সোনমকে গ্রেপ্তার নিয়ে মোদি সরকারকে নোটিশ দিলেন সুপ্রিম কোর্ট
Published: 6th, October 2025 GMT
লাদাখের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সোনমের গ্রেপ্তারি বেআইনি ও অন্যায় দাবি করে তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোর দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস (গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা) মামলা গ্রহণ করে বিচারপতি অরবিন্দ কুমার ও বিচারপতি এনভি আনজারিয়ার বেঞ্চ আজ সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি নোটিশ জারি করেন লাদাখ প্রশাসন ও রাজস্থানের যোধপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারকেও।
গীতাঞ্জলির অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো এবং কোন অভিযোগে, আজও তা তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। কেন তা করা হয়নি, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেলের কাছে বিচারপতিরা তা জানতে চান।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, গ্রেপ্তারের কারণ গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে জানানো হয়েছে। পরিবারকে জানানোর আইনত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিচারপতিরা পাল্টা জানতে চান, পরিবারকে জানানোর অসুবিধাটা কোথায়? বিচারপতিরা তাঁকে আবেদনকারীর দাবি বিবেচনা করার নির্দেশ দেন।
গীতাঞ্জলির পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, গ্রেপ্তারের কারণ না জানায় তাঁরা তা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন না। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ অক্টোবর। ততদিন পর্যন্ত সোনম ওয়াংচুককে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দান, নিজস্ব বিধানসভা, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা ও সরকারি নিয়োগের জন্য নিজস্ব পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের দাবিতে লাদাখের জনগণ দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করছেন। সেই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সোনম ওয়াংচুক। এত দিন ধরে তাঁর আন্দোলন ছিল পুরোপুরি অহিংস। সোনমসহ আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন সত্যাগ্রহ করে আসছিলেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তেমনই এক অনশন আন্দোলন শুরু করেন সোনম ওয়াংচুক। ২৪ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের একাংশ সহিংস হয়ে উঠে বিজেপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি পোড়ায়। নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালালে চারজন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৮০ জন।
সোনম সেই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে অনশন ভঙ্গ করে বাড়ি চলে যান। ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাদাখের শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানান, সোনমকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোনমের পাকিস্তান সফর নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বয়ানে তিনি ‘পাকিস্তানি চর’, ‘অনিরাপদ’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত হন।
গীতাঞ্জলি আদালতে জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর এখন পর্যন্ত তাঁকে সোনমের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। লাদাখ থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে যোধপুরে সোনমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের কারণও তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁকে সঙ্গে করে ওষুধপথ্যও নিতে দেওয়া হয়নি। এই আটক সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবৈধ।
গীতাঞ্জলি আরও বলেন, কারাগারে গেলেও তাঁকে সোনমের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁকে শুধু ইন্টারকমের মাধ্যমে কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ সোমবার এজলাসে বলেন, আবেদনকারী গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে বিষয়টি আবেগপ্রবণ করে তুলতে চাইছেন। যেমন, সোনমকে ওষুধপথ্য দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সোনমের ভাই ও আইনজীবী তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।
বিচারপতিরা গীতাঞ্জলিকে আশ্বস্ত করে বলেন, তাঁকেও অবশ্যই সোনমের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে। কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সেই ব্যবস্থা করা হবে।
আরও পড়ুনস্বামীকে ফিরে পেতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ‘র্যাঞ্চোর’ স্ত্রী গীতাঞ্জলি০৩ অক্টোবর ২০২৫সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের আইনি সংবাদ ও বিশ্লেষণকারী গণমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুযায়ী, আজ সোমবার শুনানির সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সঙ্গে আবেদনকারীর আইনজীবী কপিল সিব্বালের কিছুটা বাদানুবাদও হয়। একসময় মেহতা বলেন, ‘কী চলছে, তা আমাদের জানা আছে।’
প্রত্যুত্তরে কপিল সিব্বাল বলেন, ‘আমরাও জানি কী চলছে।’ এই সময় বিচারপতি অরবিন্দ কুমার বলেন, ‘আমরা জানি না কী চলছে।’
শুনানির সময় বিচারপতিরা জানতে চেয়েছিলেন, আবেদনকারী কেন হাইকোর্টে যাননি? কপিল সিব্বাল পাল্টা জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কোন হাইকোর্টে যাবেন? জম্মু–কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত থাকাকালে সেই রাজ্যের হাইকোর্টে লাদাখিরা যেতেন। পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পর লাদাখিরা কোন হাইকোর্টে যাবেন, এখনো তা নির্ধারিত হয়নি।
আরও পড়ুনকেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫সোনম ওয়াংচুক লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সমর্থনে মিছিলও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জয়গান করেছিলেন। কিন্তু কালক্রমে তাঁরা দেখেন, জম্মু–কাশ্মীরের অধীন থেকে মুক্তি পেলেও লাদাখ কার্যত কেন্দ্রীয় ইচ্ছায় বন্দি। তাদের নিজস্বতা বলে কিছুই নেই।
যে বিজেপি সরকার লাদাখের মানুষকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এখন তারা তাও দিতে চায় না। বরং উন্নয়নের নামে লাদাখের স্বকীয়তা ও পরিবেশ নষ্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুক তারই প্রতিবাদ করে এখন সরকারি বয়ানে ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘পাকিস্তানি চর’।
সোনম ওয়াংচুক কারাগার থেকেই লাদাখবাসীর উদ্দেশে এক খোলা চিঠি লিখেছেন। আইনজীবী তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসে। চিঠিতে লিখেছেন, তিনি কারাগারে থাকতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা কেন গুলি চালিয়েছিল, কেন চারজনের মৃত্যু হলো ও অসংখ্য আহত হলো, তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সোনম লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে থাকতে আমি প্রস্তুত আছি। আপনারা গান্ধীজির দেখানো পথে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যান।’
আরও পড়ুন‘থ্রি ইডিয়টসের র্যাঞ্চো’ কীভাবে উদ্ভাবক থেকে দিল্লির চোখে উসকানিদাতা হয়ে উঠলেন২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র র গ র প ত র কর স প ট ম বর ব চ রপত র কর ছ ল ন গ ত ঞ জল আইনজ ব অন য য় স নমক
এছাড়াও পড়ুন:
গণমাধ্যমে আসামির বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার ব্যাখ্যা দিলেন পুলিশ কমিশনার
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলেকে হত্যা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার লিমন মিয়া (৩৪) পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কীভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। আজ বুধবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি রাজশাহী মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–৫–এ হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন।
প্রাইভেট কারে চড়ে পুলিশ কমিশনার এসেছিলেন সাদাপোশাকে। আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন প্রায় ১৫ মিনিট। এ সময় তাঁর আইনজীবী জমসেদ আলী আদালতে লিখিতভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন এবং পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে করা বিবিধ মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান। এ সময় আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দেওয়ার জন্য রাখেন।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ (মাসুম) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ আগামী ১ ডিসেম্বর। পুলিশ কমিশনারের আবেদনের ব্যাপারে আদালত সেদিন আদেশ দিতে পারেন।
আরও পড়ুনহেফাজতে থেকে আসামিকে গণমাধ্যমে কথা বলতে দেওয়ায় পুলিশ কমিশনারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ১৫ নভেম্বর ২০২৫আলী আশরাফ আরও জানান, পুলিশ কমিশনার তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে আসামি লিমন মিয়াকে হাসপাতালে আটকের পর সেখানে অনেক মানুষেরই ভিড় ছিল। সে সুযোগে লিমন মিয়া ক্যামেরার সামনে কথা বলেন। ওই সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের এরই মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
১৩ নভেম্বর রাজশাহীতে বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলে তাওসিফ রহমানকে (১৭) হত্যা ও বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারকেও (৪৪) জখম করা হয়। ঘটনার পর অভিযুক্ত লিমন মিয়াকে হাসপাতালে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
সেখানে লিমন হত্যাহত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আদালতের নজরে আসে। এ ঘটনায় একটি বিবিধ মামলা করে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে তলব করেন আদালত।