যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য তাঁর প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনায় রাজি হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতনিয়াহু। ‘কীভাবে গাজায় যুদ্ধ শেষ করা যায়’ তা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। হামাসকে এই প্রস্তাবে রাজি করাতে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা কাজ করবেন উল্লেখ করে ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, হামাস এই প্রস্তাবে রাজি হবে।

সোমবার হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ কথাগুলো বলেন। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠকের সময় তাঁরা কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল-থানির সঙ্গে কথা বলেন। ফোনালাপে চলতি মাসের শুরুতে কাতারে হামলা চালানোর ঘটনায় আল-থানির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন নেতানিয়াহু।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, এই প্রস্তাব (২০ দফা) ‘অত্যন্ত ন্যায্য’। তিনি বলেন, অনেক ফিলিস্তিনি শান্তিতে বসবাস করতে চান। কিন্তু তাঁদের ‘নিজেদের ভাগ্যের দায়িত্ব নেওয়া’ প্রয়োজন। ফিলিস্তিনিরা হামাসের সঙ্গে ‘দুর্বিষহ জীবনযাপন’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার আগে ২০ দফার প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। এতে বলা হয়, চুক্তি কার্যকরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, হামাসের যাবতীয় অস্ত্র ধ্বংস করা হবে। যাঁরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাঁদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চান, তাঁদের নিরাপদে অন্য দেশে যেতে সহায়তা করা হবে।

ট্রাম্প বলেন, তিনি শুনেছেন হামাসও এই পরিকল্পনায় রাজি আছে। হামাস যদি এই পরিকল্পনায় একমত হয়, তাহলে  ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্ত হবে এবং গাজা যুদ্ধ শেষ হবে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। তাঁদের তিনি এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর বৈঠকের আগে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার খুব কাছাকাছি আছে। এখন ইসরায়েলের অবস্থান কী করে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। লেভিট বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উভয় পক্ষকেই কিছু ছাড় দিতে হবে।

ট্রাম্প কিছুদিন ধরে বলে আসছেন, গাজা যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে। রোববার সন্ধ্যায় নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় অর্জনের সুযোগ আছে। সবাই বিশেষ কিছু অর্জন করতে ঐক্যবদ্ধ, যা প্রথমবারের মতো ঘটছে। আমরা এটি সম্পন্ন করব।’

আল-শিফা হাসপাতাল এলাকায় বন্দুকযুদ্ধ

গতকাল রাতে গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতাল এলাকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইসরায়েলের সেনারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়েছে। আল–জাজিরা সোমবার রাত ১১টার দিকে এই খবর জানিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের খবর জানা যায়নি।

সোমবার এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, আল-শিফা হাসপাতালের আশপাশে গোলাগুলি হয়েছে। হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলের ট্যাংক অবস্থান নিয়েছে। সোমবার নগরীর আল-হেলু হাসপাতালেও ইসরায়েলের সেনারা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে হাসপাতালে ঢোকা ও বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাসেবা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

আল-শিফা গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সেনারা এই হাসপাতালে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। এতে হাসপাতালের মূল ভবনের অনেকটা ধ্বংস হয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় সোমবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত আরও ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা নগরীতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। ত্রাণ আনতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৪ জন। এ নিয়ে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬ হাজার ৫৫ জন। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৪ জন।

ফ্লোটিলায় হামলার শঙ্কা

চিকিৎসা, শিক্ষাসামগ্রীসহ অন্যান্য ত্রাণ নিয়ে গাজার অভিমুখে আসতে থাকা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায়’ ইসরায়েলে ‘সহিংস হস্তক্ষেপ’ করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোসেফ হিন্টারসেহার। তিনি উভয় পক্ষকে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই নৌবহরে ইউরোপের কয়েকটিসহ ৪৪টি দেশের ৩০০-এর বেশি নাগরিক রয়েছেন। ৫০টির বেশি এই নৌবহরে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। নৌবহরটিতে এরই মধ্যে একাধিকবার হামলা হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। সর্বশেষ হামলার পর ইতালি ও স্পেন ফ্লোটিলার নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ পাঠিয়েছে।

রোববার সুমুদ ফ্লোটিলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনের জলসীমা থেকে ৩৯৯ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। আগামীকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) বা ১ অক্টোবরের মধ্যে তারা গাজা উপকূলে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গাজার ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে এবং উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স ন প রস ত ব স মব র কর ছ ন আল শ ফ

এছাড়াও পড়ুন:

ফায়ারফক্সে আসছে এআই উইন্ডো

কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা এআইকেন্দ্রিক ব্রাউজারের বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই ফায়ারফক্সে নতুন এআই উইন্ডো নামের বিশেষ সুবিধা যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মজিলা। সুবিধাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় প্রয়োজন অনুসারে একটি সমন্বিত এআই সহকারীর সাহায্য নিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াই থাকবে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে।

এক ব্লগ বার্তায় মজিলা জানায়, এআই উইন্ডো ব্রাউজিংয়ে ক্ষেত্রে এআই নির্দেশনা ও ব্যক্তিগত সহায়তার সুবিধা দেবে। সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকবে না। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা চাইলে নিজে থেকেই চালু করবেন। যেকোনো সময় বন্ধ করা যাবে। এআইনির্ভর এই সুবিধা ওপেন সোর্স প্রযুক্তির ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে।

ফিচারটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ কিছু ব্যবহারকারীর কাছে উপলব্ধ হয়েছে। মজিলা জানিয়েছে, যে কেউ চাইলে আগের মতোই ফায়ারফক্স ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা পাবেন। আরও বেশি গোপনীয়তা চাইলে প্রাইভেট উইন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন। এআই উইন্ডো ব্রাউজিংকে আরও ব্যক্তিগত উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ দেবে।

এআই চালিত ব্রাউজারের ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি এখন সার্চবারের জায়গায় চ্যাটবট যুক্ত করা বা সম্পূর্ণ এআইনির্ভর ব্রাউজার তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস বা পারপ্লেক্সিটির কমেট পুরোপুরি এআই এজেন্টকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলনির্ভর ব্রাউজারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও ভিন্ন অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে মজিলা। তারা বলছে, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা—এই তিন নীতি সামনে রেখে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দেওয়া হচ্ছে। ওয়েবকে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে চায় মজিলা। মজিলার ভাষ্য অনুযায়ী, ফায়ারফক্সে কোনো একক ইকোসিস্টেমে ব্যবহারকারীকে আটকে রাখা হবে না। এআই ব্যবহারের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। কখন, কীভাবে বা আদৌ এটি ব্যবহার করবেন কি না, এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর।

এ বছরের জুনে ফায়ারফক্সের অ্যাড্রেসবারে থাকা ইউনিফায়েড সার্চ সুবিধায় সরাসরি পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানের অপশন যুক্ত করে মজিলা। নতুন এআই উইন্ডো ফিচার যুক্ত হলে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ