মৌখিকভাবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে নিজের পারিশ্রমিক বকেয়ার বিষয়টি অনেক আগেই জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদি। চিটাগং কিংসের মেন্টর হিসেবে এবার দায়িত্ব পালন করেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার।

কিন্তু পারিশ্রমিক না পেয়ে ক্ষুব্ধ আফ্রিদি এবার ই-মেইল করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে অভিযোগ জানিয়েছে। সঙ্গে এ-ও জানিয়েছে, চিটাগং কিংস তার সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে। ফারুক আহমেদকে অ‌্যাড্রেস করে আফ্রিদির পাঠানো চিঠি হাতে এসেছে রাইজিংবিডির।

যেখানে আফ্রিদি বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা, বিপিএলের প্রতি তার নিবেদন এবং পারিশ্রমিক জটিলতার আদ‌্যোপান্ত জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

আগামী বিপিএল নিয়ে কাজ শুরু, ‘সুখবর’ দিলেন ফারুক

চার্টার্ড বিমানে শিরোপা নিয়ে বরিশালে তামিমরা

আফ্রিদি ই-মেইলে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশকে হৃদয়ের খুব কাছে রাখার একজন হিসেবে, আমি বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে সর্বদা যে ভালোবাসা ও উষ্ণতা পেয়েছি তার জন্য আমার গভীর স্নেহ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।’’

‘‘বাংলাদেশে হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও, বাংলাদেশি ভক্তদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমার জন্য অপরিসীম আনন্দ এবং অনুপ্রেরণার উৎস। আমি সত্যিই বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি মনে করি।’’

‘‘তবে, বিপিএলে এগারতম মৌসুমে আমার অংশগ্রহণ সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি এই লিখাটা লিখছি। চিটাগাং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং মেন্টর হিসেবে নিযুক্ত হতে পেরে আমি সম্মানিতবোধ করছি এবং আমি তাদের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলাম। চুক্তি অনুসারে, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে আমাকে আমার পারিশ্রমিকের ৫০% (মোট ১০০,০০০ মার্কিন ডলার) দেওয়ার কথা ছিল, বাকি টাকা টুর্নামেন্ট চলাকালীন দিতে হবে।’’

‘‘কিন্তু চিটাগং কিংস ম‌্যানেজমেন্ট অর্থপ্রদানের শর্তাবলি মেনে চলতে ব‌্যর্থ হয়েছে। ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের পরিবর্তে মাত্র ১৯ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে, যা আমাদের চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তবুও, আমি সৎ বিশ্বাসে আমার দায়িত্ব পালন করে চলেছি।’’

‘‘টুর্নামেন্ট চলাকালীন আমি এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে পাকিস্তান ফিরে আসি এবং আমাকে বলা হয়েছিল ১৯ জানুয়ারির ভেতরে আবার ঢাকায় ফিরে যেতে। টিম ম‌্যানেজমেন্ট নিশ্চয়তা দিয়েছিল তারা আমার রিটার্ন টিকিটের ব‌্যবস্থা করে দেবে। তবে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, টিকিটটি কখনও দেওয়া হয়নি, এবং টুর্নামেন্টের বাকি সময় আমি দলে ফিরে যেতে পারিনি। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ছিল, বিশেষ করে এত মর্যাদাপূর্ণ লিগের সাথে যুক্ত একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে।’’

এদিকে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরীর দাবি, আফ্রিদির সঙ্গে ‘ঝামেলা’ হওয়ার কারণে তার পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতার তৈরি হয়েছিল। তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার কারণও খুঁজে পাননি তিনি। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেছেন, ‘‘ওর (আফ্রিদির) সঙ্গে দুই সপ্তাহ আগেও কথা হয়েছে। যোগাযোগ হচ্ছে না এটা ভুল। হ‌্যাঁ, তার পারিশ্রমিক পুরোটা এখনও পায়নি। এতো তাড়ার কিছু নেই। সময়মতোই সে তার পারিশ্রমিক পেয়ে যাবে। ২১ হাজার ডলারের মতো দেওয়া হয়েছে। উনি তো আর ক্রিকেটার নন যে এতো তাড়া দেখাতে হবে।’’

সামির কাদের এ-ও জানিয়েছেন, আফ্রিদিকে পুরো পারিশ্রমিক না দেওয়ার বিষয়টি তিনি ফারুক আহমেদকে মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছেন।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ