নয় দফা দাবি আদায়ে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। 

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, এক মাসের মধ্যে ছাত্র সংসদের নীতিমালা প্রণয়ন করে সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে; ক্রেডিট ফি ৭৫-৮০ টাকা করে নোটিশ জারি করতে হবে; সেশনজট নিরসনে রোডম্যাপ দিতে হবে এবং বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে; লাইব্রেরির মুজিব কর্ণারকে জব কর্ণার করে চাকরির বিভিন্ন বই দিতে হবে।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল থেকে গোপালগঞ্জ বাসস্টপেজ চালু করতে হবে; হামলাকারীদের বিচার আগামী সাতদিনের মধ্যে করতে হবে; ১ মাসের মধ্যে টিএসসি থেকে ব্যাংক অপসারণ করতে হবে; অবৈধ নিয়োগ বাতিলের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট দ্রুত নিরোসন করতে হবে।

কৃষি অনুষদের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.

শাহরিয়ার জিহাদ বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রথম দাবি রেখেছিলাম, যেন তারা জুলাইয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয় এবং অবৈধভাবে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নিয়োগ যেন বাতিল করা হয়। কিন্তু এখনো তারা চাকরি করছে, হলগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে ও পরীক্ষা দিচ্ছে “

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে যখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের পুলিশের হাতে ধরে দিতে গেছি, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সুরক্ষা দিতে আসে। শিক্ষকরা আলোচনা করছেন, দেখি কি সিদ্ধান্ত  দেন। যদি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত না হয় এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

ইংরেজি ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফাইজ বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই উপাচার্য বরাবর বিভিন্ন দাবি জানিয়ে এসেছি। তন্মধ্যে শুধু বাস শিডিউল পরিবর্তনের দাবি মানা হয়েছে। আর কোন দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। ফলে আজ আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।”

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম এমদাদুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েরও চাওয়া। আমরা চেষ্টা করব, দ্রুত তাদের দাবি বাস্তবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে।”

পরবর্তীতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিআইপি কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনা সভা চলছিল।

ঢাকা/সংগ্রাম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৫ আগস ট র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ধর্মান্তরের গুজবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নৈশভোজে পুলিশ ও মবের হানা, মারধরের অভিযোগ

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরের একটি হাউজিং সোসাইটিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানের সময় ধর্মান্তরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশসহ শতাধিক লোক সেই বাড়িতে হানা দেন। কিন্তু পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওই বাড়িতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ২৬ জুলাই জামশেদপুরের গোলমুড়ি থানা এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে ২১ দিনের উপবাস ও প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ জন মানুষ রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, দুটি ফ্ল্যাটে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে সন্দেহজনক কিছু করছিলেন।

স্থানীয় গোবিন্দপুর গির্জার যাজক জিতু লিমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমাদের গির্জার প্রায় ৫০ জন সদস্য ২১ দিনের উপবাসের সময় ওই দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই আত্মীয় ও পরস্পরের সঙ্গে চেনাজানা।’

জিতু লিমা বলেন, ফ্ল্যাট দুটি কেবল থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছিল। সেখানে কোনো প্রার্থনা বা ধর্মীয় কার্যক্রম হচ্ছিল না। শুধু উপবাসের শেষ দিন রাতের খাবার খেতে  সবাই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এতে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ছিলেন।

গির্জার যাজক আরও বলেন, এই অবস্থায় সেখানে পুলিশের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটি দল (মব) হঠাৎ একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা ছয়জনকে থানায় নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গির্জার একজন সদস্য অভিযোগ করেন, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে মারধরও করা হয়েছে।

জিতু লিমা অভিযোগ করেন, যে কক্ষে রাতের খাবারের আয়োজন চলছিল, সেখানে রাত ৯টার দিকে মব ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। মবে শতাধিক মানুষ ছিল। কিছু পুলিশ সাদাপোশাকে ছিলেন। তাই বোঝা যাচ্ছিল না, কে পুলিশ আর কে মবের লোক।

গির্জার এই সদস্য অভিযোগ করেন, ‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকেসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাই তাঁদের মারধর করেছেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কেন তোমরা লোকজনকে ধর্মান্তর করছ?’

গোলমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘কাউকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বরং আমি তাঁদের জল খেতে দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করেছি। তবে আমি বাইরে যাওয়ার পর সোসাইটির কেউ হয়তো কিছু করে থাকতে পারে।’

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ওই রাতে বাসিন্দাদের থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেখানে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে আসা প্রায় ৫০ জন মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা তৎক্ষণাৎ অন্যায় কিছু করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও জমা দেননি।’

রাজেন্দ্র কুমার আরও বলেন, ‘এফআইআর করার আগের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা থানায় একটি ডায়েরি করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ-ছয়জনকে থানায় আনা হয়েছিল। আমরা জমায়েতটির প্রকৃতি নিয়ে তদন্ত করছি, এ ধরনের সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, নেওয়া হলে কার নামে নেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছি। তাই এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

জামশেদপুরের উপপুলিশ সুপার (ডিএসপি) সুনীল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি থানায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

গত বুধবার অল ইন্ডিয়া খ্রিষ্টান মাইনরিটি ফ্রন্টের সহসভাপতি ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী অজিত তিরকে জামশেদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগের অজুহাত তুলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে।

অজিত তিরকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আতাল মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে মাদার তেরেসার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ওই জমায়েতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও হামলাকারী কিংবা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জামশেদপুরের ডেপুটি কমিশনার কর্ণ সত্যার্থি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, গোলমুড়ি ও ভূঁইয়াদি এলাকায় সাম্প্রতিক ধর্মান্তরের অভিযোগ সংক্রান্ত দুটি ঘটনার বিষয়ে পুলিশ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কর্ণ সত্যার্থি বলেন, গোলমুড়ির ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেখানে পুলিশ দুটি দলকে পেয়েছিল। একটিতে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন। অন্য দলে ছিল প্রায় ৫০ জন। অভিযুক্ত হওয়ার কারণে নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে থানায় নেওয়া হয়েছিল।

কর্ণ সত্যার্থি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র দুই কি তিনজন অন্য ধর্মের ছিলেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছিলেন। সমবেতদের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। প্রতিবেদনে জবরদস্তির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘এমনটি হয়ে থাকলে তা অন্যায়। অপরাধী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা ঘটনাটি আমলে নিচ্ছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুনভারতে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর থাপ্পড়ের পর খোঁজও মিলছে না যাত্রীর: পরিবারের দাবি৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ