Prothomalo:
2025-10-07@13:19:53 GMT

আরবি ভাষার শিকড় সন্ধান

Published: 7th, October 2025 GMT

ভাষা জন্মাল কীভাবে? এ এক প্রাচীন ধাঁধা। এই প্রশ্ন ভাবিয়েছে পুরোনো দিনের দার্শনিকদের, ভাবাচ্ছে আজকের ভাষাতাত্ত্বিকদেরও। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে অবশ্য বিবর্তনের তত্ত্ব বেশ গভীর ছাপ ফেলেছে।

প্রাচীনকালে কিন্তু অনেক রকম মত ছিল। এক দল মনে করত, ভাষার জন্ম স্বর্গীয় অনুপ্রেরণা বা ইলহাম থেকে। এই পথের পথিক ছিলেন আবু আলী ফারসি ও ইবনে হাজম আন্দালুসির মতো পণ্ডিতেরা। তাঁরা প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতেন সুরা বাকারার ৩১ নম্বর আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে—‘তিনি আদমকে সব নাম (আসমা) শিক্ষা দিয়েছেন।’

তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আল্লাহ স্বয়ং আদমকে আরবি, ফারসি, সিরীয় বা হিব্রুর মতো কিছু মৌলিক ভাষার মাধ্যমে সব প্রাণী আর জড়বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

তাওরাত অনুসরণ করে হিব্রু পণ্ডিতেরাও প্রায় একই কথা বলেন। এমনকি গ্রিক ও রোমান দার্শনিকদের মধ্যেও এই ধারণার ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। প্লেটোর মতে, ভাষা আসলে ঈশ্বরের দেওয়া এক উপহার। হেরাক্লিটাস বলতেন, ভাষা হলো স্বর্গীয় এক উন্মোচন। প্রাচীন ভারতেও বিশ্বাস করা হতো, মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন স্বয়ং ইন্দ্র, বৈদিক যুগের এক বিশিষ্ট দেবতা।

ভাষা মানুষেরই সৃষ্টি। আল্লাহ কেবল মানুষকে ভাষা শেখার ক্ষমতাটুকু দিয়েছেন, একেবারে হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেননি। আদমকে ‘আসমা’ শেখানোর অর্থ এটাই।

কিন্তু দার্শনিকদের অন্য একটি দল এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, ভাষা মানুষেরই সৃষ্টি। আল্লাহ কেবল মানুষকে ভাষা শেখার ক্ষমতাটুকু দিয়েছেন, একেবারে হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেননি। আদমকে ‘আসমা’ শেখানোর অর্থ এটাই। দার্শনিক ফারাবি বা ভাষাতাত্ত্বিক ইবনে জিন্নির মতো মানুষেরা এই মতেরই পক্ষে ছিলেন। (মানজিলাতুল লুগাতিল আরবিয়্যাহ, ড.

আবদুল মাজিদ উমর)

আবার আরেকটা মতও চালু আছে। সেটা হলো, মানুষের অনুকরণ করার স্বভাব থেকেই ভাষার জন্ম। মানুষ হয়তো প্রকৃতির নানা পশুপাখি বা অন্য কিছুর আওয়াজ শুনেছে, তারপর সেটা নকল করার চেষ্টা করেছে। এভাবেই হয়তো সে প্রথম নিজের বাক্‌শক্তি টের পায়। (কিতাবুল খাসায়েস, ইবনে জিন্নি)

সেমেটিক পরিবারের সদস্য

আধুনিক ভাষাবিদেরা আরবিকে সেমেটিক ভাষা পরিবারের অংশ বলে মনে করেন। আঠারো শতকের শেষে জার্মান পণ্ডিত আগস্ট লুডভিগ ভন শ্লুজার প্রথম এই পরিবারের কথা বলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, আরামাইক, ফিনিশীয়, হিব্রু, আরবি, ইয়েমেনি, ব্যাবিলনীয় ও অ্যাসিরীয় ভাষার মধ্যে গভীর আত্মীয়তার টান আছে। শব্দ, গঠন বা বাক্যবিন্যাসের দিক থেকে এদের মধ্যে খুব মিল।

ইন্দো–আর্য ভাষাদের যেমন লাতিন, গ্রিক ও সংস্কৃতে ভাগ করা হয়, সেমেটিক পরিবারকেও তিনটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়ে থাকে—আরামাইক, কেনানীয় ও আরবি। সিরীয়, ক্যালডিয়ান বা অ্যাসিরীয় ভাষার জন্ম ওই আরামাইক থেকে। আর কেনানীয় ভাষা থেকে এসেছে হিব্রু বা ফিনিশীয় ভাষা।

এই সেমেটিক বা সামি নামটা এল কোথা থেকে? আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ তাঁর আশতাতুম মুজতামিআত বইয়ে এর উত্তর দিয়েছেন। হিব্রু বাইবেল আর খ্রিষ্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টে নুহ (আ.)–এর তিন ছেলের কথা আছে—সাম, হাম ও ইয়াফেস।

সাম এসেছিলেন আরব উপদ্বীপে। তাঁর নাম থেকেই ‘সামি’ বা ‘সেমেটিক’ শব্দটি এসেছে। হাম চলে যান আফ্রিকায়, আর ইয়াফেস ইউরোপে। এ ঘটনার উল্লেখ হাদিসেও পাওয়া যায়। তিরমিজির এক বর্ণনায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সাম আরবদের পিতা, ইয়াফেস রোমানদের ও হাম হাবশিদের পূর্বপুরুষ।’

আরও পড়ুনআরবি না জেনেও কোরআনের সঙ্গ পাওয়ার ৭ উপায়১৯ মে ২০২৫প্রচীন নিজামিয়া মাদরাসার দেয়ালে অংকিত একটি আরবি লিপি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

আরবি ভাষার শিকড় সন্ধান

ভাষা জন্মাল কীভাবে? এ এক প্রাচীন ধাঁধা। এই প্রশ্ন ভাবিয়েছে পুরোনো দিনের দার্শনিকদের, ভাবাচ্ছে আজকের ভাষাতাত্ত্বিকদেরও। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে অবশ্য বিবর্তনের তত্ত্ব বেশ গভীর ছাপ ফেলেছে।

প্রাচীনকালে কিন্তু অনেক রকম মত ছিল। এক দল মনে করত, ভাষার জন্ম স্বর্গীয় অনুপ্রেরণা বা ইলহাম থেকে। এই পথের পথিক ছিলেন আবু আলী ফারসি ও ইবনে হাজম আন্দালুসির মতো পণ্ডিতেরা। তাঁরা প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতেন সুরা বাকারার ৩১ নম্বর আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে—‘তিনি আদমকে সব নাম (আসমা) শিক্ষা দিয়েছেন।’

তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আল্লাহ স্বয়ং আদমকে আরবি, ফারসি, সিরীয় বা হিব্রুর মতো কিছু মৌলিক ভাষার মাধ্যমে সব প্রাণী আর জড়বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

তাওরাত অনুসরণ করে হিব্রু পণ্ডিতেরাও প্রায় একই কথা বলেন। এমনকি গ্রিক ও রোমান দার্শনিকদের মধ্যেও এই ধারণার ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। প্লেটোর মতে, ভাষা আসলে ঈশ্বরের দেওয়া এক উপহার। হেরাক্লিটাস বলতেন, ভাষা হলো স্বর্গীয় এক উন্মোচন। প্রাচীন ভারতেও বিশ্বাস করা হতো, মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন স্বয়ং ইন্দ্র, বৈদিক যুগের এক বিশিষ্ট দেবতা।

ভাষা মানুষেরই সৃষ্টি। আল্লাহ কেবল মানুষকে ভাষা শেখার ক্ষমতাটুকু দিয়েছেন, একেবারে হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেননি। আদমকে ‘আসমা’ শেখানোর অর্থ এটাই।

কিন্তু দার্শনিকদের অন্য একটি দল এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, ভাষা মানুষেরই সৃষ্টি। আল্লাহ কেবল মানুষকে ভাষা শেখার ক্ষমতাটুকু দিয়েছেন, একেবারে হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেননি। আদমকে ‘আসমা’ শেখানোর অর্থ এটাই। দার্শনিক ফারাবি বা ভাষাতাত্ত্বিক ইবনে জিন্নির মতো মানুষেরা এই মতেরই পক্ষে ছিলেন। (মানজিলাতুল লুগাতিল আরবিয়্যাহ, ড. আবদুল মাজিদ উমর)

আবার আরেকটা মতও চালু আছে। সেটা হলো, মানুষের অনুকরণ করার স্বভাব থেকেই ভাষার জন্ম। মানুষ হয়তো প্রকৃতির নানা পশুপাখি বা অন্য কিছুর আওয়াজ শুনেছে, তারপর সেটা নকল করার চেষ্টা করেছে। এভাবেই হয়তো সে প্রথম নিজের বাক্‌শক্তি টের পায়। (কিতাবুল খাসায়েস, ইবনে জিন্নি)

সেমেটিক পরিবারের সদস্য

আধুনিক ভাষাবিদেরা আরবিকে সেমেটিক ভাষা পরিবারের অংশ বলে মনে করেন। আঠারো শতকের শেষে জার্মান পণ্ডিত আগস্ট লুডভিগ ভন শ্লুজার প্রথম এই পরিবারের কথা বলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, আরামাইক, ফিনিশীয়, হিব্রু, আরবি, ইয়েমেনি, ব্যাবিলনীয় ও অ্যাসিরীয় ভাষার মধ্যে গভীর আত্মীয়তার টান আছে। শব্দ, গঠন বা বাক্যবিন্যাসের দিক থেকে এদের মধ্যে খুব মিল।

ইন্দো–আর্য ভাষাদের যেমন লাতিন, গ্রিক ও সংস্কৃতে ভাগ করা হয়, সেমেটিক পরিবারকেও তিনটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়ে থাকে—আরামাইক, কেনানীয় ও আরবি। সিরীয়, ক্যালডিয়ান বা অ্যাসিরীয় ভাষার জন্ম ওই আরামাইক থেকে। আর কেনানীয় ভাষা থেকে এসেছে হিব্রু বা ফিনিশীয় ভাষা।

এই সেমেটিক বা সামি নামটা এল কোথা থেকে? আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ তাঁর আশতাতুম মুজতামিআত বইয়ে এর উত্তর দিয়েছেন। হিব্রু বাইবেল আর খ্রিষ্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টে নুহ (আ.)–এর তিন ছেলের কথা আছে—সাম, হাম ও ইয়াফেস।

সাম এসেছিলেন আরব উপদ্বীপে। তাঁর নাম থেকেই ‘সামি’ বা ‘সেমেটিক’ শব্দটি এসেছে। হাম চলে যান আফ্রিকায়, আর ইয়াফেস ইউরোপে। এ ঘটনার উল্লেখ হাদিসেও পাওয়া যায়। তিরমিজির এক বর্ণনায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সাম আরবদের পিতা, ইয়াফেস রোমানদের ও হাম হাবশিদের পূর্বপুরুষ।’

আরও পড়ুনআরবি না জেনেও কোরআনের সঙ্গ পাওয়ার ৭ উপায়১৯ মে ২০২৫প্রচীন নিজামিয়া মাদরাসার দেয়ালে অংকিত একটি আরবি লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ