সুনামগঞ্জে কৃষকের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা দুঃখজনক, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মন্তব্য
Published: 9th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জে গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকের ঐতিহ্য তুলে ধরতে নির্মাণ করা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বক্তা। আজ রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তাঁরা এ মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সকালে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এতে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্তে চোরাচালান, জেলার হাটবাজার, খেয়াঘাট, নদীতে চাঁদাবাজি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে কৃষকের ভাস্কর্যটি ভাঙার প্রসঙ্গও ওঠে।
এ প্রসঙ্গে সভায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। এটি (কৃষকের ভাস্কর্য) নিয়ে কারও কোনো আপত্তি, মতামত থাকলে আমরা সেখানে আরও সুন্দর কিছু করতে পারতাম।’ এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘শুধু কৃষকের ভাস্কর্য নয়, অন্য কোনো বিষয়েও যদি কারও কোনো মতভিন্নতা থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটি নিয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এভাবে ভাঙচুর করলে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বার্তা যায়, আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিত।’
সভায় অন্যদের মধ্যে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল হক, সুনামগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মল্লিক মইন উদ্দিন আহমদ, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূরুর রব চৌধুরী, সুনামগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন সৈয়দ মোনাওয়ার আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূরুল মোমেন, দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক পত্রিকার সম্পাদক শেরগুল আহমদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে ভেঙে ফেলা হয়েছে কৃষকের ভাস্কর্য১৭ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন পয়েন্টে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিল উপজেলা প্রশাসন। ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এটি উন্মোচন করা হয়। তিন রাস্তার মোড়ে একজন কৃষক হাতে কাস্তে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কৃষাণ চত্বর’। চলতি পথে মানুষ সেখানে বিশ্রাম নিতেন, সেই ভাস্কর্য দেখতেন। শুক্রবার রাতে একদল লোক ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেকসহ হাওর এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে ভাস্কর্যটি চোখে পড়ত। এই কৃষাণ চত্বরের পর সামনে এগোলেই পলাশ বাজারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘হাওর বৃত্ত’, এরপর কারেন্টের বাজার মোড়ে হাওরের বিশাল বোয়াল মাছের আদলে নির্মিত একটি ভাস্কর্য, এই স্থানের নাম দেওয়া হয় ‘বোয়াল চত্বর’। উপজেলা প্রশাসন এসব নির্মাণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরে থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন। ফেসবুকে ওই ভাস্কর্য ভাঙার একটি ভিডিও দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক হাতুড়ি, শাবল দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছেন। এ সময় পেছন থেকে স্লোগান দিতে বলা হয়। এরপর ‘শেখ হাসিনার আস্তানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘শাহজালালের তলোয়ার গর্জে ওঠুক আরেকবার’, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ প্রভৃতি স্লোগান দেন সেখানে থাকা লোকজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র কম ট র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।