পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিল্লিতে বাঙালি উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। ভারতজুড়ে ‘বাঙালিবিরোধী’ এক ‘অপচেষ্টা’ চলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই উদ্যোগ নিলেন।

দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে সম্প্রতি চলা উচ্ছেদ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান এমন জায়গায় হচ্ছে, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে উচ্ছেদ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ। গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই অভিযোগ করেছেন।

মমতা বলেন, ‘নয়াদিল্লির বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ংকর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যাঁরা দিল্লিকে গড়ে তোলার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।’

মমতার এই বক্তব্যের পরেই আদালতে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেটি তিনি করেননি। এই বিষয়ে ওডিশা রাজ্য থেকে বাঙালি উচ্ছেদ নিয়ে আরেকটি মামলাও হাইকোর্টে চলছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতিতে বলেন, শোনা যাচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত সরকারের নির্দেশে তাঁদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ও বিদ্যুতের মিটার তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা নিজেদের অর্থে যে নিজস্ব পানির ট্যাংকের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা দিল্লি পুলিশ এবং আরএএফের সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে। অথচ এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরে দিল্লি পুলিশের অনাকাঙ্ক্ষিত এক হস্তক্ষেপের পর আদালতে এই মামলা বিচারাধীন। আশ্রয়, পানি ও বিদ্যুৎ—এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব?’

মমতার এই বিবৃতির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিবকেও এই বিষয়ে আদালতকে পৃথকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন মারফত জানা যাচ্ছে, এই শ্রমিকদের একাংশকে ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি আট বছরের শিশু রয়েছে বলে আবেদনকারীদের আইনজীবী হাইকোর্টকে জানান। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

বাঙালিবিরোধী অপচেষ্টা শুরু হয়েছে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতিতে আরও বলেছেন, সারা দেশে বাঙালিবিরোধী একধরনের অভিযান শুরু হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, রাজ্য থেকে বিতাড়ন করা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে মমতা বিবৃতিতে লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দেড় কোটির বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না। ওই সব রাজ্যে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা নির্বিশেষে তাঁরা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।

মমতা বিবৃতিতে আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার সেই বাংলাবিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওডিশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের ওপর নিপীড়নের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।

পশ্চিমবঙ্গে আট মাস পর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে বিষয়টি এমনভাবে সামনে চলে এসেছে যে মনে করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ইস্যু হতে চলেছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে বহিষ্কার, গ্রেপ্তার ও হেনস্তার বিষয়টি। পশ্চিমবঙ্গ যে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে, সেটাও তাঁর বিবৃতিতে পরিষ্কার করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই দেশেই বাংলার মানুষ যদি অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলা সব নির্যাতিত কণ্ঠের পাশে দাঁড়াবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র আওয়াজ তুলব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালিবিরোধী যড়যন্ত্র, দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিল্লিতে বাঙালি উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। ভারতজুড়ে ‘বাঙালিবিরোধী’ এক ‘অপচেষ্টা’ চলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই উদ্যোগ নিলেন।

দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে সম্প্রতি চলা উচ্ছেদ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান এমন জায়গায় হচ্ছে, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে উচ্ছেদ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ। গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই অভিযোগ করেছেন।

মমতা বলেন, ‘নয়াদিল্লির বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ংকর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যাঁরা দিল্লিকে গড়ে তোলার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।’

মমতার এই বক্তব্যের পরেই আদালতে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেটি তিনি করেননি। এই বিষয়ে ওডিশা রাজ্য থেকে বাঙালি উচ্ছেদ নিয়ে আরেকটি মামলাও হাইকোর্টে চলছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতিতে বলেন, শোনা যাচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত সরকারের নির্দেশে তাঁদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ও বিদ্যুতের মিটার তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা নিজেদের অর্থে যে নিজস্ব পানির ট্যাংকের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা দিল্লি পুলিশ এবং আরএএফের সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে। অথচ এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরে দিল্লি পুলিশের অনাকাঙ্ক্ষিত এক হস্তক্ষেপের পর আদালতে এই মামলা বিচারাধীন। আশ্রয়, পানি ও বিদ্যুৎ—এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব?’

মমতার এই বিবৃতির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিবকেও এই বিষয়ে আদালতকে পৃথকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন মারফত জানা যাচ্ছে, এই শ্রমিকদের একাংশকে ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি আট বছরের শিশু রয়েছে বলে আবেদনকারীদের আইনজীবী হাইকোর্টকে জানান। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

বাঙালিবিরোধী অপচেষ্টা শুরু হয়েছে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতিতে আরও বলেছেন, সারা দেশে বাঙালিবিরোধী একধরনের অভিযান শুরু হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, রাজ্য থেকে বিতাড়ন করা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে মমতা বিবৃতিতে লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দেড় কোটির বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না। ওই সব রাজ্যে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা নির্বিশেষে তাঁরা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।

মমতা বিবৃতিতে আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার সেই বাংলাবিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওডিশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের ওপর নিপীড়নের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।

পশ্চিমবঙ্গে আট মাস পর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে বিষয়টি এমনভাবে সামনে চলে এসেছে যে মনে করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ইস্যু হতে চলেছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে বহিষ্কার, গ্রেপ্তার ও হেনস্তার বিষয়টি। পশ্চিমবঙ্গ যে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে, সেটাও তাঁর বিবৃতিতে পরিষ্কার করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই দেশেই বাংলার মানুষ যদি অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলা সব নির্যাতিত কণ্ঠের পাশে দাঁড়াবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র আওয়াজ তুলব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ