বাংলা একাডেমিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০২২ সালের একটি নিয়োগে বাংলা একাডেমিতে অনিয়ম ও জালিয়াতিরে মাধ্যমে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ ছাড়াই গোপনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৪৫ জন আগেই বাংলা একাডেমিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। আর এই ৪৫ জন লিখিত পরীক্ষায় নম্বর কম পেলেও বড় অংকের বিনিময়ে তাদের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বেশি দিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলা একাডেমিতে অভিযান চালিয়ে নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে জনবল নিয়োগে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শূন্য পদের (১৮০টি) বিপরীতে আবেদন আহ্বান করা হলে ৫০ হাজারেরও অধিক চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ৪ হাজার প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয় কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় মাত্র ৫০০ জনকে ডাকা হয়। অধিকন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলেন টিমের কাছে পরিলক্ষিত হয়।

আরো পড়ুন:

কবি গালিব রিমান্ডে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি চান বিশিষ্টজনেরা

শনিবার বইমেলার সময় পরিবর্তন

এছাড়া যোগদানকৃত ১৩৩ জনের মধ্যে ৪৫ জনি ইতোপূর্বে বাংলা একাডেমিতে চু্ক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত-এরকম তথ্যও পাওয়া যায়।

অভিযানে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত অংশে কম নম্বর পেলেও ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে এবং তারা চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।

এছাড়া, চূড়ান্ত ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে গোপনে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়-যা স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণপূর্বক টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

এর আগে অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলা একাডেমিতে ১৭৫ জনের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠে।

অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলা একাডেমির শূন্যপদ পূরণের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শূন্য পদের জন্য (১৮০টি) যথাক্রমে ১০০, ২০০, ৪০০ ও ৬০০ টাকা আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে বলা হয়। ৫০ হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন।

প্রায় দুই কোটি টাকা বাংলা একাডেমির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, পরীক্ষা কেন্দ্র ভাড়া, পরীক্ষকদের সম্মানি প্রদান তথা আনুষঙ্গিক ব্যয়ের পরও অর্ধকোটি টাকা থেকে যায়। মহাপরিচালক ও নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা নিজেদের পারিশ্রমিক হিসেবে তা ভাগাভাগি করে নেন।

এতে বলা হয়, চার হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ডাকা হয় মাত্র ৫০০ জনকে। তাদের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন চাকরিতে যোগ দেন। বাকিরা চাহিদা মতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় যোগ দিতে পারেননি। যোগদানকারী ১৩৩ জনের মধ্যে বাংলা একাডেমিতে ইতোপূর্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ৮৪ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হচ্ছেন বাংলা একাডেমিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোষ্য (১৫ জন), কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আত্মীয় যেমন-স্ত্রী, ভাই, বোন, ভাগ্নে, ভাগ্নি, ভাতিজা, ভাতিজি (৩০ জন) নিয়োগ দাতা কমিটির কর্মকর্তা ও কার্যনিবাহী পরিষদের সদস্যদের সুপারিশে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩৪ জন। বয়স সীমা লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হয় ৪২ জনকে। যেখানে বাংলা একাডেমির নিয়োগবিধি এবং প্রবিধানমালার শর্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয় বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়োগের জন্য দাম ওঠে। অন্য প্রার্থীদের জন্য বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। আর্থিক সুবিধা, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলা একাডেমির নিয়োগবিধি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং প্রবিধানমালার শর্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে যাদের নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে তারা হলেন-সাবেক মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, ডা.

খোন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম (তৎকালীন পরিচালক, প্রশাসন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ, ড. মো. হাসান কবীর (সিনিয়র পরিচালক ও সচিবের অবর্তমানে চলতি দায়িত্ব পালনকারী), মহাপরিচালকের পিএ আবুল কালাম আজাদ এবং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

এছাড়া সাবেক পিএ বর্তমানে সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ তার ভাগ্নে রফিকুল ইসলামকে সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সময় ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরি দিতে সমর্থ হন। এবার তিনি তার ছেলে রকিবুল ইসলাম এবং তার ভাতিজা ইব্রাহিম হোসেনকে তৃতীয় শ্রেণি পদে চাকরি দিতে সমর্থ হন এবং ঊর্ধ্বতনদের ইচ্ছা অনুযায়ী অবৈধ নিয়োগে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা দৈনিক মজুরিভিত্তিক জনবল নিয়োগের দীর্ঘকাল ধরে বাংলা একাডেমিতে একটি কু-প্রথা চালু আছে। রাজনৈতিক প্রভাব, কর্মকর্তাদের খেয়ালখুশি এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এভাবে লোক নিয়োগ করা হয়। প্রথমে চার মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর তাদের বারবার সময়সীমা বাড়ানো হয়।

এভাবে দেখা যায় কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী টানা ১০ বছর পর্যন্ত বাংলা একাডেমিতে চাকরি করে আসছেন। তাদের বেতন দেওয়া হয় একুশে বইমেলার স্টল ভাড়া আয়, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বই বিক্রির আয়, প্রেস থেকে আয়, ব্যাংক ভাড়া, ক্যান্টিন ভাড়া, এফডিআর, মিলনায়তন ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ভাড়ার আয় থেকে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম এক ড ম র এক ড ম ত পর ক ষ য় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম

আগামী প্রজন্ম রোগমুক্ত রাখতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেলপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ড্রামে খোলা তেল বাজারজাত করা একটি বড় বাধা। একই সঙ্গে তেলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ‘সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই কর্মশালা আয়োজন করে। কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন-এ এবং দু’জন শিশু ভিটামিন-ডির ঘাটতিতে ভুগছে। যদিও ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ করতে ২০১৩ সালে আইন করেছে সরকার। আইন অনুযায়ী, ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ।

কর্মশালায় বলা হয়, আইসিডিডিআরবি,র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে ভিটামিন-এ নেই, আর ৩৪ শতাংশে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রা। ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন-এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালট্যান্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ প্রমুখ।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়, যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ড্রামে রাখা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কা থাকে। পুরোনো ড্রামগুলোতে লেবেল না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জুলাই ২০২২-এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২-এর পর থেকে খোলা পাম অয়েল বাজারজাত বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা জানান, ভিটামিন-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন-ডি-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়