লাদাখ কেন হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠল, ‘থ্রি ইডিয়টসরে র্যাঞ্চো’ কেন মোদির নিশানায়
Published: 26th, September 2025 GMT
অশান্ত লাদাখ শান্ত করতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার পরিচিত পথেই হাঁটছে। বুধবারের গোলমালের জন্য সরকার যাঁকে ‘পালের গোদা’ ঠাউরেছে, ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত সেই শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকের সংস্থার বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করেছে। তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তও শুরু করেছে।
শোনা যাচ্ছে, বুধবারের অশান্তিতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে সোমন ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা হতে পারেন। লাদাখের স্বার্থে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েক বছর ধরে তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই প্রথম অশান্তি ছড়াল।
পৃথক রাজ্য গঠন ও লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনকারী জনতার সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষে বুধবার লেহতে চারজন নিহত হন, আহত হন ৮০ জন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, সোনমই জনতাকে সহিংস হতে উসকানি দিয়েছেন। যদিও এ যাবত তেমন আচরণের কোনো উদাহরণ নেই। লাদাখের মানুষের মতে, একদিকে সরকারি ঔদাসীন্য, অন্যদিকে অনশনরত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় জনতার একাংশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপির একাংশ অবশ্য বলাবলি করেছে, সোনম পাকিস্তানের মদদ পাচ্ছেন।
এ রটনার কারণ গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন ‘ব্রিদ পাকিস্তান’–এ সোনমের যোগদান। পাকিস্তানি গণমাধ্যম ‘ডন’ ছিল সেই সম্মেলনের আয়োজক।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা প্রচার করছেন, সেখান থেকে ফেরার পরই পৃথক রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে নতুন আন্দোলন শুরু করেন সোনম ওয়াংচুক। এখন তাঁকে মদদ দিচ্ছে কংগ্রেসও। বিজেপি সরাসরি অভিযোগ করেছে, হিংসাত্মক ঘটনায় স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাও যুক্ত।
লাদাখ বরাবর শান্ত সীমান্ত
জম্মু–কাশ্মীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও লাদাখ কিন্তু বরাবর শান্তিতে দিনাতিপাত করেছে। ১৯৮৯ সালে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সামান্য কিছুদিনের ছোটখাটো সংঘর্ষ ছাড়া বিস্তীর্ণ এই অঞ্চল শান্তই থেকেছে। ৩৬ বছর আগের সেই সংঘর্ষ ছিল মুসলিমপ্রধান কাশ্মীরি আধিপত্য থেকে বৌদ্ধদের মুক্তিলাভের তাগিদে। যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
ওই সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাংশের প্রতিরোধের পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসন হিংসা থামাতে উদ্যোগী হয়েছিল। তারপর থেকে লাদাখে অশান্তির আগুন একবারের জন্যও জ্বলেনি।
কাশ্মীর উপত্যকার অশান্ত হয়ে ওঠার শুরুও সেই ১৯৮৯ সালেই। উপত্যকা থেকে হিন্দু পণ্ডিতদের বিতাড়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল অশান্তি। সেই অশান্তি ক্রমে জম্মুতে ছড়িয়ে পড়ে। আশ্চর্যজনকভাবে তা কিন্তু লাদাখের শিয়া মুসলিম অথবা বৌদ্ধ অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রভাব ফেলেনি।
মুসলিম অধ্যুষিত কারগিল, দ্রাস, মাতাইন, কাঁকসার, বাতালিক, জানস্কার কিংবা বৌদ্ধপ্রধান লেহ থেকেছে নিস্তরঙ্গ দিঘির মতো। অভিযোগ আছে, লাদাখের শিয়াপ্রধান কারগিলকে অশান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশারফ ১৯৯৯ সালে।
এবার লাদাখের বৌদ্ধদের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন কারগিলের মুসলিমরাও। পৃথক রাজ্য ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে তারাও সরব। বৃহস্পতিবার গোটা কারগিলের জনজীবন স্তব্ধ ছিল। সারার্থ, লাদাখের মুসলিম ও বৌদ্ধরা দাবি আদায়ে একজোট।
রাজ্য ভাগ থেকে সলতে পাকানো শুরু
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) ‘এক দেশ, এক নিশান, এক বিধান’ নীতি রূপায়ণের তাগিদে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদি সরকার জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়। খারিজ করে দেওয়া হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। সেই সঙ্গে রাজ্য ভেঙে গড়া হয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখ।
জম্মু–কাশ্মীরের বিধানসভা জিইয়ে রেখে সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জম্মু–কাশ্মীরকে ফের পূর্ণাঙ্গ রাজ্য করে দেওয়া হবে। কিন্তু লাদাখ থাকবে কেন্দ্রশাসিত। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে লাদাখের জনগণ স্বাগতও জানিয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের আধিপত্যমুক্ত হয়ে তারা খুশি হয়েছিল।
রাজ্যের মর্যাদার দাবি লাদাখের জনগণ এই বছরের গোড়াতেও কিন্তু জানায়নি। তারা চাইছিল, আঞ্চলিক সত্ত্বা রক্ষা করতে সরকার তাদের স্বশাসন দিক। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় নিয়ে আসুক। লেহ্ ও কারগিলের জন্য দুটি লোকসভার আসন দিক (বর্তমানে একটি আসন) এবং লাদাখের জন্য একটি পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করুক।
ভারতের লাদাখে কারফিউ জারির পর সড়কে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, লেহ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ক রগ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পন্থা হচ্ছে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।”
আরো পড়ুন:
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘অতীতের প্রতিশোধ নয়’: প্রধান কৌঁসুলি
এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগে এ বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেন, “এমন একটি ট্রাইব্যুনাল যেখানে ন্যায্যভাবে অভিযোগ যাচাই ও পরীক্ষা করা হয়, সেখানে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না।”
তিনি আরো যোগ করেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এই অভিযোগগুলো হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তিনি তার মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত রেকর্ড নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন
ঢাকা/রফিক