কাঠের চামচ-খুন্তি-ডালঘুঁটনি বদলে দিল এক জনপদ
Published: 4th, October 2025 GMT
যশোর সদরের তেঘরিয়া গ্রামের একরামুল হোসেন। ৩৪ বছর ধরে তাঁতের গামছা বুননের কাজ করছেন। এই কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। তাই ৫২ বছর বয়সে এসে পেশা বদল করেন। এখন তিনি কাঠের খুন্তি, চামচ, লেবু চাপা, ডালঘুঁটনি তৈরি করে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। নিজেই গড়ে তুলেছেন কারখানা। এখন সেই কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
একরামুলের মতো তেঘরিয়া গ্রামের অন্তত ২৬ জন উদ্যোক্তা কাঠের খুন্তি, চামচ, লেবু চাপা, ডালঘুঁটনি, কাঠের চিরুনিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরির ২৬টি কারখানা গড়ে তুলেছেন। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এসব কুটিরশিল্পে গ্রামের ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তেঘরিয়া থেকে বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকার পণ্য যাচ্ছে সারা দেশে। এভাবে গ্রামের ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প একটি জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে।
আমার কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি। যার বড় অংশ যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারি না। সুবোধ রায়, উদ্যোক্তাসম্প্রতি একরামুল হোসেনের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, একরামুলসহ চারজন চারটি যন্ত্রে কাঠের চামচ ও খুন্তি তৈরির কাজ করছেন। কাজ করতে করতেই একরামুল হোসেন বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৫৯ বছর। এর মধ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছর তাঁতের গামছা ও লুঙ্গি বুননের কাজ করেছি। শেষ দিকে যে টাকা আয় হতো, তাতে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে তাই গ্রামের সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ শিখে নিজেই কাঠের খুন্তি–চামচ তৈরির কারখানা দিলাম। প্রথমে আমার তৈরি খুন্তি–চামচের ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেয় আমার এক ভাতিজা। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয়াদেশ আসতে থাকে। এভাবেই ব্যবসার শুরু।’
একরামুল হোসেন আরও বলেন, ‘শুরুতে সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ শিখে সেখানে উৎপাদনের কমিশনে কাজ করতাম। এরপর এক লাখ টাকা বিনিয়োগে একটি মেশিন কিনি। এখন আমার কারখানায় আটটি যন্ত্র। এসব যন্ত্রে আটজন কাজ করেন। পাশাপাশি গ্রামের নারীরা উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পলিশের কাজ করেন।’
তেঘরিয়া গ্রামের ২৬টি কারখানার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো কারখানা সুবোধ রায়ের। ২০১২ সালে সুবোধ রায় কারখানাটি গড়ে তোলেন। এর আগে তিনি কাঠের আসবাব তৈরির কাজ করতেন। তাঁর কারখানা থেকে এর মধ্যে ৫০ জন কাজ শিখে হয় নিজেরা কারখানা করেছেন, নয়তো অন্যের কারখানায় কমিশনে কাজ করছেন।
সরেজমিনে সুবোধ রায়ের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার দুটি অংশ। এক অংশ থেকে কাঠ কেটে সাইজ করে অন্য অংশে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই কাঠের গায়ে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। খুন্তি, চামচ তৈরির পর সেগুলো বান্ডিল করে গ্রামের নারীরা বাড়িতে নিয়ে পলিশের কাজ করেন।
সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ করেন প্রদীপ ভাস্কর। তিনি বলেন, ‘আমি কাটিং কারখানায় উৎপাদনের ওপর কমিশনে কাজ করি। তাতে মাসে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের গ্রামে বসে মাসে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সত্যিই খুব সৌভাগ্যের বিষয়। এ গ্রামের মানুষ এখন কাঠের কাজের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।’
কারখানার মালিক সুবোধ রায় বলেন, ‘আগে থেকেই আমি কাঠের আসবাব তৈরির কাজ করতাম। পরে চিন্তা করলাম বয়স বাড়ছে, নিজে কোনো কারখানা করলে শেষ বয়সে বাড়িতে বসেই দেখভাল করা যাবে। সেই সঙ্গে গ্রামের নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই চিন্তা থেকে ১৪ বছর আগে এই কারখানা গড়ে তুলেছি। এখন আমার কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি। যার বড় অংশ যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারি না। কারণ, সব সময় বিদ্যুৎ থাকে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেলে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারতাম।’
তেঘরিয়া গ্রামের সবচেয়ে বড় কারখানা এখন দিলীপ কুমার দাশের। তাঁর কারখানায় কাজ করেন ৩৫ থেকে ৪০ জন। তিনি বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন। একরামুল হোসেন, সুবোধ রায়, দিলীপ দাশের পাশাপাশি রমেশ রায়, অমল রায়, মণি গোপাল, সুজন রায়ের মতো উদ্যোক্তারা এই গ্রামে গড়ে তুলেছেন কুটিরশিল্প। তাতেই বদলে গেছে এই গ্রামের মানুষের ভাগ্য।
ক্রেতারা বলছেন, তেঘরিয়া গ্রামে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ভালো, দামও তুলনামূলক কম। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই গ্রামে উৎপাদিত পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী।
এ বিষয়ে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী তুহিন পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যশোরের মতো কাঠের খুন্তি, চামচ তৈরি কারখানার সন্ধান অন্য কোথাও পাইনি। যশোরের সুবোধ রায়ের কারখানা থেকে প্রতি মাসে অন্তত দুই লাখ টাকার পণ্য পাইকারি কিনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করি। ওই কারখানার পণ্যের গুণগত মান ভালো, দামও তুলনামূলক কম।’
ঢাকার আরেক পাইকারি ক্রেতা মো.
উদ্যোক্তা ও শ্রমিকেরা জানান, ‘মূলত মেহগনি কাঠ দিয়ে এসব পণ্য তৈরি হয়। মান বাড়াতে অনেক সময় নিম ও শিশু কাঠ ব্যবহার করা হয়। তেঘরিয়া গ্রামের এই কুটিরশিল্পের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মূলধন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে।
একাধিক উদ্যোক্তা জানান, এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা মূলধনের অভাব। গ্রামে অনেক এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে। এসব এনজিও থেকে চড়া সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে হয়। সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ পাওয়া গেলে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ সহজ হতো। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক এনাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই গ্রামে ২৬টি কুটিরশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, এটি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই আমি ওই গ্রামের কারখানাগুলো পরিদর্শন করে কুটিরশিল্পের সুবিধার আওতায় আনব। এসব উদ্যোক্তাকে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব। বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন রবচ ছ ন ন ব দ য ৎ সরবর হ একর ম ল হ স ন উদ য ক ত দ র ক জ কর ন র ক জ কর ক জ করত উৎপ দ ত ত ঘর য় ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
শীতের আগাম সবজি হিসেবে বাজারে এসেছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। মৌসুমের শুরুতে দাম স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দাম ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। খুচরা পর্যায়ে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি পিছ ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সরবরাহ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এসব সবজির দাম আরও কমবে। ভরা মৌসুমে খুচরা পর্যায়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমে ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে নেমে আসে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে গত তিন বছরে ফুলকপির উৎপাদন বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং বাঁধাকপির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। উৎপাদন বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। প্রথম দিকে যেসব ফসল আসে, সেগুলো সাধারণত আকারে ছোট হয়। তবে বাজারে সরবরাহও তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং আগাম সবজির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকায় দাম বাড়তি থাকে।
ফুলকপি শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। রান্না তরকারি, ভাজি, স্যুপ, হালকা সেদ্ধ কিংবা সালাদ হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বাঁধাকপিও ভাজি, স্যুপ ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। শীত মৌসুমে স্বাদের দিক থেকেও এ দুটি সবজি অনেকেরই পছন্দ।
উৎপাদন কেমনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টন হয়। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ফুলকপি উৎপাদন আরও বেড়ে ১৫ লাখ টনে ওঠে।
অন্যদিকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন বাধাঁকপি উৎপাদন হয়। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন হয়। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টন হয়েছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে টানা ফুলকপি ও বাঁধাকপির উৎপাদন বাড়ছে।
বাঁধাকপির চেয়ে বেশি জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। যেমন, গত অর্থবছরে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছিল, যেখানে বাধাঁকপি চাষ হয়েছিল ৪৪ হাজার হেক্টরে। উৎপাদনের দিক থেকেও ফুলকপি এগিয়ে।
ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গত দুই বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তাঁরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সবজি দুটির চারা লাগিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, এ বছর শীত মৌসুমেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাবে।
এখন আসছে আগাম ফলনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সম্প্রসারণ) এইচ এম মনিরুজ্জামান জানান, সাধারণত আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বারি (শীতকালীন) ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ শুরু হয়। প্রথমে বীজ বপন করে চারা গাছ তৈরি করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর সেই চারা রোপণ করা হয়। সাধারণত চারা লাগানোর পরে তা বিক্রির উপযোগী হতে ৮০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। অনেক সময় বাজারে দাম বাড়তি থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও (ছোট অবস্থায়) ফসল তুলে বিক্রি করেন কৃষকেরা।
আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরে যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে আগাম ফসল। বর্তমানে এই আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব আগাম সবজি বাজারে আসবে। এরপর মৌসুমের মূল সবজি আসা শুরু করবে।
সাধারণত মৌসুমের শুরুতে কোনো সবজি এলে (আগাম) সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এতে কৃষক, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী—সবাই লাভবান হন। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও কৃষকেরা আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন।
আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে কিছুটা ছোট হয়। বড় হওয়ার আগেই কৃষকেরা এগুলো তুলে বাজারে আনেন। যেমন, বর্তমানে যেসব ফুলকপি বাজারে আসছে, সেগুলোর ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। ভরা মৌসুমে এক থেকে দেড় কেজি কিংবা তারও বেশি ওজনের ফুলকপি বাজারে আসে। বর্তমানে যেসব বাঁধাকপি আসছে, সেগুলোর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে দেড়–দুই কেজি আকারের বাঁধাকপি বাজারে আসবে।
চাষ কোথায় বেশিকৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ বেশি আসছে। ভরা মৌসুমে এসব এলাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ ও সাভারসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সবজি দুটির সরবরাহ আসবে।
বিভিন্ন প্রজাতির ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ফুলকপির ভালো জাতগুলোর মধ্যে বারি ফুলকপি-১ (রুপা), বারি ফুলকপি-২, ৩ ও স্নো হোয়াইট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া হোয়াইট ফ্লাশ ২০২০ ও অটাম জায়ান্ট হাইব্রিড জাতও রয়েছে। বাঁধাকপির জাতের মধ্যে আছে বারি বাঁধাকপি-১ ও বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)। আইপিএসএ বাঁধাকপি-১ গ্রীষ্মকালেও চাষ হয়।
ঢাকায় সরবরাহ ও পাইকারি দামগত শুক্র ও শনিবার রাতে কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আসছে।
কারওয়ানবাজারের আড়তদার আবদুল কাদির ভূইয়া প্রতিবছর শীত মৌসুমে ফুলকপির ব্যবসা করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাপারীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতি পিছ ফুলকপি কিনছেন তাঁরা। এরপর সেগুলো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এই ফুলকপি আরও এক-দুই হাত ঘুরে খুচরায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দামও অনেকটা এমন।
অবশ্য অনেক কৃষক সরাসরি ঢাকায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে আসছেন। যেমন, যশোর সদরের নোঙ্গরপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার এ বছর সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে দেড় বিঘা জমির আগাম বাঁধাকপি কেটে বিক্রি করেছেন। ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় কম। সে কারণে গত মঙ্গলবার নিজেই ট্রাক ভাড়া করে বাঁধাকপি কারওয়ান বাজারে নিয়ে আসেন।
আবদুস সাত্তার বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পিছ বাঁধাকপি ৩৩ টাকা করে বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক মজুরি যোগ হবে। তবে ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যেত মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা। সব মিলিয়ে আগাম বাঁধাকপি বিক্রি করে এখন ভালো দাম পাচ্ছেন তিনি। তাঁর আশা, ভরা মৌসুমেও মোটামুটি ভালো দাম থাকলে এ বছর মুনাফা করতে পারবেন; না হয় চাষের খরচ উঠে আয়-ব্যয় সমান সমান থাকবে।