‘সমালোচনা মাথায়’ নিয়েই বিসিবি নির্বাচন আজ
Published: 6th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আজ। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড়, ধনী ক্রীড়া সংস্থার পরবর্তী চার বছরের নীতিনির্ধারক নির্বাচন হবে আজ। কিন্তু নাটকীয়তা ও বিতর্কের যেন শেষ নেই। অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, রাতের আধারে ভোটসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
এইসব কারণ দেখিয়ে এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৬ জন ও পরে নির্বাচনের আগের দুই দিনে আরও ৪ জন নির্বাচন বয়কট করেছেন। গতকাল দিবাগত রাতেও একজন পরিচালকপ্রার্থী সরে গেছেন। যদিও প্রত্যাহারের শেষ দিনের পর যারা নির্বাচন বয়কট করেছেন সবার নাম থাকবে ব্যালটবক্সে।
তবুও ‘সমালোচনা মাথায়’ নিয়েই হবে নির্বাচন। বিসিবিতে এরই মধ্যে প্রার্থীরা নিজেদের ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন। নির্বাচনের ভাব জমে উঠেছে। নির্বাচনে মোট ভোটার ১৫৬ জন। সরাসরি ভোট দেবেন ৯৮ জন । ই-ব্যালটে ৫৮ জন।
তিনটি ক্যাটাগরিতে হবে নির্বাচন। ক্যাটাগরি-১ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার। যেখানে মোট ভোট ৩৫টি। ই-ব্যালট আছে ১৯ টি।
সাতটি বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থা থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। এই ক্যাটাগরিতে মোট ভোটার ৭১ জন। ক্যাটাগরি-১–এ ভোট হবে শুধু ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, খুলনা থেকে আবদুর রাজ্জাক ও জুলফিকার আলী খান, সিলেট থেকে রাহাত সামস্ ও বরিশাল থেকে শাখাওয়াত হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
ঢাকা বিভাগে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ছিল বিসিবির সাবেক পরিচালক এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ানের।কিন্তু রবিবার, নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন রেদোয়ান। ফলে ঢাকা বিভাগ থেকে আমিনুল ও ফাহিম নির্বাচন করে জিতে যাচ্ছেন খুব সহজে।
রাজশাহী বিভাগের একটি পরিচালক পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তিনজন—হাসিবুল আলম, মুখলেসুর রহমান ও এস এম শামস মতিন। তাদের মধ্যে হাসিবুল আলম কাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। রংপুর বিভাগ থেকেও তিনজন একটি পরিচালক পদের জন্য নির্বাচন করছেন—হাসানুজ্জামান, রেহাতুল ইসলাম, নূর এ শাহাদাৎ স্বপন।
ক্লাব ক্যাটাগরিতে মোট ভোট ৭৬টি। ই-ব্যালট ৩৪টি। ক্যাটাগরি-২–এ প্রার্থী ছিলেন ৩২ জন। এখন পরিচালক প্রার্থী আছেন মোট ১৭ জন। যদিও তিনজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই ক্যাটাগরি থেকে পরিচালক হবেন ১২ জন।
প্রার্থীরা হলেন, মোহাম্মদ লুতফর রহমান (লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ), ইসতিয়াক সাদেক (ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব), আদনান রহমান (দীপন) (রুপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব), ফায়াজুর রহমান (উত্তরা ক্রিকেট ক্লাব), আবুল বাশার (প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব), আমজাদ হোসেন (ঢাকা স্পারটান্স ক্রিকেট ক্লাব), শানিয়ান তানিম নাভিন (ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব), একেএম আহসানুর রহমান মল্লিক রনি (ইয়াং পেগাসাস ক্লাব), মোখলেছুর রহমান ভুঞা (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), এম নাজমুল ইসলাম ফারুক আহমেদ (ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমি), মেজর (অব:) ইমরোজ আহমেদ (কাঠালবাগান গ্রীণ ক্রিসেন্ট ক্লাব), রাকীব উদ্দিন (এইস ওয়ারিয়র্স), মনজুর আলম (রেগুলার স্পোর্টিং ক্লাব), মেহরাব চৌধুরী (যাত্রাবাড়ি ক্রীড়া চক্র) ও মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভুঞা (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব)। গতকাল প্রার্থীতা ফেরত পাওয়ায় পরিচালক পদপ্রার্থী পরিচালক ইফতেখার আহমেদ মিঠু।
এই ১৭ জনের মধ্যে লুতফুর রহমান, মেজর ইমরোজ, ফয়জুর রহমান ভুঞা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাদের নামও ব্যালটে থাকবে।
ক্যাটাগরি-৩ এ আছেন বিশেষ সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবোর্ড, সার্ভিসেস দল। এখনে মোট ভোট ৪৫টি। ই-ব্যালট ৫টি। এই ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হন ১ জন পরিচালক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজউদ্দিন মো.
বিসিবির পরিচালক হবেন মোট ২৫ জন। ২ জন সরাসরি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনিত হবেন। বাকি ২৩ জন পরিচালককে নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলররা। পরিচালক নির্বাচনের পর পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হবে বিসিবি সভাপতি।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিবি নির্বাচনে নোংরামি: তিন দাবি না মানা হলে ক্রিকেট বর্জন
‘বিসিবি নির্বাচনে নোংরামির বিরুদ্ধে ক্লাব, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের প্রতিবাদ’-শিরোনামে আয়োজিত সভায়, আসন্ন বিসিবি নির্বাচন না পেছালে এবং তাদের তিন দফা দাবি মানা না হলে সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকার ক্লাবগুলো।অন্তত ৪৮টি ক্লাব এ সিদ্ধান্তে একমত বলেই দাবি সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের।
শনিবার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রাঙ্গণে এই দাবি তোলা হয়। লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে ক্লাবগুলো জানায়, তিনটি দাবি-বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সময় বৃদ্ধি করে সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ও বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করা। ‘কেন এই দাবি’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যের একটি অংশে নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তারা-
আরো পড়ুন:
বিসিবি নির্বাচন: উত্তাপ থেমে চেনা ছকের খেলা
বিসিবি নির্বাচন করবেন না তামিম
১. জেলা-বিভাগ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপ।
২. ক্লাব ক্যাটেগরির মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের বেশির ভাগেরই নির্বাচন বর্জন করা।
৩. বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই কাউন্সিলরদের যোগ্যতার ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসকদের কাছে বিসিবি সভাপতির চিঠি প্রধান করা।
৪. নির্ধারিত সময়ের পরও সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ করায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা।
৫. ১৫ ক্লাবের ভোটাধিকার রদ করা, অথচ রিটকারী সভাপতির সময়েই ক্লাবগুলি সবশেষ লিগে অংশ নিয়েছিল।
৬. দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলরদের আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ।
বক্তব্যের শেষে উল্লেখ করা হয়, বিতর্কিত নির্বাচনের নীলনকশা বাতিল না করলে কোনো ক্লাব আসন্ন মৌসুমে ক্রিকেট খেলবে না। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। কাউন্সিলর তালিকা নিরপেক্ষভাবে করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
এর আগে নির্বাচনে সরকারপক্ষের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে গত বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তামিম ইকবালসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী।
শুক্রবার মধ্যরাতে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল, শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগ থেকে পরিচালক পদের লড়াইয়ে থাকা প্রার্থী হাসিবুল আলম ও সন্ধ্যায় কাঁঠালবাগান গ্রীন ক্রিসেন্ট ক্লাবের কাউন্সিলর মেজর ইমরোজ আহমেদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বিসিবিকে জানায়।
যদিও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল গত বুধবার দুপুরে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় কাগজে-কলমে তার নাম ভোটের ব্যালটেই থাকবে।
ঢাকা/ইয়াসিন