জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, সুদানের গৃহযুদ্ধের সময় সশস্ত্র পুরুষরা ছোট শিশুদেরও ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করছে। এক বছর বয়সী শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রায় দুই বছরের সংঘাতের সময় যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে দেশটিতে। 

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সুদানের ছোট শিশুদের ওপরও ধর্ষণ চালানোর বিষয়টি ইউনিসেফ প্রতিবেদনে প্রথম জানিয়েছে।

ইউনিসেফের মতে, সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়, ভুক্তভোগীরা এ ধরনের ধরনের অপরাধের সম্পর্কে অভিযোগ করতে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য চাইতে ‘বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।’ 

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষ নিল যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে আসছেন মার্চের মাঝামাঝি

ইউনিসেফ বলেছে, যদিও ২০২৪ সালের শুরু থেকে শিশুদের বিরুদ্ধে ২২১টি ধর্ষণের ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে, তবে প্রকৃত সংখ্যাটি সম্ভবত আরো অনেক বেশি।

সুদান সামাজিকভাবে রক্ষণশীল একটি দেশ, যেখানে বিশাল সামাজিক কলঙ্কের কারণে ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবার ধর্ষণ সম্পর্কে কথা বলতে চায় না, আবার রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে প্রতিশোধের ভয়।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনটি দেশটির গৃহযুদ্ধে শিশুদের ওপর নির্যাতনের একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। ইউনিসেফ এ ঘটনার জন্য কে দায়ী তা প্রতিবেদনে জানায়নি। 

তবে জাতিসংঘের অন্যান্য তদন্তে বেশিরভাগ ধর্ষণের জন্য আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে দায়ী করা হয়েছে। তারা বলেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক লোকদের আতঙ্কিত করতে এবং তাদের বিরোধিতা দমন করতে যৌন সহিংসতা ব্যবহার করার একটি ধরন ব্যবহার করেছে।

আরএসএফ তাদের সাবেক মিত্র সুদানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই করছে। তবে তারা কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ চান্দে ওথমান গত বছরের অক্টোবরে তাদের পূর্ববর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় বলেছিলেন, “সুদানে আমরা যে মাত্রার যৌন সহিংসতা নথিভুক্ত করেছি তা বিস্ময়কর।”

সুদানের জন্য জাতিসংঘের মানবিক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত তহবিল পায়নি। মার্কিন সাহায্যের সাম্প্রতিক কর্তন ভুক্তভোগীদের সাহায্য করার কর্মসূচিগুলো আরো কমিয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা

ওমনিয়া (আসল নাম নয়) নামে প্রাপ্তবয়স্ক এক নারী বলেছেন, তাকে অন্য আরো অনেক মহিলা এবং মেয়েদের সঙ্গে সশস্ত্র ব্যক্তিরা একটি ঘরে আটকে রেখেছিল। ওমনিয়া বলেন, “রাত নয়টার পর কেউ একজন দরজা খুলে চাবুক হাতে নিয়ে একজন মেয়েকে বেছে নেয় এবং অন্য ঘরে নিয়ে যায়। আমি ছোট্ট মেয়েটির কান্না এবং চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা তাকে ধর্ষণ করছিল।”

ওমনিয়া বলেন, ‘প্রতিবারই তারা তাকে ধর্ষণ করত, এই মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরে আসত। সে এখনও একটি ছোট শিশু। রাতে নিয়ে গেলে কেবল ভোরেই মেয়েটির মুক্তি মিলত। সবাই প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় ফিরে আসত। তাদের প্রত্যেকেই কাঁদে এবং অসংলগ্নভাবে কথা বলে। সেখানে ১৯ দিন আমি কাটিয়েছি। আমি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম যে আমার জীবন শেষ করে ফেলতে চেয়েছিলাম।’

যুদ্ধে ভেঙে পড়া একটি জাতি হিসেবে, সুদান পৃথিবীর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং স্থানগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে পরিষেবা এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রবেশাধিকার পাওয়া কষ্টকর। যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুদের আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানে প্রতি চারজন স্কুল-বয়সী মেয়ের মধ্যে তিনজন স্কুলে যেতে পারে না।

ট্রাম্প সরকার গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য বন্ধ করে দিচ্ছে

এই অপরাধের ভয়াবহ পরিণতি আরো খারাপ হচ্ছে। কারণ ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য খুব কম জায়গা রয়েছে। অনেক চিকিৎসা সুবিধা যুদ্ধরত পক্ষগুলো ধ্বংস, লুটপাট বা দখল করেছে। সাম্প্রতিক মার্কিন সাহায্য হ্রাস শিশুদের সুরক্ষার জন্য উপলব্ধ সীমিত পরিষেবাগুলোকেও বিপন্ন করে তুলতে পারে।

ইউনিসেফ স্থানীয় কর্মীদের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিশুদের জন্য নিরাপদ স্থান প্রদান করছে, যারা তাদের সম্প্রদায়ের সংকট মোকাবেলা করার জন্য জরুরি প্রতিক্রিয়া কক্ষ নামে পরিচিত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।

কর্মীরা মার্কিন সাহায্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল এবং তাদের পর্যবেক্ষণকারী একটি সুদানি সমন্বয়কারী কমিটির মতে, বেশিরভাগই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

নারী অধিকার রক্ষায় নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থার মতে, যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদানে নারীদের নেতৃত্বে স্থানীয় সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা জাতিসংঘের সুদান মানবিক মোট তহবিলের ২ শতাংশেরও কম পায়।

নারী পরিচালিত এমনই একটি স্থানীয় সংস্থা ‘শি লিডস’। মার্কিন তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে বাধ্য হয়েছে।

সুদানের মানবাধিকার কর্মী সুলাইমা এলখলিফা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় একটি সরকারি ইউনিট পরিচালনা করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগটি সংগঠিত করতে সহায়তা করেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “সশস্ত্র পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত নারীদের হতাশ হওয়ার বিলাসিতা নেই এখানে।” তিনি আরো জানান, “যুদ্ধের চাহিদা- খাবার খুঁজে বের করা, পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন, মানসিক আঘাত মোকাবেলা করার জন্যও কোনো জায়গা নেই।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন স ফ সশস ত র য ন সহ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে পেশাদার সাংবাদিকদের নৌভ্রমণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  

বন্দর উপজেলায় কর্মরত মাঠপর্যায়ের পেশাদার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে একদিনব্যাপী নৌভ্রমণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে কলাগাছিয়া ট্রলার ঘাট থেকে একটি ট্রলারে করে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি দল মেঘনা নদীতে আনন্দ নৌভ্রমণে অংশ নেন। নদীভ্রমণ শেষে তারা হাজরাদী এলাকার একটি বিনোদন পার্কে এসে বিশ্রাম নেন এবং পরে সেখানে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হন।

আলোচনা সভায় পেশাগত উন্নয়ন, সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, বন্দরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাংবাদিকতা চর্চা অনেক সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। তাই পেশাদারিত্ব বজায় রেখে একতাবদ্ধভাবে কাজ করাই সাংবাদিকদের জন্য আজ সবচেয়ে জরুরি।

বন্দরে প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সাধারন সম্পাদক  ও  সিনিয়র সাংবাদিক জি এম সুমনের আয়োজনে নৌভ্রমন ও আলোচনায় অংশ নেন: দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী সাব্বির আহমেদ সেন্টু, বাংলা টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার কাজী সাঈদ, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার বন্দর প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক নাসির উদ্দিন,  বন্দর প্রেসক্লাবের  প্রতিষ্ঠাকালীন সাবেক  দপ্তর সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক  এস. এম. আবদুল্লাহ, বন্দর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিনিয়র ফটো সাংবাদিক আমির হোসেন, বন্দর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সাধারন সম্পাদক ইমরান মৃধা, বন্দর প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান রিপন, সংবাদ চর্চার বন্দর প্রতিনিধি শেখ আরিফ, দৈনিক নীরবাংলার স্টাফ রিপোর্টার বিল্লাল হোসেন, দৈনিক যায়যায়দিনের বন্দর প্রতিনিধি দ্বীন ইসলাম, অগ্রবানী প্রতিদিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শাহরিয়া প্রধান (ইমন), মুক্ত খবর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সোহেল প্রধান, ডান্ডিবার্তা পত্রিকার বন্দর প্রতিনিধি মেহেদী হাসান মুন্না, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, প্রমুখ।

সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা ভবিষ্যতে এ ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

দিনব্যাপী এ আয়োজনটি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে বন্ধন, যোগাযোগ এবং পেশাগত শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ