একটি ‘বিশ্বমোড়ল’সহ তিনটি শক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 7th, October 2025 GMT
একটি ‘বিশ্বমোড়ল’ ও দুটি আঞ্চলিক শক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে যে বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত তা হচ্ছে, পৃথিবীতে তিনটি শক্তি আমাদের এখানে প্রভাব বিস্তার করার জন্য চেষ্টা করছে। দুটি আঞ্চলিক শক্তি, পরাশক্তিও বটে তারা এবং একটি বিশ্বমোড়ল। সবাই এখানে একটা হেজেমোনি (আধিপত্য) সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। প্রত্যেকেরই ইন্টারেস্ট (স্বার্থ) আলাদা আলাদা। কিন্তু আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিনটার দ্বারাই একইভাবে।’
আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘মত প্রকাশ থেকে মৃত্যু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের বিস্তার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
আবরার ফাহাদকে ‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আবরার শহীদ হয়েছে, কারণ সে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে হয়তো জেলে যেতে হতো, কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বললে জীবন দিতে হয়—এটাই আবরার হত্যার শিক্ষা।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের সিঁড়ি নির্মাণ করেছি আবরারের মতো শহীদদের রক্ত দিয়ে। ৪২২ জনের বেশি ছাত্র, যুব, বিএনপি নেতা–কর্মীর রক্ত এই সিঁড়ির ভিত্তি। এই সংগ্রাম শুধু কোনো দলীয় নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন।’
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখার জন্যই বিএনপি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ—এটি শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্রদর্শন। পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক চুক্তি কিংবা রাজনীতির যেকোনো সিদ্ধান্তে এই নীতিই হবে আমাদের মাপকাঠি।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে হলে ছাত্রসমাজকে মেধা, তাত্ত্বিক জ্ঞান ও দেশপ্রেমে সমৃদ্ধ হতে হবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ছাত্রসংগঠনগুলো মেধাবীদের নেতৃত্বে আসুক। যারা কলম দিয়ে, চিন্তা দিয়ে, প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে। যদি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলবে।’
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বার্থে অসংখ্য মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে যেন আর রক্ত দিতে না হয়, সে লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
‘আমরা চাই না মুক্তির মন্দিরে নতুন প্রাণ বলিদান হোক। কিন্তু যদি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, তাহলে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে সেই পরিস্থিতি যেন আর না আসে, সে জন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,’ বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনার আমলে ছাত্রদলসহ বিরোধী মতের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং যাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন, আমরা তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তাঁদের আত্মত্যাগকে হৃদয়ে ধারণ করেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘যত দিন শহীদ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করার প্রয়োজন থাকবে, তত দিন আমরা এই স্মরণসভা করব, রাজপথে থাকব, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা সভা-সেমিনার থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই—এই মুনাফেকি ও গুপ্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদল দৃঢ় অবস্থানে থাকবে।’
ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসসহ সংগঠনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও ঢাকা মহানগর শাখার নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স ল হউদ দ ন আহমদ ছ ত রদল আম দ র আবর র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবির ৩০ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও বৃত্তি প্রদান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি অনুষদের ৩০ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী
শাবিতে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৫ শিক্ষক
অনুষ্ঠানে ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যাচেলর অব প্রফেশনাল ফার্মেসি পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করায় ছয় শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় অনুষদের সাতজন শিক্ষককে ডিন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এছাড়া, দুই বিশেষ ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ফার্মাসিটিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) স্বর্ণপদক ও দুইজনকে কথাশিল্পী সরদার জয়েনউদ্দিন স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
অপরদিকে, ২০২২ ও ২০২৩ সালের বি.ফার্ম প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষ পেশাগত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ আটজন শিক্ষার্থীকে বদরুন্নেসা গফুর মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বৃত্তি এবং ১৬ জন শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ ফার্র্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- সাদিয়া আফরিন, ফাহিমা জান্নাত কলি ও আল আশিকুর রহমান আলিফ, মো. তৌহিদুল ইসলাম, রাফিউদ্দিন খান লাবিব ও রুম্মান রেজা।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ হলেন- অধ্যাপক ড. আবু আছাদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদুল হক, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত, অধ্যাপক ড. শিমুল হালদার, ড. মো. আল আমীন সিকদার, ড. যোবায়ের আল মাহমুদ এবং ড. মো. রায়হান সরকার।
বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) স্বর্ণপদক পেয়েছেন সাদিয়া আফরিন ও মো. তোহিদুল ইসলাম। কথাশিল্পী সরদার জয়েন উদ্দীন স্বর্ণপদক পেয়েছেন সাদিয়া আফরিন ও রুম্মান রেজা।
বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) বৃত্তিপ্রাপ্তরা হলেন- রায়হানা হক জেবিন, তাহমিনা আক্তার তন্বী, জোবায়ের হাসান, মো. শেখ ফরিদ সরদার, ফারিয়া আনান সৃষ্টি, আজমাঈন ইশাত খান, মো. তৌহিদুল ইসলাম, রুম্মান রেজা, জেরিন আনজুম সিফাত, ফারজানা তাবসসুম, রায়হানা হক জেরিন, তাহমিনা আক্তার তন্বী, রাফি উজ জামান, শায়েলা হক শুচি, ফারিয়া আনান সৃষ্টি ও আজমাঈন ইশাত খান।
বদরুন্নেসা গফুর মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বৃত্তিপ্রাপ্তরা হলেন- রায়হানা হক জেবিন, জোবায়ের হাসান, ফারিয়া আনান সৃষ্টি, তৌহিদুল ইসলাম, জেরিন আনজুম সিফাত, রায়হানা হক জেবিন, রাফি উজ জামান ও ফারিয়া আনান সৃষ্টি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বাড়িয়েছেন। কোনো অর্জন একক নয়, এতে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক ও সমাজের অবদান স্মরণ করেই প্রতিটি সফলতার মূল্যায়ন করা উচিত।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত অগ্রগতি সমাজের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে। অভিভাবক, শিল্পোদ্যোক্তা, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিকে সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কের শক্ত প্রমাণ। দেশের ফার্মাসিটিক্যাল শিল্পের সাফল্য দূরদর্শী জাতীয় নীতির ফল। আর ফার্মেসি অনুষদ একটি ছোট অনুষদ হয়েও গবেষণা, র্যাঙ্কিং ও শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী