লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তারা ঘর থেকে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করেছে বলে জানিয়েছেন নিহতের এক আত্মীয়।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শ্রীরামপুর গ্রামে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তারা। 

আরো পড়ুন:

খুলনায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

খুলনায় যুবককে অপহরণ: ৩ জন গ্রেপ্তার 

নিহতরা হলেন- রামগঞ্জের সোনাপুর বাজারের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের জুলেখা বেগম (৫৫) এবং তার মেয়ে রামগঞ্জ মডেল কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানহা মীম (১৯)।

সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) জামিলুল হক বলেন, “কে বা কারা, কী কারণে মা-মেয়েকে হত্যা করেছে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। খবর পেয়ে ওসি ঘটনাস্থলে যান। পিবিআই ফরেনসিক টিমও ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।”

স্থানীয়রা জানান, মিজান সোনাপুর বাজারের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী। বাড়ির পুরুষরা সবাই বাজারে ছিলেন। বাড়িতে মিজানের স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করে। তারা বাসায় থাকা প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। বাজার থেকে পরিবারের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে বাড়িতে গিয়ে মরদেহ বাসার দ্বিতীয় তলার মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। 

নিহতদের আত্মীয় সেলিম মিয়া জানান, মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি খুব ভয়াবহ। তারা ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।

রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল বারী জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে ঘাতকরা। 

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য অভ য গ স বর ণ ল ক র র মগঞ জ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কন্যাসন্তান ও বোন প্রতিপালনের ফজিলত

সন্তান আল্লাহর দান। পুত্র ও কন্যা সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের অন্তর্গত। আল্লাহ তাআলা কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন, আবার কাউকে পুত্রসন্তান; কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা–ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন অথবা তাদের উভয়কেই দান করেন—পুত্র ও কন্যা। আর যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)

কন্যাসন্তান মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার গৃহে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করল, অতঃপর সে তাকে কষ্ট দেয়নি, তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২২৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবতী, যঁার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়।’ কেননা কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৬১১)

‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’

কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া জাহেলি যুগের কাফির-মুশরিকদের মনোভাব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে প্রচণ্ড দুঃখভারাক্রান্ত হয়। সে এই সুসংবাদ পাওয়ার লজ্জায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায় এবং চিন্তা করে—হীনতা সত্ত্বেও কি সে সন্তানকে রেখে দেবে, নাকি মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে? সতর্ক হও! তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা কতই না নিকৃষ্ট!’ সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

প্রিয় নবীজি (স.) কন্যাসন্তানের প্রতি সম্মান, স্নেহ ও মহব্বতের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে এবং সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের কারণে নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ১৯১২) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে ও সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১৪০৪; আদাবুল মুফরাদ, বুখারি: ৭৯) নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করেছে এবং বিয়ের সময় হলে তাদের সুপাত্রে বিয়ে দিয়েছে, সে এবং আমি জান্নাতে এভাবে একসঙ্গে থাকব।’ এরপর তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (তিরমিজি: ১৯১৪; মুসলিম: ২৬৩১; মুসনাদে আহমাদ: ১২০৮৯)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধারণ করে, তাদের ওপর ব্যয় করে, তাদের বিয়ে দেয় অথবা মৃত্যু পর্যন্ত দেখাশোনা করে, তাহলে সেই কন্যাসন্তানেরা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘দুজন হলেও।’ লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি একজন হয়?’ তিনি বললেন, ‘একজন হলেও।’ (বায়হাকি, শু’আবুল ইমান: ৮৩১১ ও ৮৩১৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পন্ন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড়ালস্বরূপ হবে।’ (তিরমিজি: ১৯১৩) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যাকে কন্যাসন্তান দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয়, আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে।’ (মুসলিম: ৬৮৬২; মুসনাদে আহমাদ: ২৪৬১৬)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ