বছরখানেক আগে মায়ের কেনা একখণ্ড জমিতে নতুন বাড়ি করেন জুলহাস মিয়া (৩০)। এ জন্য তিনটি এনজিও থেকে তিন লাখ ও স্বজনদের কাছ থেকে আরও তিন লাখ টাকা ধার করেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। এর আগেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে এই চালকের।

জুলহাসের এমন মৃত্যু শোকের সঙ্গে দুর্ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ঋণ। বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাঁর মা সাজেদা আক্তার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার এই ঋণ এহন কেরা বহন করব গো। আনহেগো (আপনাদের) কাছে বিচার চাই গো।’

আরও পড়ুনভিডিও ফুটেজে দেখা গেল পেট্রল ঢেলে আগুন দিলেন ৩ ব্যক্তি২ ঘণ্টা আগে

জুলহাস মিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের আবদুল বারেক ও সাজেদা আক্তার দম্পতির ছেলে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে ফুলবাড়িয়া-কেশরগঞ্জ সড়কের ভালুকজান এলাকায় দুর্বৃত্তদের আগুনে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই সময় তিনি আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাসটির ভেতরে থাকা যাত্রী মা ও ছেলে ওই সময় দগ্ধ হন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামে ফসলি জমির মাঝে জুলহাস মিয়ার বাড়ি। কাছে যেতেই মা ও স্বজনদের আহাজারি ভেসে আসতে থাকে। আজ দুপুরে বাড়িটিতে প্রবেশ করে দেখা গেল, ঘরের ভেতরে চিৎকার করে কান্না করছেন তাঁর মা সাজেদা আক্তার ও ছোট বোন ময়না আক্তার। আশপাশের মানুষ ও স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

জুলহাস মিয়া.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ লহ স ম য়

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো এক ঝুমকোলতার কথা 

ময়মনসিংহে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৪ একর জায়গাজুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহ নিয়ে ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিলাম চলতি বছরের ১০ মে। প্রকৃতিতে তখন বৈশাখের শেষ। খুব গরম পড়েছিল সেদিন। তারপরও নতুন কোনো উদ্ভিদের সন্ধান পাই কি না, কোনো উদ্ভিদে ফুল ফুটল কি না, তা দেখার কৌতূহলের কারণেই যাওয়া।

বাগানের বিভিন্ন পথ দিয়ে হাঁটছিলাম আর দুই পাশের উদ্ভিদ দেখছিলাম। হঠাৎ হাঁটাপথের এক জায়গায় গ্রিলের প্রবেশপথের গায়ে দেখা পেলাম উজ্জ্বল লাল রঙের আকর্ষণীয় একধরনের ঝুমকোলতা ফুলের। গ্রিলের পেছনে এক দেবদারুগাছের ডালপালা ঝুলে আছে। লতার গা আলো করে ফুটে আছে প্যাশন ফ্লাওয়ার। খুব ভালো লাগল। গরম আর ক্লান্তি গেলাম ভুলে। এই উদ্ভিদের ফুল এই প্রথম দেখলাম। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট। সুগন্ধ আছে এ ফুলের। তাই ইংরেজিতে এই ফুল পারফিউমড প্যাশন ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত। আর এর পাতা আঙুরের পাতার মতো বলে আরেক নাম গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora vitifolia, এটি Passifloraceae পরিবারের লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা গণে ৫০০-৫৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এর বেশির ভাগই লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা এডুলিসের ফল প্যাশন ফ্রুট হিসেবে জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়।

গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট উদ্ভিদের কাণ্ড সরু। উদ্ভিদের পাতার গোড়ায় একজোড়া গ্রন্থি থাকে। পাতা চকচকে, চামড়ার মতো, গাঢ় সবুজ, তিনটি খণ্ডযুক্ত। এটি শক্তিশালী এক লতা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে শরৎ পর্যন্ত এতে উজ্জ্বল লাল ফুল ফোটে। ফুল ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। ফুলে লাল, সাদা বা হলুদ ফিলামেন্ট থাকে। এর ফুলের গঠন এমনভাবে তৈরি যে এটি হামিংবার্ড বা প্রজাপতির মাধ্যমে পরাগায়িত হয়।

কচি অবস্থায় নলাকার এই লতা লাল-বাদামি লোমে ঢাকা থাকে। পাতাগুলো তিন খণ্ডযুক্ত, ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। ফুলগুলো অত্যাশ্চর্য, উজ্জ্বল লাল, ব্যাস ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। ফুল কুঁড়ি অবস্থায় লাল শিরাসহ তিনটি উজ্জ্বল গেরুয়া রঙের ব্র্যাক্ট দিয়ে আবৃত থাকে। প্রস্ফুটিত হওয়ার পর তীব্র উজ্জ্বল লাল রঙের বৃতি ও পাপড়ি দেখা যায়। বৃত্যংশগুলোর একটি সূক্ষ্ম শীর্ষ থাকে। পরাগদণ্ড ও গর্ভদণ্ডগুলো লাল রঙের হয়।

ফল হলদে সবুজ। ফল ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। এই ফল সামান্য পাতলা লোমসহ সবুজ মাংসযুক্ত। ফলের মধ্যে অসংখ্য বীজ থাকে। এ ছাড়া ফলের গায়ে সাদা বিন্দু থাকে। ফল দেখতে ডিমের মতো।

এই উদ্ভিদের বহুবর্ষজীবী মূল রয়েছে। কাণ্ড বর্ষজীবী থেকে বহুবর্ষজীবী। উদ্ভিদ ৫-২০ মিটার লম্বা, মাঝেমধ্যে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা মাটির ওপর হামাগুড়ি দিয়ে চলে এবং অন্য গাছপালা বা গ্রিলকে আঁকশির সাহায্যে আঁকড়ে ধরে ওপরে উঠে যায়।

এই উদ্ভিদের ফুল যেমন বাগানের শোভা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি এর ফলও খাওয়া যায়। এর আদি নিবাস দক্ষিণ–মধ্য আমেরিকা (কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, পানামা) এবং উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ আমেরিকা (ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু)। এসব অঞ্চলে এর ভোজ্য ফলটি মাঝেমধ্যে বন থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে খাওয়া হয়। যদিও এই ফল ব্যাপকভাবে সমাদৃত নয়।

কাণ্ডের কাটিং এবং বীজ থেকে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি করা হয়। লতার গায়ে উদারভাবে ফুল ফোটায় কাটিং থেকে তৈরি উদ্ভিদ। বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে ফুল ফোটার নিশ্চয়তা নেই। তাই কাটিং পদ্ধতিই জনপ্রিয়।

গাছ থেকে পড়ে গেলে এর ফল টক হয়। এক মাস সময় নিয়ে পাকলে স্বাদ স্ট্রবেরির মতো হয়। সুগন্ধি ফলের কারণে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ছোট আকারে এই উদ্ভিদের চাষ করা হয়।

চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে অগ্নিকাণ্ডে ইঞ্জিন বিকল, দুই ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ সচল
  • ময়মনসিংহে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, নেত্রকোনা ও ভৈরব রেললাইনে চলাচল বন্ধ
  • ময়মনসিংহে বাসে আগুন, ঘুমন্ত ব্যক্তির মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে বাসে দুর্বৃত্তদের আগুন, চালকের মৃত্যু
  • আসামি হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু, অভিযোগ স্বজনদের
  • জাজিরায় খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
  • ময়মনসিংহ নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল
  • কোনো এক ঝুমকোলতার কথা 
  • বাবার আশা ছিল, ছেলে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে, ফিরল লাশ হয়ে