বাংলাদেশ সফরে রহস্যময় অসুস্থতার কথা জানালেন তিলক
Published: 24th, October 2025 GMT
ক্রিকেট মাঠে কখনও কখনও এমন কিছু ঘটে, যা কেবল খেলার গল্প নয়, একজন মানুষের জীবনের গল্প হয়ে ওঠে। ভারতের তরুণ ব্যাটার তিলক ভার্মার জীবনে এমনই এক অধ্যায় রচিত হয়েছিল ২০২২ সালের বাংলাদেশ সফরে। ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই শরীর সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়, আঙুল নাড়ে না, ব্যাট ধরতে পারেন না। সেই মুহূর্তে কেউ জানত না, তিনি এমন এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যা সময়মতো চিকিৎসা না হলে প্রাণঘাতী হতে পারত।
বাংলাদেশে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলছিলেন তিলক। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত চার দিনের ম্যাচে শতরানের লক্ষ্যে এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, শরীর অবশ হয়ে আসে। আঙুল নড়াতে না পারায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে। পরে জানা যায়, তার দেহে ধরা পড়েছে র্যাবডোমায়োলাইসিস নামের এক বিরল রোগ। যেখানে শরীরের পেশি ভেঙে ক্ষতিকর উপাদান রক্তে মিশে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি ঘটাতে পারে।
আরো পড়ুন:
সৌম্যর এত প্রশংসা করবেন না, নজর লাগবে: ফারিয়া
টেস্ট অধিনায়ক হতে রাজি মিরাজ
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে দ্রুত পদক্ষেপ নেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মালিক আকাশ আম্বানি ও বিসিসিআই সচিব জয় শাহ। তাদের ব্যবস্থাপনাতেই তিলককে জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান আর কয়েক ঘণ্টা দেরি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত। ইনজেকশন দেওয়ার সময় সুচ ভেঙে যাওয়ায় অবস্থা আরও জটিল হয়েছিল। তবে মায়ের উপস্থিতিই তাকে মানসিকভাবে ভরসা দিয়েছিল।
সম্প্রতি ভারতীয় সঞ্চালক গৌরব কাপুরের ইউটিউব শো ‘ব্রেকফাস্ট অব চ্যাম্পিয়ন্স’-এ উপস্থিত হয়ে সেই ভয়ংকর সময়ের স্মৃতি শেয়ার করেন তিলক ভার্মা। তিনি বলেন, “আইপিএলের প্রথম মৌসুম শেষে আমি ফিট থাকতে চাইছিলাম। কিন্তু হঠাৎ শরীরে সমস্যা দেখা দিল। বাংলাদেশে ব্যাট করছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল শরীরটা জমে যাচ্ছে। আঙুল নড়ছিল না, ব্যাটও তুলতে পারছিলাম না। গ্লাভস পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছিল।”
চিকিৎসা ও বিশ্রামের দীর্ঘ সময় পার করে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তিলক। আবারও নিয়মিত ক্রিকেট খেলছেন, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আইপিএলেও আলো ছড়াচ্ছেন। তবে সেই বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তাকে জীবন সম্পর্কে নতুন উপলব্ধি দিয়েছে, “ওই সময়টা না কাটালে হয়তো বুঝতামই না, শরীর ও মানসিক শক্তি কতটা মূল্যবান।”
কী এই র্যাবডোমায়োলাইসিস?
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এই রোগে পেশির টিস্যু দ্রুত ভেঙে ক্ষতিকর উপাদান রক্তে মিশে যায়, যা কিডনির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। অতিরিক্ত গরমে খেলা, পানিশূন্যতা ও অতিরিক্ত পরিশ্রম এই রোগের প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ সফরে মাঠে অজ্ঞান হওয়ার সেই দিনটি হয়তো চিরকাল মনে থাকবে তিলক ভার্মার জীবনে। যে দিন এক তরুণ ক্রিকেটার ব্যাট হাতে নয়, জীবনের বিপক্ষে লড়েছিলেন সাহসিকতার সঙ্গে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ সফর
এছাড়াও পড়ুন:
রাওয়াল-মান্দানার ব্যাটে সেমিফাইনালে ভারত, নিউ জিল্যান্ডের বিদায়
তিন ম্যাচ টানা হারার পর যেন আগুনে ঝাঁপ দিল ভারত। নবি মুম্বাইয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দারুণ স্টাইলেই নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল তারা। এখন শনিবারের দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচই ঠিক করবে শেষ চারে ভারতের প্রতিপক্ষ কে হবে।
টস হারলেও ভারত এদিন হার মেনে নিতে আসেনি। অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ব্যাটিংয়ে নামিয়েছিলেন দলকে। আর ব্যাট হাতে আগুন ঝরালেন স্মৃতি মান্দানা ও প্রতিকা রাওয়াল। দুজনেই করলেন সেঞ্চুরি। সঙ্গে অপরাজিত ৭৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন জেমিমা রদ্রিগেজ। এই ম্যাচে তিনি দলে ফিরেছিলেন অলরাউন্ডার অমানজোত কৌরের জায়গায়।
ফলাফল, ভারতের বোর্ডে ঝলমল করছে ৪৯ ওভারে ৩৪০/৩। যা তাদের নারী বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে বৃষ্টির কারণে ডিএলএস পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৪ ওভারে ৩২৫ রান। নারীদের একদিনের ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই হতো সর্বোচ্চ রান তাড়া। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের মন্থর ব্যাটিংয়ে শেষ ১৫ ওভারে দরকার ছিল অসম্ভব ১৬৮ রান। যা আর সম্ভব হয়নি।
ব্রুক হ্যালিডে একাই লড়লেন এদিন। খেললেন ৮১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। তবে দলের বাকিদের সঙ্গ না পাওয়ায় সেই চেষ্টা বৃথাই গেল। ইনিংসের শুরুতেই রেনুকা সিংয়ের দুই ইন-ডাকার ডেলিভারিতে সাজঘরে ফেরেন জর্জিয়া প্লিমার ও অধিনায়ক সোফি ডিভাইন। এরপর ভারতীয় স্পিনাররা বেঁধে রাখেন নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটারদের।
ইসাবেলা গেজের সঙ্গে হ্যালিডে ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়লেও শেষ পর্যন্ত দল থামে ২৭১/৮-এ। ভারতের বোলারদের মধ্যে রেনুকা, ক্রান্তি গৌড় ও রাওয়াল সবাই ছিলেন শৃঙ্খলিত। প্রথম ছয় ওভারে কোনো বাউন্ডারি পর্যন্ত দেননি তারা। রাওয়াল নিজে বল হাতে তুলে নেন তার প্রথম বিশ্বকাপ উইকেটও। ম্যাডি গ্রিনকে ফেরান তিনি।
কিন্তু আসল জাদুটা রাওয়ালের ব্যাটেই দেখা গেল এদিন। ইনিংসের প্রথম ছয় ওভারে মাত্র ১৮ রান তুলেছিল ভারত। এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে মান্দানা ও রাওয়াল গড়েন শতরানের পার্টনারশিপ। যা নারী একদিনের ক্রিকেটে ভারতের কোনো জুটির যৌথ সর্বোচ্চ রেকর্ড। মান্দানা ৪৯ বলে, আর রাওয়াল ৭৫ বলে তুলে নেন ফিফটি।
স্পিনার ইডেন কারসনের বিপক্ষে প্রথমবার সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকান মন্দানা। এরপর পরের ওভারেই লং-অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন। রাওয়াল তখন স্কয়ার অঞ্চলে ছিলেন দুর্দান্ত। লিয়া তাহুহুকে দুটি চার মেরে জানান দিলেন আজ তিনি অন্য মেজাজে।
৭৭ রানে একবার ভাগ্যও সহায় হলো মান্দানার। এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত রিভিউ না নিলে সাজঘরে ফিরতে হতো। কিন্তু ‘আল্ট্রাএজ’ দেখাল ব্যাটে হালকা ছোঁয়া ছিল। এরপর ৮৮ বলে পূর্ণ করেন নিজের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। যা মেগ ল্যানিংয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ডের ঠিক নিচে। কিছুক্ষণ পর ক্র্যাম্পে কাবু হয়ে পড়া মান্দানা শেষ পর্যন্ত সুজি বেটসের বলে ১০৪ রানে ধরা পড়েন হান্নাহ রোর হাতে। তাতে শেষ হয় ২১২ রানের দারুণ ওপেনিং জুটি।
রাওয়াল ১২২ বলে তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার পর জেমিমা রদ্রিগেজ যখন ব্যাটে নামেন, তখন যেন ইনিংসে নতুন ছন্দ আসে। নিখুঁত টাইমিং, চমৎকার প্লেসমেন্টে সাজানো তার ৫৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চার। তিনি কখনও সুইপ করেছেন, কখনও রিভার্স সুইপ। আবার ফুল লেংথ ডেলিভারিতে কভার ড্রাইভে বল উড়িয়েছেন বাউন্ডারিতে।
৪৮ ওভারে বৃষ্টি নামলে ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। পরে খেলা ৪৯ ওভারে নির্ধারিত হয়। আর নিউ জিল্যান্ডের লক্ষ্য নামানো হয় ৪৪ ওভারে।
সব মিলিয়ে ভারতের জন্য দিনটি ছিল একেবারে নিখুঁত; ব্যাটে, বলে, কৌশলে। বিশেষ করে রদ্রিগেজকে দলে ফিরিয়ে তিন নম্বরে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল, সেটি প্রমাণিত হলো বেশ জোরালোভাবে। এখন দল তাকিয়ে সেমিফাইনালের দিকে, যেখানে তারা চায় এই ফর্মই ধরে রাখতে।
ঢাকা/আমিনুল