Prothomalo:
2025-10-03@03:55:23 GMT

আড়িয়ল বিলে পাখির খোঁজে

Published: 28th, September 2025 GMT

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্য প্রাণী শাখার একটি গবেষণা দল নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম মুন্সিগঞ্জ জেলার আড়িয়ল বিলে, বিশেষ প্রজাতির পাখির খোঁজে। ভোর থেকেই থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, মেঘের আড়ালে সূর্য লুকিয়ে ছিল। এমন বিরূপ প্রকৃতির মধ্যেই পাখির খোঁজে রওনা দিলাম। কয়েকবার যানবাহন পরিবর্তন করে আড়িয়ল বিলের গাদিঘাটে পৌঁছালাম ঠিক সকাল ৯টায়।

ঘাট থেকে একটি ট্রলারে করে বিলে বিশেষ প্রজাতির পাখির খোঁজে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। শুরুতেই বেশ কিছু ফিঙে, শালিক আর পানকৌড়ির দেখা মিলল। কিছুক্ষণ পর চোখে পড়ল একটি জলময়ূর। পদ্মফুলের ভাসমান পাতার ওপর স্ত্রী জলময়ূরটি তার সঙ্গে থাকা তিনটি ছানাকে খাবার খাওয়া শেখাচ্ছিল। আনন্দের সঙ্গে এই সুন্দর মুহূর্তগুলোর বেশ কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দী করা হলো। পাখি খুঁজতে খুঁজতে বেশ কিছু দূর ট্রলার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করে পানিতে অর্ধেক নিমজ্জিত একটি গাছে কালো রঙের পিঠ এবং মাথায় ঝুঁটিওয়ালা একটি পাখি দেখতে পেলাম। আমাদের গবেষণা দলের উজ্জ্বল দাসকে বললাম দ্রুত বেশ কিছু ছবি তুলতে। সে পাখিটির বেশ কিছু সুন্দর ছবি তুলে নিল। ছবি দেখে বুঝলাম এটি মূলত পাকরা-পাপিয়া, যাকে ইংরেজিতে Jacobin Cuckoo অথবা Pied Cuckoo বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Clamator jacobinus । এটি বাংলাদেশের একটি গ্রীষ্মকালীন পরিযায়ী পাখি। লোককথা অনুযায়ী, এই পাখি নাকি শুধু আকাশ থেকে পড়া বৃষ্টির পানি পান করে, আর অন্য কোনো পানি পান করে না। এটি সত্য কি না, তা এখনো কোনো গবেষণায় পাওয়া যায়নি। এভাবে পানি পানের কারণে এদের ‘চাতক’ নামেও ডাকা হয়।

বর্ষায় নানা রকম কীটপতঙ্গ বিশেষ করে শুঁয়াপোকা ও ঘাসফড়িং প্রচুর পাওয়া যায়, যা এই পাখিগুলোর প্রধান খাদ্য। তাই গ্রামবাংলার কোথাও কোথাও একে ‘বর্ষার দূত’ বা ‘বৃষ্টিপাখি’ নামেও ডাকা হয়।

পাখিটির পিঠ, মাথা ও ঘাড় কালচে বর্ণের। ডানা ও লেজও কালচে। বুক, পেট ও গলা সাদা বর্ণের। পা ও ঠোঁট কালচে। মাথায় ছোট্ট একটি কালো ঝুঁটি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে এদের প্রাথমিকভাবে চেনা যায়। তবে এদের আরও দৈহিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন লেজের প্রান্ত সাদা, ডানার প্রাথমিক পালকের গোড়ায় সাদা ছোপ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এদের পিঠ কালচে বাদামি হয়ে থাকে।

এই প্রজাতির পাখিগুলোর বাসস্থান বেশ বৈচিত্র্যময়। এদের ঘন জঙ্গলে পাওয়া যায় না, বরং খোলা জায়গা এবং প্রান্তিক পরিবেশের ঝোপঝাড়, তৃণভূমি আর কৃষিজমির আশপাশে এদের পাওয়া যায়। এরা বাংলাদেশে মূলত বর্ষার আগেই চলে আসে, কারণ বর্ষায় নানা রকম কীটপতঙ্গ বিশেষ করে শুঁয়াপোকা ও ঘাসফড়িং প্রচুর পাওয়া যায়, যা এই পাখিগুলোর প্রধান খাদ্য। তাই গ্রামবাংলার কোথাও কোথাও একে ‘বর্ষার দূত’ বা ‘বৃষ্টিপাখি’ নামেও ডাকা হয়। কারণ, এর ডাক শোনা গেলেই মানুষ ধরে নেয় বৃষ্টি আসছে। যেহেতু এরা পরিবেশের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে, তাই এরা বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলের ক্ষতি কমিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং অর্থনৈতিকভাবে এদের অবদান অনেক।

স্ত্রী চাতক পাখি সরাসরি ফিঙে, ময়না, বুলবুলসহ অন্য পাখির (হোস্ট পাখির) বাসায় ডিম দেয়। কখনো হোস্ট পাখি তার বাসায় প্রত্যাশিত ডিম চিনতে পারলে সেটি বাসা থেকে ফেলে দেয় বা ভেঙে ফেলে।

এই গোত্রের পাখিগুলো সবাই পরিযায়ী নয়, কিছু কিছু আবাসিক রয়েছে অর্থাৎ সারা বছর একই এলাকায় থেকে যায় এবং বংশ বৃদ্ধি করে। তবে পরিযায়ীগুলো আফ্রিকার পূর্ব দিক যেমন ইথিওপিয়া, সুদান, কেনিয়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে আসে। বর্ষায় বাংলাদেশে এদের খাবারের প্রাচুর্য থাকায় এখানে প্রজনন করতে চলে আসে। তবে এদের প্রজননব্যবস্থা একটু ভিন্ন রকমের, কারণ এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে থাকে। এ ধরনের প্রজনন আচরণকে প্রাণিবিদ্যার ভাষায় ব্রুড প্যারাসিটিজম বলা হয়।

স্ত্রী চাতক পাখি সরাসরি ফিঙে, ময়না, বুলবুলসহ অন্য পাখির (হোস্ট পাখির) বাসায় ডিম দেয়। কখনো হোস্ট পাখি তার বাসায় প্রত্যাশিত ডিম চিনতে পারলে সেটি বাসা থেকে ফেলে দেয় বা ভেঙে ফেলে।

আবার কখনো কখনো চাতক পাখির ডিমের রং অনেকটা হোস্ট পাখির ডিমের সঙ্গে মিলে যায়। এটি চাতক পাখির একটি অভিযোজন কৌশল। ডিমে তা দেওয়া থেকে শুরু করে ছানা লালন-পালন ও তাদের খাওয়ানো সব হোস্ট পাখিই করে থাকে। চাতক পাখি এ কাজে কোনো ভূমিকা রাখে না। চাতক পাখির ছানা সাধারণত দ্রুত বাড়ে, যাতে হোস্টের ছানাদের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে খাবার বেশি খেতে পারে। অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে চাতকের ছানা হোস্ট পাখিটি তার বাসা থেকে ফেলে দেয়, যাতে চাতক পাখির ছানাগুলোর সঙ্গে হোস্ট পাখির ছানাগুলোর খাবারের প্রতিযোগিতা না হয়। ঘটনাটি হৃদয়বিদারক হলেও এটি প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যেরই অংশ।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ আইইউসিএন ২০১৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এরা ঝুঁকিমুক্ত ক্যাটাগরিভুক্ত। তবে পরিবেশদূষণ, নগরায়ণ আর এই প্রজাতির পাখিগুলোর আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এদের প্রজননের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল ও গাছপালা অপ্রতুল থাকায় সহজে প্রজনন করতে পারছে না।

আড়িয়ল বিল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর একটি উল্লেখযোগ্য প্লাবনভূমি। এই জীববৈচিত্র্য সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধ করছে। কেননা বাংলাদেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ জীবন–জীবিকার জন্য প্লাবনভূমির ওপর নির্ভরশীল। তাই গবেষণার মাধ্যমে আড়িয়ল বিলের জীববৈচিত্র্য উন্মোচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আড়িয়ল বিলের জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে পাখির বৈচিত্র্যের বিস্তারিত তথ্য উন্মোচন করতে পারলে তাদের সংরক্ষণ করা সহজ হবে।

মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, অধ্যাপক ও প্রাণী গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বব চ ত র য ক টপতঙ গ প রজনন পর ব শ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড, ঘনীভূত হতে পারে লঘুচাপ 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপটি উপকূলীয় ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। 

এদিকে, আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। 

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ