সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী কদমতলী মধ্যপাড়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই মাদক, চুরি, ছিনতাই এবং উদ্বেগজনকভাবে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসি। ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলের অলিগলিতে প্রায়ই ঘটে চলেছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অবশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কদমতলী মধ্যপাড়া বাইতুল আশা জামে মসজিদের সামনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্থানীয় এলাকাবাসি এবং পুলিশ প্রশাসন মাদক ও অপরাধ নির্মূলে একযোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

মহল্লাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলমের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, জরুরি দাপ্তরিক কাজের কারণে তার পরিবর্তে থানার অপারেশন ওসি মো.

ওমর ফারুক প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

বাইতুল আশা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. নাজিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন।

সভার শুরুতে অপারেশন ওসি মো. ওমর ফারুক তার বক্তব্যে বলেন, মাদক একটি নীরব ঘাতক, যা ক্যান্সারের মতো একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি কেবল নিজের জীবনই বিপন্ন করে না, তার পরিবারকেও ঠেলে দেয় এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। তিনি ঘোষণা করেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করেছি এবং সিদ্ধিরগঞ্জে আমাদের বিশেষ অভিযান নিয়মিতভাবে চলছে।

তিনি কদমতলী মধ্যপাড়ার অপরাধ প্রবণতার কারণ হিসেবে এর ঘনবসতি এবং বাহিরাগতদের আনাগোনাকে চিহ্নিত করে বলেন, এই এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী হওয়ায় বাইরের অনেকেই এখানে এসে মাদক সেবন করে এবং নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এখান থেকেই কিশোর গ্যাংয়ের মতো ভয়ঙ্কর চক্র গড়ে উঠছে, যা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। 

তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, এলাকাবাসী যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তবে আমরা আরও কঠোরভাবে এই সকল অপরাধ দমন করতে সক্ষম হব। আপনাদের একটি সঠিক তথ্য আমাদের একটি বড় অভিযান সফল করতে সাহায্য করতে পারে।

সভায় দীর্ঘদিনের একটি সমস্যার কথা তুলে ধরে ওসি ওমর ফারুক বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এই এলাকায় এখনো কোনো বিট পুলিশিং অফিস নেই। ফলে পুলিশের নিয়মিত নজরদারি এবং জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন কঠিন হয়ে পড়ে। যদি এলাকাবাসী একটি উপযুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করে দেন, তবে আমরা দ্রুত এখানে একটি বিট পুলিশিং অফিস স্থাপন করতে চাই।

তিনি মনে করেন, বিট পুলিশিং অফিস স্থাপিত হলে এখানে নিয়মিত পুলিশি টহল থাকবে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যার মাধ্যমে মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের মতো অপরাধ চিরতরে নির্মূল করা যাবে, ইনশাআল্লাহ।

সভায় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. সেলিম সরকার, আবু তাহের, আবুল কাশেম মেকার, রহিম চৌধুরী এবং হাজী এলাহীসহ আরও অনেকে। তারা তাদের বক্তব্যে এলাকার বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেন, সন্ধ্যার পর আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পায়। ছিনতাইকারী এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এতটাই বেপরোয়া যে তাদের কাছে সাধারণ মানুষ অসহায়। 

তারা পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিতে চাই। এলাকাকে অপরাধমুক্ত করতে আমরা পুলিশকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বিট পুলিশিং অফিস স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা আমরা করব।

এই আলোচনা সভাটি যেন এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও উদ্বেগের এক বহিঃপ্রকাশ ছিল। একই সাথে পুলিশের পক্ষ থেকে এমন বলিষ্ঠ আশ্বাস এবং সহযোগিতার আহ্বানে তারা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। পুলিশ ও জনতার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা অচিরেই সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী মধ্যপাড়াসহ আশেপাশের এলাকাকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য স্থানে পরিণত করবে  এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অপর ধ স দ ধ রগঞ জ এল ক ব স আম দ র ছ নত ই এল ক র অপর ধ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা

কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।

সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ