lশৈশবের প্রিয় মুহূর্ত?
তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। নিয়মিত স্কুলে যাই। তখনকার পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকমের। এখনকার শিক্ষা পদ্ধতি আবার অন্যরকমের। ড্রয়িং ক্লাসে আমাদের ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে গাছ, ফুল, পাখি, নদী-নালা, প্রাণীসহ বিভিন্ন ধরনের আঁকাআঁকি করে দিতেন শিক্ষক। আমরা সেসব দেখে দেখে নিজেরা আঁকতাম। স্কুলে একবার একটি তাজমহলের ছবি আঁকি। যেহেতু আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসতাম, তাই আগ্রহ থেকেই এটা আঁকি। তখন জাপানি গিটার কালার পাওয়া যেত, অন্য কোনো কালার পাওয়া যেত না। সেই তাজমহলের ছবি দেখে আমাকে পুরস্কৃত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমি যে কি আনন্দিত হই তা বলে বুঝাতে পারব না;
lযখন আপনি নবীন চিত্রশিল্পী
নবীন চিত্রশিল্পী হিসেবে বেশ স্মৃতি আছে। তখন শিল্পকলা একাডেমিতে, ঢাকা আর্ট কাউন্সিলে একটা গোল বিল্ডিং ছিল। সেখানে সব প্রদর্শনী হতো। ওখানে নবীন শিল্পী, ঢাকা বা পাকিস্তান থেকে ছবি আসত। সেখানে আমরা যেতাম, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতাম। তারপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আগে ছিল পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলের উদ্যোগে নবীন শিল্পীর প্রদর্শনী পরবর্তী পর্যায়ে শুরু করা হয়। আমরা সেখানে নবীন চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগ দিতে শুরু করলাম। তারপরই জাতীয় আর্ট এক্সিবিশন হলো। যার পরিচালক ছিলেন সুবীর চৌধুরী।
স্মরণীয় স্মৃতি
আমাদের সময় ডিগ্রি ছিল, অনার্স ছিল না। তখন আমি তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করি। ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার, ফোর্থ ইয়ার হোল ক্লাসে আমি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাই। সেটা আমার জীবনের বড় স্মৃতি একটা। যে স্মৃতির ফলে সামনে এগোতে আরও বেশি সাহস পাই।
আড্ডা-তর্কে সঙ্গী যারা
আর্ট কলেজের সহপাঠী বন্ধু ছিল শহীদ কবির, মঞ্জুরুল হাই, বিজয় সেন, খুশী কবির, সেতারা ইব্রাহীম, ফরিদা শওকত, শিরিন সুলতানা, সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদসহ আরও অনেকেই। আমরা বিভিন্ন আড্ডা দিতাম। নিজেদের চিন্তাধারার কথা, ভাববিনিময় নিজেদের ভেতর শেয়ার করতাম। ছবির দুটো ধারা আছে। একটি ক্রিয়েটিভ আর্ট, আরেকটি হলো ইলাস্ট্রেটিভ। আমরা সাধারণত ক্রিয়েটিভ আর্টের দিকে ঝুঁকতাম।
ভাবনাদর্শকে প্রভাবিত করেছেন যিনি
আমিনুল ইসলাম মূলত ভাবনাদর্শকে প্রভাবিত করেছে। তারপর আমার নিজস্ব স্টাইল ডেভেলপ করে গেছি। জল রংয়ে প্রভাব ছিল আনোয়ারুল হক, রফিকুন নবী ও মোস্তফা মনোয়ারের।
আপনার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী
১৯৮৭ সালে চারুকলার ইনস্টিটিউটের দুটো গ্যালারিতে প্রথম প্রদর্শনী করি।
আপনার প্রিয় চিত্রশিল্পী
গুরু হিসেবে ফলো করতাম দেশের বাইরে পাবলো পিকাসো, সেজান, ভ্যান গগ, রোথকো, হুসাইন। দেশের ভেতর এসএম সুলতান, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম। তারা অসাধারণ কাজ করেছেন। তাদের পেইন্টিং অনন্য। জয়নুল আবেদিন তো মাস্টার ড্রয়িং কাজ করেছেন। এবস্ট্রাক্টে যখন প্রবেশ করি, তখন মোহাম্মদ কিবরিয়ার কথা বলতে হয়। তিনি আমার মেইনলি গুরু বলতে পারেন। তাঁর কাজ আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করত। তিনি জাপান থেকে ফিরে আসাতেই এ ধরনের কাজ করতেন। বাংলাদেশে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংয়ে সুপারমাস্টার তিনি ছিলেন।
lএখন যা আঁকছেন
একজন চিত্রশিল্পীর মূল ড্রয়িং। একজন চিত্রশিল্পী যত ড্রয়িং করতে পারবেন, তিনি তত ভালো ছবি আঁকতে পারবেন। ভাঙচুর করতে পারবেন। ড্রয়িং করি রেগুলার। সেটাকে বেজ করে অন্য কিছু এঁকে থাকি। আমি ফিগারের লাইন ড্রয়িং করছি। সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। প্রত্যেক শিল্পীর ড্রয়িংটাকে নিয়েই কাজ করতে হবে। একজন চিত্রশিল্পীর ড্রয়িংকে অবহেলা করে চলা উচিত না। আমি এখন ড্রয়িং নিয়ে কাজ করছি। ড্রয়িংকে বেজ করে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংসহ অন্যকিছু করছি।
lপ্রিয় উদ্ধৃতি
‘সবার উপরে মানুষ এবং প্রকৃতি’
গ্রন্থনা: ফরিদুল ইসলাম নির্জন
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।