বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর
Published: 3rd, March 2025 GMT
তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা আস্থাশীল।
দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।
জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।
শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র র বড় চ য ল ঞ জ শ মত মত ল নদ ন বল ছ ন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল