Samakal:
2025-10-19@02:45:52 GMT

প্রতিবাদী গানে গণঅভ্যুত্থান

Published: 12th, July 2025 GMT

প্রতিবাদী গানে গণঅভ্যুত্থান

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের দেশভাবনা ও প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে নানা মাধ্যমে– গানে, স্লোগানে, ফেস্টুনে, গ্রাফিতিতে, কবিতায়। তবে আন্দোলনের সময় চোখে পড়ার মতো সংখ্যায় গান তৈরি হয়েছে, যার অধিকাংশই র‍্যাপ ধারার। শহীদদের রক্তে জারিত আন্দোলনের মাঠে শরীর কাঁপানো এই গানগুলো শুধু আবেগ নয়, ছিল শিকল ছেঁড়ার সুরও। অন্য মেলোডি ঘরানার গানও কম হয়নি।

ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে কিছু গান রীতিমতো উৎসাহ আর অনুপ্রেরণার জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। এর মধ্যে যেটি একাধিক লাইনে স্লোগানের রূপ নিয়েছে, তা হলো ‘শূন্য’ ব্যান্ডের *শোনো মহাজন*। এক দশক আগের এই গান যেন পুনর্জন্ম পেল এবারের বিপ্লবে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘শূন্য’র চতুর্থ অ্যালবাম ‘ভাগো’ থেকে নেওয়া গানটি এর আগেও নানা প্রতিবাদ-আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়েছে।

‘শূন্য’র দলপ্রধান ও ভোকাল ইমরুল করিম এমিল বলেন, ‘গানটি লিখেছেন শাহান কবন্ধ। তিনি যেমন অনুভব করে লিখেছিলেন, আমরাও পারফর্ম করার সময় সেই আবেগটাই পেয়েছি। এবার এই আন্দোলনে গানটি নতুনভাবে অর্থবহ হয়ে উঠেছে– এটি আমাদের গর্ব।’

গণঅভ্যুত্থানের অবরুদ্ধ সময়ে দ্রোহের সুরে গান বেঁধেছিলেন গায়িকা পারশা মাহজাবীন। তাঁর লেখা ও সুর করা গান ‘চলো ভুলে যাই’ আন্দোলনে আলোড়ন তোলে। পারশা বলেন, ‘এখনও অনেকে বলেন, গানটা শুনলে মন ভার হয়ে আসে, কান্না পায়।’ আন্দোলনের ভেতর মাত্র ১০ মিনিটে লেখা এই গান তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ‘তিন বছরের ক্যারিয়ারে এটিই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’, বলেন পারশা– ‘জনপ্রিয়তার কথা ভেবে গানটি লিখিনি। হয়তো সে কারণেই গানটি মানুষের মনে এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছে।’

রাজপথে যখন শিক্ষার্থীরা লড়ছিল, তখন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। সেই অবরুদ্ধ সময়কে র‍্যাপ গানে তুলে ধরেন নারায়ণগঞ্জের তরুণ শিল্পী সেজান। তাঁর লেখা ‘কথা ক’ গানটি ১৬ জুলাই প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সেজান সাধারণ মানুষের গলা টিপে ধরা কথাগুলোকে তুলে আনেন র‍্যাপে– ‘আমার ভাই-বইন মরে রাস্তায়, তর চেষ্টা কইরে? কথা ক?’ সেজান বলেন, ‘‘জেদ থেকেই ‘কথা ক’ গানটি লেখা। যে কোনো মানুষের দাবি থাকতেই পারে। সেটি নিয়ে যদি অত্যাচার করা হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা কোথায়। এমন অনেক প্রশ্ন মাথায় নিয়েই গানটি লিখেছি।’’

গণঅভ্যুত্থানের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল বাংলা র‍্যাপ গানের অভূতপূর্ব উত্থান। আন্দোলনের মধ্যে প্রকাশিত হয় অন্তত ৪০টির বেশি র‍্যাপ গান, যা অন্য কোনো ঘরানায় ঘটেনি। র‍্যাপ গানের শ্রোতা এবার ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনমুখী জনতার ভেতরেও।

আরেকটি বহুল আলোচিত র‍্যাপ গান ছিল ‘আওয়াজ উডা’, যা এক সময় স্লোগানে পরিণত হয়। গানটি লিখেছেন ও গেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আরেক তরুণ র‍্যাপার হান্নান হোসাইন। ১৭ জুলাই লেখা ও রেকর্ড করা গানটি ১৮ জুলাই ইউটিউবে প্রকাশের পরপরই ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকি আসে তাঁর বিরুদ্ধে। বাড়িতে পুলিশ যায়।

আত্মগোপনে থাকতে হয় হান্নানকে। এক আত্মীয়ের জানাজা থেকে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হয়ে ১২ দিন কারাগারে থাকতে হয় তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে হান্নান বলেন, ‘‘আন্দোলনে আমার ভাইবোনদের রাস্তায় মারা হচ্ছিল। আবু সাঈদের মতো অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সেই সময় আর চুপ থাকার অবস্থায় ছিলাম না। ভাবছিলাম আমার অবস্থান থেকে কিছু একটা করার। সেই চেষ্টা থেকেই ‘আওয়াজ উডা’। লেখা শুরু করার পর অটোম্যাটিক গানের কথাগুলো চলে আসছিল। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় লিখেছিলাম গানটি।’’

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান ছিলেন সরব। এবারের আন্দোলনে তিনি ‘ভয় বাংলায়’ শিরোনামে একটি গান এনেছেন। নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে অনি হাসান গেয়েছেন ‘আমরা বীর’। শহরতলী ব্যান্ডের ভোকাল সোহাগ গেয়েছেন ‘ও প্রধান’।

এ ছাড়া সোহেল আরমানের লেখা ও হাবীব ওয়াহিদ, আরফিন রুমি ও প্রদীপ কুমারের গাওয়া ‘হৃদয় আমার বাংলাদেশ’, ইথুন বাবুর লেখা ও মৌসুমীর গাওয়া ‘ দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গানগুলোও আন্দোলনে প্রচণ্ড আলোচিত হয়।

আন্দোলনের দিনগুলোতে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘এই শিকল পরা ছল’-এর এক নতুন সংস্করণে কণ্ঠ দিয়েছেন শেখ ইশতিয়াক, শাকিব চৌধুরী, রায়েফ আল হাসান রাফা, প্রবর রিপন ও জামশেদ চৌধুরী। ভিডিও চিত্রে শেখ ইশতিয়াক বলেন, ‘আমি ধিক্কার জানাই এই সমাজকে, যে সমাজে কোনো বাক্‌স্বাধীনতা নাই। কথা বলতে গেলে ছাত্রদের ওপর গুলি চলে– ধিক্কার জানাই।’

প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও এই আন্দোলন দ্রুতই রূপ নেয় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এক গণঅভ্যুত্থানে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবদমিত ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ ঘটে রাজপথে। নিপীড়ন যত বাড়ে, গণরোষ তত গাঢ় হয়। সর্বস্তরের মানুষ মুক্তির লড়াইয়ে রাস্তায় নামে।

এই গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতায় যে নতুন সাংস্কৃতিক সত্তা গড়ে উঠছে, তার গুরুত্বপূর্ণ বাহক হয়ে উঠেছে গান। গান এখানে শুধু আবেগ নয়, প্রতিরোধের ভাষা, শিকল ছেঁড়ার সুর। এই সময়ের গানগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ সাংস্কৃতিক বিনির্মাণেও রাখবে অনন্য ভূমিকা– বাক্‌স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার লড়াইয়ে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন জ ল ই গণহত য গণঅভ য ত থ ন প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ১ কোটি যুবকের কর্মসংস্থান করবে : সজল

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেছেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফার কি কি কার্যক্রমগুলো রয়েছে সেগুলো মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তা উপস্থাপন করবেন।

আমাদেরকে মানুষের মন জয় করতে হবে। তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যে একটি দফার রয়েছে যুবকদের জন্য। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে ১৮ মাসের মধ্যে ১ কোটি যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

‎শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল এগারোটায় শহরের কিল্লারপুলস্থ বিবি মরিয়মের সমাধি মাঠে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের উদ্যোগে যুব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।

‎তিনি বলেন, ৩১ দফায় নারীদের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ফ্যামিলি কার্ডেরও ব্যবস্থা করা হবে । প্রথমে ৫০ লক্ষ ফ্যামিলি কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের যারা মা বোনেরা আছেন ফ্যামিলি প্রধান তারাই এই ফ্যামিলি কার্ডটা পাবেন। আগামী দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে ৩১ দফা রয়েছে সেইগুলো মানুষের দ্বার প্রান্তে যুবদলের নেতাকর্মীদেরকে পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশে ১৯ দফার  মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিলেন। এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যে ৩১ দফা দিয়েছেন তা ভবিষ্যতে মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিবেন এবং তারেক রহমান দীর্ঘদিন এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে ইনশাআল্লাহ।

‎নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজলের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ক্রীড়ানুরাগী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর।

‎এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রিপন,মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর এলাহী সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান খলিল শ্যামল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ, ওয়াদুদ ভূঁইয়া সাগর, পারভেজ খান, মো. আরমান হোসেন, কামরুল ইসলাম রনি, মো. মিনহাজ মিঠু, আশিকুর রহমান অনি, জুয়েল রানা, কামরুল হাসান মাসুদ, এরশাদ আলী, ফয়েজ উল্লাহ সজল, আলী ইমরান শামীম, মো. তরিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম আপন, মো. শাহিন শরিফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুবায়ের আলম ঝলক, ফয়সাল আহমেদ, সাঈদ হাসান রিপন, আরিফ খান, কাউছার আহমেদ, এড. শাহিন খান, কাজী নাহিসুল ইসলাম সাদ্দাম, আলী আহসান সৌরভ, মো. বাদশা মিয়া, মাসুদ রানা, মাকসুদুর রহমান শাকিল, রুবেল সরদার, রিয়াজুল আলম ইমন, জুনায়েদ মোল্লা জনি, হাবিবুর রহমান মাসুদ, আব্দুল কাদির, জাহিদুল ইসলাম শুভ, মাহফুজুর রহমান ফয়সাল।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • না’গঞ্জ-৩ ও ৪ আসনের যে কোন একটিতে নির্বাচন করবো : অধ্যাপক মামুন মাহমুদ
  • ২১ নং ওয়ার্ডে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত
  • সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার কমিটি গঠন
  • আড়াইহাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি-যুবদলের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৬ জন হাসপাতালে
  • ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা ও লিফলেট বিতরণ 
  • বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ১ কোটি যুবকের কর্মসংস্থান করবে : সজল
  • কিছু দিন পর দেখা যাবে, গণঅভ্যুত্থানটাই নাই: সারজিস
  • কী আছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় 
  • ৫ম দফায় জুলাই যোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে: আলী রীয়াজ 
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান দুদুর