দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে পদত্যাগ করে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন এক নেতা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘোড়াঘাট উপজেলা জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ রাজু আহমেদ জামায়াতের সহযোগী সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন।

জামায়াতের দিনাজপুর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের ঘোড়াঘাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সেক্রেটারি আবদুর রহমানের কাছে সহযোগী সদস্য ফরম জমা দেন শেখ রাজু। তিনি দীর্ঘদিন ঘোড়াঘাট উপজেলা জাপার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব নেন। তবে গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর রাজনীতির পালাবদলে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা জাপার সভাপতি আরিফুজ্জামান রানার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

জামায়াতে যোগদানের পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে শেখ রাজু লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলে যোগদান করে নিজেকে গর্বিত করলাম। দোয়া করবেন সকলে।’

এ বিষয়ে শেখ রাজু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না। জি এম কাদের সাহেব যে কাজ করছেন, তা আগের জাপা নয়। জামায়াতের কার্যক্রম ও সংগঠন ভালো লেগেছে। আমি কোনো পদ-পদবি চাইনি, শুধু সহযোগী সদস্য হিসেবে আছি। বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতি আগে থেকেই অনীহা ছিল। তাদের রাজনীতি আমার পছন্দ নয়। আমি আমার বন্ধু জামায়াত নেতা আবদুর রহমানের মাধ্যমে দলে যোগ দিয়েছি।’

জামায়াতে ইসলামীর ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখার আমির মোফাখখায়ের ইসলাম মোল্লা বলেন, শেখ রাজু আহমেদ সদস্য হয়েছেন, এটা সত্য; কিন্তু কীভাবে সদস্য হয়েছেন, তা তাঁর জানা নেই। জাতীয় পার্টির থানা পর্যায়ের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার এভাবে জামায়াতে যোগদানের সুযোগ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ ড় ঘ ট উপজ ল ইসল ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতায় লাল চাঁদের পরিবার, বাড়িতে মাতম

‘পরিবারের একমাত্র আয়ের লোককে ওরা খুন করেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার? দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কী হবে? আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব? কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে? আমার সন্তান তার বাবাকে আর দেখবে না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’ বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৩৯) স্ত্রী লাকি বেগম।

লাল চাঁদের মরদেহ গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে মাতম।

স্বজনেরা বলেন, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনো হত্যাকারীদের লোকজন মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। লাল চাঁদের ১০ বছর বয়সী ছেলে সোহান ও ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা। স্ত্রী লাকি বেগম (৩০) জানেন না, কীভাবে বিদ্যালয়পড়ুয়া এই দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেবেন!

আরও পড়ুনশরীর থেঁতলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় লাল চাঁদকে১৫ ঘণ্টা আগে

স্বজনদের ভাষ্য, লাল চাঁদ যখন সাত মাস বয়সী, তখন বজ্রপাতে মারা যান তাঁর বাবা আইউব আলী। এরপর জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। তখন থেকেই লাল চাঁদ ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামের একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি ঘিরেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।

স্বজনদের দাবি, মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে লাল চাঁদের সঙ্গে এলাকার একটি পক্ষের বিরোধ তৈরি হয়। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। গত বুধবার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে লাল চাঁদকে আটক করে চাঁদার জন্য দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়। তাতেও রাজি না হওয়ায় তাঁকে পাথরের আঘাতে হত্যা করা হয় বলে দাবি স্বজনদের।
নিহত লাল চাঁদ স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরার কদমতলী এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে বসবাস করতেন।

আরও পড়ুনপুরান ঢাকায় লাল চাঁদ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে: আসিফ নজরুল৫ ঘণ্টা আগে

আজ শনিবার দুপুরে বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাল চাঁদের স্ত্রী লাকি বেগম হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না স্বজনেরাও।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা পরিবারটির খোঁজখবর নিতে যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত সোহাগ আমাদের দলীয় লোক। শোকাহত পরিবারটির পাশে আমরা আছি। আইনি ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’

লাল চাঁদের বাড়ির সামনে অপেক্ষমাণ স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ