দিমারকোর ভলিটি সামান্য বাইরে গেলে ১১তম মিনিটে আলো ছড়ান মাত্র ২০ বছর বয়সী ফ্রানচেস্কো পিও এসপোসিতো। দুর্দান্ত টার্ন আর নিখুঁত ফিনিশ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন তিনি।

এরপর এসপোসিতো আরেকটি হেড বাইরে পাঠালেও দুই দলই তেমন পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। মাঝপথে রেফারির সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে গাত্তুসো কার্ডও দেখেন।

বিরতির পর যেন নতুন উদ্যমে মাঠে নামে নরওয়ে। আলেকজান্ডার সর্লোথের শট বার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এরপর চুলের অনন্য সাজে পরিচিত জুলিয়ান রাইয়েরসনও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি।

অবশেষে ৬৩তম মিনিটে গোল মেলে। সর্লোথের পাস থেকে দারুণ ড্রাইভে দূর কোণে বল পাঠান আন্তোনিও নুসা। জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা নিকটের পোস্টে চেষ্টা করেও আটকাতে পারেননি।

এরপর নুসার আরেকটি নিশ্চিত গোল দোনারুম্মা ঠেকালেও ম্যাচের মঞ্চ তখন তৈরি হালান্ডের জন্য। মানচিনির ঘন পাহারা ভেদ করেই তিনি নিজের ছন্দ খুঁজে নেন।

৭৮ মিনিটে বদলি নেমে চমৎকার ফুটওয়ার্কে বল এগিয়ে দেন অস্কার বব। সেখান থেকেই ভলিতে দুর্দান্ত ফিনিশ করেন হালান্ড। মাত্র এক মিনিট পর থরস্টভেটের ডান দিকের ক্রসে আবার গোল। ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছে সহজ ট্যাপ-ইনে বল জালে জড়ান।

শেষ দিকে মাতেও পোলিতানোর শট অল্পের জন্য বাইরে গেলেও ইতালির আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না। যোগ করা সময়ে উলভসের ইয়র্গেন স্ট্র্যান্ড লার্সেন ডান দিক দিয়ে দারুণ দৌড়ে মানচিনিকে কাটিয়ে বক্রশটে দোনারুম্মাকে পরাস্ত করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-১।

রাতটা তাই নরওয়ের। হালান্ডের জোড়া গোলের উৎসবে তারা ফিরল বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে, দুই যুগের বেশি সময় পর।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ