সুন্দরবনে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারযুক্ত কুমির অবমুক্ত
Published: 26th, January 2025 GMT
সুন্দরবনে একটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সংযুক্ত করে সেটি অবমুক্ত করা হয়েছে। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চরাপুটিয়া খালে কুমিরটি অবমুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে কুমিরটির বিচরণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।
এ সময় করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) প্রকল্পের সমন্বয়কারী সারোয়ার আলম দীপুসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অবমুক্ত করা কুমিরটির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট এবং বয়স ১২ বছর। এর মাধ্যমে কুমিরের চলাচল, জীবনাচরণ এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে জানান আজাদ কবির।
আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনে কুমিরের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে এবং প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এ গবেষণা কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে চারটি লবণ পানির কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সংযুক্ত করে সুন্দরবনের চারটি স্থানে অবমুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী কুমির ছিল। অবমুক্ত করা স্ত্রী কুমির দুটির মধ্যে একটি ছিল করমজল কেন্দ্রের কুমির ‘জুলিয়েট’ এবং অন্যটি যশোরের সাগরদাঁড়ি থেকে উদ্ধার করা কুমির ‘মধু’। পুরুষ কুমির দুটি মাদারীপুর এবং সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ কুমিরগুলোর মধ্যে একটি বিশাল এলাকা পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ঘুরে বেড়ায়। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে চিতলমারী উপজেলার মৎস্য ঘের থেকে কুমিরটি উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস