রোমাঞ্চে মোড়া এক রাত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলোয় ভাসছিল এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই। গ্যালারিতে উত্তেজনার ঢেউ, মাঠে ঝড় ওঠা আবেগ; সব মিলিয়ে যেন ক্রিকেট হয়ে উঠেছিল কাব্যেরই এক রূপ।

‘এশিয়া কাপ-২০২৫’–এর ফাইনাল মহারণে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ভারত ছিনিয়ে নিলো অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট। মহাদেশীয় ক্রিকেটে এটা তাদের নবম শ্রেষ্ঠত্ব, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্বিতীয়। ২০১৬–র পর আবারও টি-টোয়েন্টিতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি উঠল ভারতীয়দের হাতে।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন

বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন মিথুন মানহাস

তবে কেবল ভারতের জয়গাথা নয়, ফাইনালটিকে মনে রাখার মতো করে তুলেছে পাকিস্তানের অপ্রাপ্তিও। শুরুটা ছিল স্বপ্নময়—৯.

৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৪ রান, ১২.৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১১৩/১। তখন প্রজেক্টেড স্কোর দেখাচ্ছিল ১৮০ থেকে ২০০। গ্যালারিতে পাকিস্তানি সমর্থকেরা বুনছিলেন শিরোপা উৎসবের স্বপ্ন। কিন্তু ক্রিকেট যে চিরদিনই অনিশ্চয়তার খেলা! এক সময় ঝড় থেমে গিয়ে সবুজ জার্সির দলটিকে গ্রাস করে দুর্ভাগ্য। ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে পাতা ঝরার মতো— মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে হারায় ৯ উইকেট! ১১৩/১ থেকে ১৪৬ অলআউট। রাতের আকাশে হতাশার নক্ষত্র হয়ে রইল পাকিস্তানের ইনিংস।

ভারতের স্পিন জাদুকরদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে সালমান-শাহীনদের দল। কুলদীপ যাদব যেন এক মায়াবি কবি। স্পেলের শেষ ওভারে মাত্র ১ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ৩০ রানে মোট উইকেট নেন ৪টি। পাশে ছিলেন অক্ষর প্যাটেল (২/২৬), বরুণ চক্রবর্তী (২/৩০) ও বুমরাহর নিখুঁত আঘাত (২/২৫)। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে গিয়েছিল শীতের পাতাঝরার মতোই।

তবুও কিছু আলো ছড়িয়েছেন ফারহান (৫৭) আর ফখর জামান (৪৬)। কিন্তু বাকিদের স্কোর যেন ফোন নম্বরের মতো— ০৮১৬০০৬১!

লক্ষ্যটা বড় ছিল না, কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে ভারতও টালমাটাল হয়ে পড়ে। ২০ রানেই সাজঘরে ফিরে যান অভিষেক শর্মা (৫), সূর্যকুমার যাদব (১) ও শুভমান গিল (১২)। হঠাৎই স্টেডিয়ামে নেমে আসে আশঙ্কার অন্ধকার। কিন্তু সেখানেই আলো জ্বালান তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসন ও শিভম দুবে।

সঞ্জু খেলেন ২৪ রানের শান্ত ইনিংস, দুবে করেন ৩৩ রানের ঝড়ো ক্যামিও। কিন্তু আসল কবিতাটা রচনা করেন তিলক ভার্মা অপরাজিত ৬৯ রানের দীপ্ত ইনিংস খেলে। তার ব্যাট থেকে ঝরে পড়া চার-ছক্কা ছিল যেন রাত্রির আকাশে আতশবাজির ঝলকানি। শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত।

ফাহিম আশরাফ (৩/২৯) আর শাহীন আফ্রিদি (১/২০) লড়াই করেছেন প্রাণপণে, কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল ভিন্ন কবিতা। হারিস রউফের দুই ওভারে ৩০ (১৭ ও ১৩) ভারত ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত হারিসের ওভারেই জয় নিশ্চিত করে।

এভাবেই আবারও ট্রফি উঠল ভারতের হাতে। গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকেরা গেয়ে উঠল বিজয়ের গান। আর পাকিস্তান? তাদের জন্য থেকে গেল গভীর আক্ষেপ— ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু, বোলিংয়েও দারুণ সূচনা, তারপরও ট্রফি ছোঁয়া হলো না। ২০১২ সালের পর থেকে আর হয়নি শিরোপা জয়। এই অপেক্ষার প্রহর হয়তো আরও দীর্ঘ হলো, ঠিক যেন মরুভূমিতে বৃষ্টির প্রতীক্ষা।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ফায়ারফক্সে আসছে এআই উইন্ডো

কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা এআইকেন্দ্রিক ব্রাউজারের বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই ফায়ারফক্সে নতুন এআই উইন্ডো নামের বিশেষ সুবিধা যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মজিলা। সুবিধাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় প্রয়োজন অনুসারে একটি সমন্বিত এআই সহকারীর সাহায্য নিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াই থাকবে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে।

এক ব্লগ বার্তায় মজিলা জানায়, এআই উইন্ডো ব্রাউজিংয়ে ক্ষেত্রে এআই নির্দেশনা ও ব্যক্তিগত সহায়তার সুবিধা দেবে। সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকবে না। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা চাইলে নিজে থেকেই চালু করবেন। যেকোনো সময় বন্ধ করা যাবে। এআইনির্ভর এই সুবিধা ওপেন সোর্স প্রযুক্তির ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে।

ফিচারটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ কিছু ব্যবহারকারীর কাছে উপলব্ধ হয়েছে। মজিলা জানিয়েছে, যে কেউ চাইলে আগের মতোই ফায়ারফক্স ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা পাবেন। আরও বেশি গোপনীয়তা চাইলে প্রাইভেট উইন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন। এআই উইন্ডো ব্রাউজিংকে আরও ব্যক্তিগত উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ দেবে।

এআই চালিত ব্রাউজারের ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি এখন সার্চবারের জায়গায় চ্যাটবট যুক্ত করা বা সম্পূর্ণ এআইনির্ভর ব্রাউজার তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস বা পারপ্লেক্সিটির কমেট পুরোপুরি এআই এজেন্টকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলনির্ভর ব্রাউজারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও ভিন্ন অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে মজিলা। তারা বলছে, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা—এই তিন নীতি সামনে রেখে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দেওয়া হচ্ছে। ওয়েবকে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে চায় মজিলা। মজিলার ভাষ্য অনুযায়ী, ফায়ারফক্সে কোনো একক ইকোসিস্টেমে ব্যবহারকারীকে আটকে রাখা হবে না। এআই ব্যবহারের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। কখন, কীভাবে বা আদৌ এটি ব্যবহার করবেন কি না, এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর।

এ বছরের জুনে ফায়ারফক্সের অ্যাড্রেসবারে থাকা ইউনিফায়েড সার্চ সুবিধায় সরাসরি পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানের অপশন যুক্ত করে মজিলা। নতুন এআই উইন্ডো ফিচার যুক্ত হলে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ