লাদাখের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

সোনমের গ্রেপ্তারি বেআইনি ও অন্যায় দাবি করে তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোর দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস (গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা) মামলা গ্রহণ করে বিচারপতি অরবিন্দ কুমার ও বিচারপতি এনভি আনজারিয়ার বেঞ্চ আজ সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি নোটিশ জারি করেন লাদাখ প্রশাসন ও রাজস্থানের যোধপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারকেও।

গীতাঞ্জলির অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো এবং কোন অভিযোগে, আজও তা তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। কেন তা করা হয়নি, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেলের কাছে বিচারপতিরা তা জানতে চান।

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, গ্রেপ্তারের কারণ গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে জানানো হয়েছে। পরিবারকে জানানোর আইনত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিচারপতিরা পাল্টা জানতে চান, পরিবারকে জানানোর অসুবিধাটা কোথায়? বিচারপতিরা তাঁকে আবেদনকারীর দাবি বিবেচনা করার নির্দেশ দেন।

গীতাঞ্জলির পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, গ্রেপ্তারের কারণ না জানায় তাঁরা তা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন না। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ অক্টোবর। ততদিন পর্যন্ত সোনম ওয়াংচুককে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।

পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দান, নিজস্ব বিধানসভা, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা ও সরকারি নিয়োগের জন্য নিজস্ব পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের দাবিতে লাদাখের জনগণ দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করছেন। সেই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সোনম ওয়াংচুক। এত দিন ধরে তাঁর আন্দোলন ছিল পুরোপুরি অহিংস। সোনমসহ আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন সত্যাগ্রহ করে আসছিলেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তেমনই এক অনশন আন্দোলন শুরু করেন সোনম ওয়াংচুক। ২৪ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের একাংশ সহিংস হয়ে উঠে বিজেপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি পোড়ায়। নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালালে চারজন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৮০ জন।

সোনম সেই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে অনশন ভঙ্গ করে বাড়ি চলে যান। ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাদাখের শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানান, সোনমকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোনমের পাকিস্তান সফর নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বয়ানে তিনি ‘পাকিস্তানি চর’, ‘অনিরাপদ’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত হন।

গীতাঞ্জলি আদালতে জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর এখন পর্যন্ত তাঁকে সোনমের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। লাদাখ থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে যোধপুরে সোনমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের কারণও তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁকে সঙ্গে করে ওষুধপথ্যও নিতে দেওয়া হয়নি। এই আটক সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবৈধ।

গীতাঞ্জলি আরও বলেন, কারাগারে গেলেও তাঁকে সোনমের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁকে শুধু ইন্টারকমের মাধ্যমে কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল।

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ সোমবার এজলাসে বলেন, আবেদনকারী গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে বিষয়টি আবেগপ্রবণ করে তুলতে চাইছেন। যেমন, সোনমকে ওষুধপথ্য দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সোনমের ভাই ও আইনজীবী তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।

বিচারপতিরা গীতাঞ্জলিকে আশ্বস্ত করে বলেন, তাঁকেও অবশ্যই সোনমের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে। কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সেই ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুনস্বামীকে ফিরে পেতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ‘র‍্যাঞ্চোর’ স্ত্রী গীতাঞ্জলি০৩ অক্টোবর ২০২৫

সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের আইনি সংবাদ ও বিশ্লেষণকারী গণমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুযায়ী, আজ সোমবার শুনানির সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সঙ্গে আবেদনকারীর আইনজীবী কপিল সিব্বালের কিছুটা বাদানুবাদও হয়। একসময় মেহতা বলেন, ‘কী চলছে, তা আমাদের জানা আছে।’

প্রত্যুত্তরে কপিল সিব্বাল বলেন, ‘আমরাও জানি কী চলছে।’ এই সময় বিচারপতি অরবিন্দ কুমার বলেন, ‘আমরা জানি না কী চলছে।’

শুনানির সময় বিচারপতিরা জানতে চেয়েছিলেন, আবেদনকারী কেন হাইকোর্টে যাননি? কপিল সিব্বাল পাল্টা জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কোন হাইকোর্টে যাবেন? জম্মু–কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত থাকাকালে সেই রাজ্যের হাইকোর্টে লাদাখিরা যেতেন। পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পর লাদাখিরা কোন হাইকোর্টে যাবেন, এখনো তা নির্ধারিত হয়নি।

আরও পড়ুনকেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সোনম ওয়াংচুক লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সমর্থনে মিছিলও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জয়গান করেছিলেন। কিন্তু কালক্রমে তাঁরা দেখেন, জম্মু–কাশ্মীরের অধীন থেকে মুক্তি পেলেও লাদাখ কার্যত কেন্দ্রীয় ইচ্ছায় বন্দি। তাদের নিজস্বতা বলে কিছুই নেই।

যে বিজেপি সরকার লাদাখের মানুষকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এখন তারা তাও দিতে চায় না। বরং উন্নয়নের নামে লাদাখের স্বকীয়তা ও পরিবেশ নষ্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুক তারই প্রতিবাদ করে এখন সরকারি বয়ানে ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘পাকিস্তানি চর’।

সোনম ওয়াংচুক কারাগার থেকেই লাদাখবাসীর উদ্দেশে এক খোলা চিঠি লিখেছেন। আইনজীবী তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসে। চিঠিতে লিখেছেন, তিনি কারাগারে থাকতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা কেন গুলি চালিয়েছিল, কেন চারজনের মৃত্যু হলো ও অসংখ্য আহত হলো, তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সোনম লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে থাকতে আমি প্রস্তুত আছি। আপনারা গান্ধীজির দেখানো পথে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যান।’

আরও পড়ুন‘থ্রি ইডিয়টসের র‍্যাঞ্চো’ কীভাবে উদ্ভাবক থেকে দিল্লির চোখে উসকানিদাতা হয়ে উঠলেন২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র র গ র প ত র কর স প ট ম বর ব চ রপত র কর ছ ল ন গ ত ঞ জল আইনজ ব অন য য় স নমক

এছাড়াও পড়ুন:

লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন মহানগর দায়রা আদালতেও নামঞ্জুর

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতেও নামঞ্জুর হয়েছে।

ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিন আজ রোববার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী গোলাম রব্বানী।

আইনজীবী গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, শাহবাগ থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন নাকচ করেন ঢাকার চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। ওই জামিন আবেদন চ্যালেঞ্জ করে লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন করা হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে। আজ তাঁর জামিন শুনানি হয়। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেন। শিগগিরই লতিফ সিদ্দিকীর জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’

শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মনজুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। পরদিন তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। সেদিন লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া অন্যরা জামিনের আবেদন করলে আদালত নাকচ করেছিলেন।

২৯ আগস্ট লতিফ সিদ্দিকীকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তখন তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। আদালতের প্রতি তাঁর আস্থা নেই বলে তখন তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের বলেছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক স্বামীর ছুরিকাঘাতে নারীর মৃত্যু
  • ভারতের প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের দিকে জুতা ছুড়ে মারলেন আইনজীবী
  • আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ: আদালতে দীপু মনি
  • লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন মহানগর দায়রা আদালতেও নামঞ্জুর
  • বিসিবি নির্বাচন: হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, ১৫ ক্লাবের প্রতিনিধির ভোট দেওয়ার পথ খুলল
  • আগামীকাল বিসিবি নির্বাচনে বাধা নেই
  • নাটোরে নিজ বাড়ি থেকে আইনজীবীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • নাটোরে আইনজীবীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার