রাজশাহীসহ তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
Published: 26th, September 2025 GMT
উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ অঞ্চলের বাসমালিক পক্ষ হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাস চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে এবং সময়ও লাগছে বেশি।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া পবার দামকুড়ার কামাল হোসেন বাস বন্ধ পেয়ে বিপাকে পড়েন। পরে তিনি প্রথমে বানেশ্বর, সেখান থেকে নাটোর, এরপর সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি সব বন্ধ। পরে বাঘা থেকে একটি লোকাল বাসে করে পুঠিয়ার বানেশ্বর নামি। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে নাটোরে, এরপর একটি লোকাল বাসে সিরাজগঞ্জ যাই। এরপর রংপুর থেকে আসা একটি বাসে করে ঢাকায় পৌঁছাই।’
কামাল জানান, সাধারণত তাঁর ৭০০ টাকা ভাড়া লাগলেও আজ লেগেছে ১ হাজার ২০০ টাকা। সারা দিন অনেক ভোগান্তি গেছে, সময়ও লেগেছে অনেক বেশি।
কামালের মতো আরও অনেক যাত্রী এই বাস ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। শুক্রবার বিকেলে রায়হান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরও আজ ঢাকায় যাওয়া জরুরি। বাস বন্ধ জেনেও তিনি বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। রায়হান বলেন, ‘শুনেছিলাম, বিকেলের মধ্যে বাস চালু হবে, কিন্তু এসে দেখি চালু হচ্ছে না। এখন একটা প্রাইভেট গাড়ি খুঁজছি, কয়েকজন মিলে ভাড়া করে যাব।’
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে একতা ট্রান্সপোর্ট ও কয়েকটি লোকাল বাস ছাড়া অন্য সব দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দুই দিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তাঁরা বাস চলাচল শুরু করলেও আশানুরূপ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত একতা ছাড়া বাকি সব বাস বন্ধ ছিল। এবার অবশ্য মালিকদের পক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, যা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। শুক্রবার সকালে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।